সমস্ত রকম শারীরবৃত্তীয় সাইকেল ঘুম - জাগরণ বা স্লিপ – ওয়েক সাইকেল-এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। এই চক্রে যত বিঘ্ন ঘটবে, তত শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা। রাতে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকলার মেরামতি হলে আমরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করি। পরদিন আমরা যাতে সতর্ক থাকতে পারি সেজন্য আগের রাতে মস্তিস্কের সচেতন কাজকর্ম বন্ধ থাকে। এই সময় কটিকোস্টেরয়েড লেভেল ও শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও পরদিন তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ কারণেই মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের ঠান্ডা লাগে।
দিন অথবা রাত বিবেচনা করে আমাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা ও হর্মোন নিঃসরণ পরিবর্তিত হয়। মস্তিস্কের গভীরে প্রোথিত ছোট্ট পেনিয়াল গ্রন্থি নিঃসৃত একমাত্র হর্মোন মেলাটোনিনের মাত্রা রাতে বাড়ে এবং দিনের বেলা কমে যায়। মনের গতির ওপর প্রভাব বিস্তারকারী হর্মোন সেরোটোনিন থেকে উৎপন্ন হওয়া মেলাটোনিন আমাদের দিন-রাতের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। আঁধার নামার সঙ্গে মেলাটোনিন নিঃসৃত হতে থাকে বলে আমাদের ঘুম পায়। অপর্যাপ্ত ঘুমে হর্মোন ভারসাম্য হলে ঋতুচক্র অনিয়মিত হয় এবং গর্ভসঞ্চার কঠিন হয়ে পড়ে।
এটা বাস্তব যে, শরীরে তরতাজা ভাব আনতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। অনেক দম্পতিকে আমি জানি যাঁদের খুব স্ট্যামিনা বা দম আছে বলে মনে হয় না। আসলে আজকের ব্যস্ত জীবনে বহু কর্মরত দম্পতি সারাদিনের খাটুনির পর রাতে এত ক্লান্ত থাকেন যে, মিলনের সময় পর্যন্ত পান না। তাছাড়া এমন অনেকেই আছেন যারা বেশি রাতে শুতে যান। দেখা গেছে, শেষ পর্যন্ত এঁদের সমস্ত জীবনীশক্তি তলানিতে এসে ঠেকে। মিলিত হওয়ার কথা ভুলে গিয়ে এঁরা দ্রুত দু’চোখের পাতা এক করে দেন। অপর্যাপ্ত ঘুম বা এই ধরনের বদভ্যাসের কারণে অনেক দম্পতি গর্ভসঞ্চারের মূল্যবান সুযোগ হারান।
আপনার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটলে এবং মিলনে ক্লান্তি লাগলে, ভাল করে খেয়াল করে দেখুন আপনার পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কিনা। সেক্ষেত্রে রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ার উপায় খুঁজতে হবে। তবে প্রথমেই অনেক আগে থেকে যেমন, এক ঘন্টা আগে, ঘুমোতে যাবেন না। শরীর – ঘড়ির পক্ষে এক হঠাৎ পরিবর্তম মেনে নেওয়াটা সমস্যার। বরং ঘুমোতে যাওয়ার সময়টা ১ম সপ্তাহে পনেরো মিনিট, ২য় সপ্তাহে আরও ১৫ মিনিট করে এগিয়ে নিন। যতক্ষন না পর্যন্ত শোওয়ার উপযুক্ত সময় খুঁজে না পান ততক্ষন এমন চলতে থাকুক। আর একটি কথা, অতিরিক্ত পরিশ্রমে কাতর হয়ে পড়লে চলবে না এবং চাইলেই যাতে মিলিত হতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখুন।
এবং রাতে ভাল ঘুমের উপযোগী বেশ কয়েকটি উপায় আছে –
১। অনেক রাত অবধি কাজ করবেন না। এতে মনের দরজা বন্ধ করতে মস্তিষ্কের অনেক বেশি সময় লাগে। তাই ঘুমোতে যাওয়ার সময়েও উদ্বেগ পিছু ছাড়ে না। রাত জেগে টিভি দেখার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। টিভি না দেখে বরং বই পড়া অভ্যাস করুন।
২। শুতে যাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খান। রাতে কম খেলে পরিপাক ও ঘুম ভাল হয়। তা ছাড়া রাতে মদ, কফি বা অরেঞ্জ জুসের মতো অতিরিক্ত ভিটামিন সি যুক্ত পানীয় না খাওয়াই ভাল। উদ্দীপক বলে এরা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। সম্ভব হলে ভেষজ চা পান করুন।
৩। সম্ভব হলে মহিলারা হালকা আলো ভরা স্নান ঘরে ঈশদুষ্ণ জলে স্নান করবেন বা খুব ভাল করে হাত, পা, মুখ, শরীর ধুয়ে নেবেন। অন্ডকোষ তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণুর ক্ষতি করে বলে পুরুষদের ক্ষেত্রে এরকম জলে নিয়মিত স্নান না করাই ভাল।
৪। প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে শুতে যান ও সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠুন।
৫। শোওয়ার ঘর অন্ধকার ও নিশ্চুপ থাকুক। ঘুম না এলে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ না করে শরীরের সমস্ত পেশি শিথিল করার চেষ্টা করুন। তাতেও ঘুম না এলে কোনও পানীয় খান। যেমন গরম দুধ, গ্রিন টি। এরা আপনাকে রিলাক্স করবে। বইও পড়ুন। ঘুম আসবে।
আমাদের জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্য ও গর্ভ-সঞ্চারের সঙ্গে ঘুম সরাসরি জড়িত। রাতে গড়ে ৮ ঘন্টা ঘুমোনোর প্রয়োজন থাকলেও অনেকের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। দেখা গেছে ৭০ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত ঘুমোন না।
ঘুমের সময় শরীরের প্রায় সমস্ত অংশ বিশ্রাম নিলেও মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ অনবরত সংকেত পাঠাতে থাকে, তা ই ই জি পরীক্ষায় শনাক্ত করা যায়। ঘুমের পাঁচটি পর্যায়ে মস্তিষ্কের কাজকর্ম বিভিন্ন তরঙ্গের আকারে ধরা পড়ে। এরা দীর্ঘ পর্যায়ে রেম বা আর ই এম এবং চারটি গাঢ ঘুমের নন-রেম বা নন-আর ই এম পর্যায়ে নিয়ে গঠিত। রেম পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখলেও নন রেম পর্যায়ে স্বপ্ন দেখে না। যখন মানুষের গাঢ ঘুম হয় তখন তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ কমে যায়। জাগ্রত অবস্থা থেকে ঘুমের জগতে প্রবেশ করতে হয় নন-রেম পর্যায় দিয়ে। পরে আসে রেম পর্যায়। এই পর্যায়ের ঘুমে চোখের পাতার পর্যাবৃত্ত বিক্ষোভ, পেশির শৈথিল্য, শ্বাস-প্রশ্বাস, শরীরের তাপমাত্রা নন-রেম এর ঘুমের চেয়ে আলাদা হয়।
যোগাযোগ: ৯৮৩০৬৬৬৬০৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy