Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

বড় বাড়ির ঐতিহ্যের সন্ধানে

প্রা সাদনগরী কলকাতার স্থাপত্য-ঐতিহ্যের অ্যাকাডেমিক আলোচনায় সাহেবদের বাড়িঘর যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, মার্বল প্যালেসের মতো কয়েকটি বাদে বাঙালিদের বাড়ি তত গুরুত্ব পায়নি। বাঙালি নব্যধনীদের প্রাসাদ নিয়ে ছবি সহ দু’একটি বই প্রকাশিত হলেও তাতে পরিবারের ইতিহাস, গল্পকথাই বেশি।

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

প্রা সাদনগরী কলকাতার স্থাপত্য-ঐতিহ্যের অ্যাকাডেমিক আলোচনায় সাহেবদের বাড়িঘর যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, মার্বল প্যালেসের মতো কয়েকটি বাদে বাঙালিদের বাড়ি তত গুরুত্ব পায়নি। বাঙালি নব্যধনীদের প্রাসাদ নিয়ে ছবি সহ দু’একটি বই প্রকাশিত হলেও তাতে পরিবারের ইতিহাস, গল্পকথাই বেশি। বাংলার স্থাপত্য-ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনও ধারাবাহিকতার সূত্রে বাঙালিদের গড়া এই সব প্রাসাদকে যুক্ত করা যায় কি না, প্রাসাদের পরিকল্পনাই বা কী ভাবে হত, সময়ের সঙ্গে তার কোনও বিবর্তন চোখে পড়ে কি না, স্থাপত্যের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণেই বা কী বোঝা যায়, এ সব প্রসঙ্গ অনালোচিতই থেকে গিয়েছে। জোয়ান টেলর ও জন লাং এগুলি তুলে ধরতেই যৌথ প্রয়াসে লিখেছেন দ্য গ্রেট হাউসেস অব ক্যালকাটা/ দেয়ার অ্যান্টিসিডেন্টস, প্রিসিডেন্টস, স্প্লেন্ডার অ্যান্ড পোর্টেন্টস (নিয়োগী বুকস, ১৫০০.০০)।

আলোচনার কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে বারোটি ‘গ্রেট হাউস’ বা প্রাসাদ, মূলত উত্তর কলকাতার। নির্মাণকাল মধ্য-আঠেরো শতক (শোভাবাজার রাজবাড়ি) থেকে বিশ শতকের সূচনা (বিজয় মঞ্জিল)। মধ্যে কালানুক্রমে এসেছে ঠনঠনিয়া লাহাবাড়ি ও দত্তবাড়ি, মার্বল প্যালেস, জোড়াসাঁকো রাজবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ি, ঘড়িওয়ালা মল্লিকবা়ড়ি, খেলাত ভবন, বাগবাজার বসুবাড়ি, বেহালা রায়বাড়ি ও দুর্গাচরণ লাহার বাড়ি। লেখকদের মতে, স্থাপত্যের আলোচনায় এই সব বাড়িকে যে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তার কারণ হিসেবে বলা হয় এগুলির কোনও চরিত্র নেই, নানা কিছুর মিশেলে এ সব ‘খিচুড়ি’ স্থাপত্য। কেন ‘খিচুড়ি’ স্থাপত্যটাই এই পর্বে স্বাভাবিক ছিল, এবং এই বিশেষ চরিত্রের মধ্যে কী ভাবে লুকিয়ে আছে সমসময়ের সমাজ-ইতিহাসের নানা ইঙ্গিত, সেটাই বিস্তারিত ভাবে এই বইয়ে আলোচিত হয়েছে। আছে প্রচুর ছবি।

প্রেক্ষিত আলোচনা করতে গিয়ে বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের ধর্মীয় স্থাপত্যশৈলীর কথা এসেছে, তবে সে কালের ঘরবাড়ির হদিশ খুঁজেপেতে বিশেষ পাওয়া যায়নি। ফ্রান্সিস বুকাননের সমীক্ষা (১৮০৭-১৬) এবং তার ছবিগুলি দেখা জরুরি ছিল। সৃজননাথ মিত্রমুস্তৌফী তাঁর উলার মুস্তৌফী বংশ বইয়ে (১৩৩৭ বঙ্গাব্দ) মুস্তৌফীদের সতেরো শতকের শেষে স্থাপিত ভদ্রাসনের যে অসাধারণ মানচিত্র দিয়েছিলেন, তা গ্রামের জমিদারবাড়ির স্থানিক মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে। তবু এই বইয়ে গ্রাম-শহরের স্থাপত্যের সংযোগ বোঝার চেষ্টা এবং শহরের বারোটি প্রাসাদের বিশ্লেষণ নিঃসন্দেহে কলকাতা চর্চায় উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE