শান্তিনিকেতনের কবিতা উৎসব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী ভট্টাচার্য
‘এখানে কবিতা পেলে গাছে-গাছে কবিতা টাঙাবো।’
এমন করে আর কে’ই বা বলতে পারেন! তিনি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জীবন জুড়ে, পথে-পিরিচে কবিতার ঘর-বাড়ি। শক্তিই প্রথম ভেবেছিলেন কলকাতায় পদ্যোৎসবের কথা। ঠিক হয়, সপ্তাহ ধরে কবিতা পড়বেন কবিরা। থাকবেন অবাঙালি কবিরাও। গান হবে, আবৃত্তি হবে, কবিতা নিয়েই চলবে কথার পিঠে কথা। ঠিক, হলও তাই! ’৮৫ তেই।
শুধু কবিতার জন্য সে কী উন্মাদনা! শামিল প্রেমেন্দ্র মিত্র, অরুণ মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পূর্ণেন্দু পত্রী, শক্তি-সুনীল-শরৎকুমার, আয়ান রশীদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী...! ও পার থেকে কবি শামসুর রহমান, আল মাহমুদ, নির্মলেন্দু গুণ...। সপ্তাহভর কবি-শিল্পীদের দরাজ মেলামেশা। রবিঠাকুরের গান।
আমৃত্যু সভাপতি শক্তি আনন্দবাজারে লিখলেন, ‘‘সাত দিন ব্যাপী কবিতা নিয়ে উন্মাদনা কলকাতাই সহ্য করতে পারে!’’
সুনীল লিখলেন, ‘‘অনেক দিন পর বাংলাদেশ থেকে কবিদের একটি প্রতিনিধি দল এলেন পশ্চিম বাংলায়। সরকারি আমন্ত্রণে নয়, এর উদ্যোক্তা ‘আবৃত্তিলোক’ নামে একটি সংস্থা।’’ ১৯৮৭ সাল থেকে উৎসব হল শান্তিনিকেতনেও।
একে একে জুড়ে গেলেন শিবনারায়ণ রায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কুমার রায়, সুচিত্রা মিত্র, যোগেন চৌধুরী, অশোকবিজয় রাহা, বীরেন বন্দ্যোপাধ্যায়, মার্টিন কেম্পশেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, জয়দেব বসু, তসলিমা নাসরিন, অপর্ণা সেন, বিক্রম সিংহ খাঙ্গুরা প্রমুখ। উৎসবের রেশ ছড়িয়ে পড়ল রায়গঞ্জে, সুন্দরবনের জলে-জঙ্গলে। শান্তিদেব ঘোষ গাইলেন, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’, কখনও শোনা গেল নীলিমা সেনের গলায়, ‘সফল কর হে প্রভু আজি সভা।’ দেখতে দেখতে সেই ‘কবিতা উৎসব’ কত বছর পেরিয়ে গেল!
সংস্থার কর্ণধার সৌমিত্র মিত্র জানান, ‘‘এ বার উৎসব ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি শান্তিনিকেতনে ও ২৬-এ কলকাতার ই এম বাইপাসে পি সি চন্দ্র গার্ডেনে। এই প্রথম সার্ক দেশভুক্ত ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কবিরা যোগ দেবেন। কলকাতায় সূচনা করবেন কবি শঙ্খ ঘোষ।’’
মনে পড়ল, উৎসবের পঁচিশ বছরে শঙ্খবাবুর স্মৃতি, ‘‘এই তো সেদিন, শক্তি এসে বলেছিল: ‘আমাদের কবিতা-উৎসবের জন্য একটা প্রদর্শনী গুছিয়ে দিতে হবে।’... মনে পড়ে, ‘নন্দন’-এর একটা ঘরে সারাদিন জুড়ে বই সাজানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘরের একটা শিল্পরূপ দেবার নেশায় পৃথ্বীশ— পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়— কখনও কখনও শক্তিও জুটে যাচ্ছে সঙ্গে। অবাক কাণ্ড, সে-উৎসবেরও হল আজ পঁচিশ বছর বয়স।’’
কবিতা পড়বেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জয় গোস্বামীরা। প্রথম উৎসবের প্রতিবেদনে সুনীল একটি ইচ্ছের কথা লিখেছিলেন। ‘‘কলকাতা ও ঢাকায় মাঝে মাঝে এরকম মিলিতভাবে কবিতার পরাগরেণু ওড়ালে বেশ হয়।’’
পলাশের মাস পড়তেই উৎসবের চিঠি প্রতিবার মনে করিয়ে দেয়, আবৃত্তিলোক এখনও সেই কাজটাই করে চলেছে! গাছে গাছে কবিতা টাঙানোর কাজ। পদ্যের পরাগরেণু ওড়ানোর কাজ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy