Advertisement
০৪ মে ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

বাম আন্দোলনের চিত্র

বাঙালি যেমন সত্যজিতের ভক্ত, তেমনই ভক্ত কুরোসাওয়ার, আর ওই দুই প্রতিভার পারস্পরিক মুগ্ধতা তো সুবিদিত।

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

আত্মজীবনীর মতো/ আকিরা কুরোশাওয়া

অনুবাদক: ঐত্রেয়ী সরকার

৩৫০.০০

বৈ-চিত্র প্রকাশন

বছর দেড়েকের পরিশ্রমে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়া-র সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি-র যে অনুবাদ প্রকাশ পেয়েছে, তা বাঙালির জন্যে রীতিমতো উপহারই বলা চলে। ঝরঝরে স্বাদু গদ্য, একটানে পড়ে ফেলা যায়। বাঙালি যেমন সত্যজিতের ভক্ত, তেমনই ভক্ত কুরোসাওয়ার, আর ওই দুই প্রতিভার পারস্পরিক মুগ্ধতা তো সুবিদিত। ১৯৮১-তে প্রথমে জাপানি ভাষায় প্রকাশিত হয় বইটি, ১৯৮৩-তে ইংরেজি অনুবাদ। বঙ্গানুবাদটিতে যুক্ত হয়েছে বিস্তারিত উল্লেখপঞ্জি, সঙ্গে বিরল কিছু স্থিরচিত্র— কুরোসাওয়ার ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের। জাঁ রেনোয়া-র মতোই আত্মজীবনী লেখায় উৎসাহী ছিলেন না কুরোসাওয়া, কারণ একজন চলচ্চিত্রকার তো নিজের ছবির ভিতর দিয়েই অবিরত প্রকাশ করে চলেন নিজেকে। তবু রেনোয়া যখন লিখে ফেললেন মাই লাইফ অ্যান্ড মাই ফিল্মস, প্রাণিত হয়ে লিখলেন কুরোসাওয়াও, প্রস্তাবনা-য় স্বীকার করলেন: ‘‘এই বইয়ের অধ্যায়গুলো অন্যভাবে লেখার সিদ্ধান্তটা রেনোয়ার থেকেই অনুপ্রাণিত।... এত লোকজন ‘মানুষ কুরোশাওয়া’-কে জানতে চায় তখন আমার একটা দায় থেকেই যায়।’’ সেই দায় থেকেই গত শতকের প্রথমার্ধের স্মৃতির ভিতর দিয়ে এমন ভাবে হেঁটে গিয়েছেন যে তাতে তীব্র ভাবে জীবন্ত হয়ে ফুটেছে জাপানি জীবনেরও ছবি।

বাংলায় বামেরা/ রাজপথে ও রাজ্যপাটে (১৯২০-২০১১)

লেখক: অঞ্জন বসু

৬৯৯.০০

দীপ প্রকাশন

অঞ্জন বসু বইটি উৎসর্গ করেছেন ‘বামপন্থায় বিশ্বাসী বাংলার মানুষকে’। তাৎপর্যপূর্ণ উৎসর্গ। ‘বামপন্থায় বিশ্বাসী’, ‘সিপিএমে বিশ্বাসী’ নয়। কারণ, ১৯৭৭ থেকে ২০১১— দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম জমানা কার্যত সিপিএম জমানায় পরিণত হয়েছিল। অনেকেই বিশ্বাস করতেন, বামপন্থা মানেই বুঝি সিপিএম। কিন্তু অঞ্জন বসু সাংবাদিকতায় চার দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা থেকে এই যে বইটি রচনা করেছেন তাতে বাম আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হয়। এ দেশে বাম আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজপাট থেকে ক্ষমতাচ্যুত বামফ্রন্ট সরকার— এক বিস্তৃত ক্যানভাসে কলম চালিয়েছেন অঞ্জন। ৭২৭ পাতার সুবিশাল গ্রন্থটি বিন্যস্ত হয়েছে মূলত তিনটি পর্বে। প্রথম পর্ব প্রাক-স্বাধীনতা যুগে বাম আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি সমেত নানা বামপন্থী দলের উদ্ভব ও বিস্তার এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা নিয়ে রচিত। ’৪৭ থেকে ’৭৭— এই তিনটি দশকের বাম আন্দোলনের কথা বিবৃত হয়েছে দ্বিতীয় পর্বে। তৃতীয় পর্ব বিস্তৃত হয়েছে ১৯৭৭ থেকে ২০১১, এই প্রায় সাড়ে তিন দশকে বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য, ব্যর্থতা ও বাম দলগুলির ভূমিকা নিয়ে। এসেছে বামপন্থীদের গণ সংগঠনের কথা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কথাও। আছে নকশালবাড়ি আন্দোলন থেকে হালের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-লালগড় আন্দোলনও। দু’মলাটে সুনিপুণ দক্ষতায় অঞ্জন বুনেছেন বাম আন্দোলনের নকশিকাঁথা।

সর্বজয়াচরিত্র ১ ও ২/ করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাসমগ্র

সম্পাদক: সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়

৩৭৫.০০ ও ৪২৫.০০

থীমা

এক দীর্ঘ প্রবন্ধ, ‘অভিনয়ে জীবনশিল্প’, লিখতে লিখতে যেন আত্ম-আবিষ্কার করছেন করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘সর্বজয়ার সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমি যেটা বোধ করেছি, সত্যজিৎ তাতে কখনো বাধা সৃষ্টি করেননি। তাই আমার মনে হয়েছে— হয়তো অবোধের মতোই— যে তাঁর এই সৃষ্টিতে আমারও অবদান আছে। এ যদি স্পর্ধিত চিন্তাও হয়, তাতে আমি যে আনন্দ পেয়েছি তা অস্বীকার করি কী করে?’ সর্বজয়া চরিত্রের অভিনেত্রী রূপে আজও তাঁকে (১৯১৯-২০০১) নিয়ে বিহ্বল বাঙালি, সে ভাবেই তাঁর পরিচিতি বিস্তীর্ণ। আধুনিক অভিনয় নির্মাণে চিন্তা, শৃঙ্খলা ও প্রস্তুতির সঙ্গে নাটক-চলচ্চিত্রের যৌথ আত্মনিয়োগে নিজেকে কী ভাবে সম্পন্ন করে তুলতে হয়, নিজস্বতাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই নিজ-ব্যক্তিত্বকে কী ভাবে সমবায়িকতায় ন্যস্ত করতে হয়, তারই হদিশ তাঁর দুই খণ্ডের রচনাসমগ্রে। এক শিক্ষিত বাঙালির বিশেষ মূল্যবোধ ও সচেতন আধুনিকতার পাঠও বলা যেতে পারে তাঁর লেখাগুলিকে, যা আজ ক্রমশই দুর্লভ আমাদের জীবনে। শিল্প নিয়ে তাঁর স্মৃতি-চিন্তা-সমালোচনার পাশাপাশি পরিচিতজনকে নিয়ে স্মৃতিলেখ, ব্যক্তিগত রচনা, বই বা কোনও লেখার পাঠ-প্রতিক্রিয়া, বহু ও বিবিধ চিঠিপত্র তো ঠাঁই পেয়েছেই, আছে অনুবাদ আর গল্পও। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে সমাজ-পরিপার্শ্বসহ বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের নানান মুহূর্ত ও মোড় যেন লীন হয়ে আছে এই রচনাদিতে। যেমন উল্লেখিত প্রবন্ধটিতে লিখছেন যে চল্লিশের দশকে গণনাট্য সংঘের নতুন চিন্তা ও নিরাভরণ চেহারার জন্যেই ‘সম্ভব হয়েছিল মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের মেয়েদের পক্ষে রঙ্গমঞ্চে আসা।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE