Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্ট্রেস না কমালে গর্ভসঞ্চার অসম্ভব

দম্পতিরাও মানসিক ভাবে ভোগেন। বলছেন ডা. গৌতম খাস্তগির যোগাযোগ-৯৮৩০৬৬৬৬০৬গর্ভধারণের ওপরে আপনার নিজস্ব জীবনযাপনার অবশ্যই একটা প্রভাব রয়েছে। মদ, সিগারেট, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, এক্সারসাইজ (করা বা না করা) ও কাজ সন্তানধারণের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। আপনার জীবনের কোনও ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না তা মূল্যায়ন করতে এই পর্ব সাহায্য করবে।

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

গর্ভধারণের ওপরে আপনার নিজস্ব জীবনযাপনার অবশ্যই একটা প্রভাব রয়েছে। মদ, সিগারেট, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, এক্সারসাইজ (করা বা না করা) ও কাজ সন্তানধারণের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। আপনার জীবনের কোনও ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না তা মূল্যায়ন করতে এই পর্ব সাহায্য করবে। তবে পরিবর্তনের প্রয়োজন বোঝার সবচেয়ে ভাল উপায় হল একেবারে এক সপ্তাহ ধরে জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আলোকপাত করা।

জীবনের বিশেষ কিছু দিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মনে চাপ পড়ে। কাজের জগৎ ঠিকঠাক থাকলে কিংবা স্বামী/স্ত্রীর শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও সমস্যা না হলে, সাধারণত মানসিক চাপ হওয়ার কথা নয়। অন্য দিকে কাজ থেকে একেবারেই ছুটি না নিলে বা ঋণের চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকলে নিয়মিত কম ঘুমোলে স্ট্রেস হর্মোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সন্তান লাভে সচেষ্ট দম্পতিরাও প্রায়ই মানসিক ভাবে উদ্বিগ্ন হন। সন্দেহ নেই, মাসের পর মাস চেষ্টা করেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে দম্পতির বিশেষ করে স্ত্রীর মনে স্ট্রেস বা চাপ আসতে পারে। সেই স্ট্রেস পরবর্তী কালে ফার্টিলিটির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এ রকম বহু মহিলাকে আমি চিনি। ব্যক্তি জীবনে যারা যথেষ্ট শৃঙ্খলাপরায়ণ, স্থিতধী ও জীবনে পরিকল্পনামাফিক এগোন। অথচ, এদেরই কেউ কেউ প্রেগন্যান্ট হতে গিয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করেন, যে প্রজনন ক্ষমতা এত দিন তাঁদের নিয়ন্ত্রণে ছিল (সক্রিয় ভাবে প্রেগন্যান্ট না হতে চেয়ে), এখন তা হাতের বাইরে চলে গেছে। এই ঘটনা তাঁদের কাছে হঠাৎ একটা শকের মতো আসে এবং মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁদের স্ট্রেস হর্মোন মাত্রা বাড়াতে শুরু করে।

প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু কিছু স্ট্রেস থাকে। স্ট্রেসে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা কিংবা স্ট্রেস হর্মোন উৎপাদন মাত্রা মানুষ ভেদে আলাদা। কোনও মহিলার শরীরে অতিরিক্ত স্ট্রেস হর্মোন নিঃসৃত হলে, তা যৌন বা সেক্স হর্মোনের ওপর প্রভাব ফেলে। কারও কারও মেনস্ট্রুয়েশন ও ওভ্যুলেশনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যা গর্ভসঞ্চারে অসুবিধা ঘটায়। এ ছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দম্পতিদের সামাজিক জীবন, যৌনজীবন ও সাধারণ শান্তির বিঘ্ন ঘটিয়ে স্ট্রেস পুরুষ বা মহিলা বা উভয়ের যৌনাকাঙ্ক্ষা কমায়। বলা বাহুল্য, এর ফলে প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস স্ট্রেস হর্মোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ঋতুচক্র বা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের প্রথম দিকে গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হর্মোন তৈরি করে মহিলাদের রিপ্রোডাক্টিভ সাইকেলের সেক্স হর্মোন নিয়ন্ত্রণ করে। এই ঘটনায় পিটুইটারি গ্রন্থি ফলিকল স্টিমেলেটিং হর্মোন (এফ এস এইচ) নিঃসরণের সঙ্কেত পায়, যা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের একটি বিশেষ সময়ে পর্যায়ক্রমে ইস্ট্রোজেন, লুটিনাইজিং হর্মোন (এল এইচ) ও প্রোজেস্টেরন হর্মোন সৃষ্টিতে উদ্দীপকের কাজ করে। চূড়ান্ত স্ট্রেস চলাকালীন কিংবা কোনও মহিলা ক্রনিক মানসিক উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকলে প্রোজেস্টেরন হর্মোন নিজে স্ট্রেস হর্মোন কটিসলে পাল্টে যায়। কটিসল উৎপাদন সেক্স হর্মোন উৎপাদনের জৈব রাসায়নিক পথটিকে অনুসরণ করে। এর ফলে শরীরে প্রোজেস্টেরন হর্মোনের মাত্রা কমে যায়। একই সঙ্গে ভাললাগার অনুভূতি সৃষ্টিকারী বা ফিল গুড ডোপামিন হর্মোনের মাত্রা কমে গেলে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে প্রোল্যাকটিন হর্মোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এরাও যৌন হর্মোনকে স্বাভাবিক মাত্রা রক্ষা না করতে দিয়ে নিঃসরণ কমাতে বাধ্য করে। সেক্স হর্মোন নিঃসরণ কমে যাওয়ার অর্থ ওভ্যুলিটারি এবং মেনস্ট্রুয়াল সমস্যার সৃষ্টি হওয়া।

রক্তপ্রবাহ মধ্যে অ্যাড্রিনালিন নিঃসৃত হলে শরীরকে ‘ফাইট’ বা ‘ফ্লাইট’ উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের উদ্দেশ্য রক্তে গ্লুকোজ মিশ্রিত হতে শুরু করে।

অ্যাড্রিলিনের এই উচ্ছ্বাস থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হলে শরীরের রক্তশর্করা মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু আপনি যদি অসমর্থ হন তা হলে অ্যাড্রিনালিন ও কটিসল ধারাবাহিক ভাবে বাড়তে থাকে। এই সময় দীর্ঘকালীন স্ট্রেস এক্সপোজার বা মানসিক চাপে থাকার কারণে আপনি বদহজম, নিউট্রিয়েন্ট বা পৌষ্টিক গুণ পোষণের ক্ষমতা কমে যাওয়ার সমস্যা, এমনকী ফুড অ্যালার্জি উপসর্গে ভুগতে পারেন।

স্ট্রেস দূর করব বললেই করা য়ায় না। সেটা কাম্যও নয়। সামান্য স্ট্রেস মানুষকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়ে শরীর টানটান ও মস্তিষ্ককে ধারালো রাখে। তবুও সামগ্রিক ভাবে বিচার করে বলা যায় শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক কল্যাণের জন্য মানসিক চাপমুক্তির প্রয়োজন রয়েছে।

আপনারা দুজনে বা ব্যক্তি হিসেবে আপনি নিজে যে ভাবে স্ট্রেসকে সামাল দেবেন সেটাই ঠিক করবে স্ট্রেস ধারাবাহিক ভাবে ক্ষতি করে যাবে কিনা। মানসিক চাপ কমানোর জন্য আপনার পরিকল্পনা কয়েকটি কয়েকটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। যেমন ব্যক্তিত্ব-সহ আপনার বেড়ে ওঠা, পূর্ববর্তী মানসিক চাপের অভিজ্ঞতা ও তা থেকে প্রাপ্তশিক্ষা এবং কী পরিমাণ সাহায্য আপনি পেয়েছেন। গর্ভসঞ্চারে উদ্যোগী হওয়ার সময়, বিশেষত ফার্টিলিটির সমস্যা থাকলে বা আই ভি এফ চিকিৎসা চলাকালীন মানসিক উৎকণ্ঠার বিষয়টিকে পরিষ্কার ভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। অতীতে এই ধরনের অভিজ্ঞতায় আপনার প্রতিক্রিয়া কী ছিল এবং আপনার প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন করা উচিত কিনা এ-সব শর্তকে বিবেচনায় রাখতে হবে। এ রকম হলে নিজের মনের ওপরে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করা যায় এবং তাতে মানসিক সুস্থিরতা ও শান্তি ফিরে আসে।

মনের গতি পরিবর্তন, হর্মোনের ভারসাম্য ও নিজের সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতি করার দুটি খুব ভাল উপায় আছে। প্রথমত চাপমুক্তির জন্য জীবনের ঠিক কোন দিকটির পর্যালোচনা দরকার তা বিশ্লেষণ করে নিজেকে মুক্তমনা করার উপায় শেখা। এতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, হতাশা, উদ্বেগ এবং দ্বন্দ্ব আমাদের শরীরে যে স্ট্রেস রেসপন্স বা মানসিক দোলাচল তৈরি করে দমন করে তা মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনা।

এন্ডোক্রিন সিস্টেমের সুষ্টু কার্যকারিতার ওপরে আপনার গর্ভসঞ্চার বহুলাংশে নির্ভরশীল। গর্ভধারণের সম্ভাবনা সর্বাধিক করতে আপনার জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস কী ভাবে স্ট্রেসের পরিমাণ ও হর্মোন ভারসাম্যে সুস্থিতি আনবে তা বুঝে, সেই মতো নিজেকে পাল্টাতে পারেন। আমার মনে হয় হেলদি লাইফস্টাইল বা ভারসাম্যের জীবন, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম আহার, নিয়মিত এক্সারসাইজ ও কিছু রিল্যাক্সেশন বা শরীর শিথিল করার টেকনিক অভ্যেস করে স্ট্রেসকে দূরে রাখা সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stress pregnancy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE