যৌন অনাচার ঠেকাতে আমেরিকার গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়ে গেল নতুন আচরণবিধি, হ্যাঁ মানে হ্যাঁ। হিংটিংছট নয়, সোজা বাংলায় এর মানে হল, বন্ধু অথবা বান্ধবীর সঙ্গে কোনও রকম শারীরিক কাজে এগনোর আগে স্পষ্ট করে কী করতে যাওয়া হচ্ছে বুঝিয়ে বলা এখন থেকে বাধ্যতামূলক, নচেৎ উহা যৌন হেনস্তা। অর্থাৎ চাঁদনি রাতে হাত ধরেছি, এ বার একটু কাঁধ ছুঁই, চোখ পাকালে নাহয় সরিয়ে নেব, এ জাতীয় দুরুদুরুবক্ষ ট্রায়াল অ্যান্ড এরর মেথড একদম বন্ধ। পরিবর্তে, অকম্পিত হৃদয়ে সরল করে জিজ্ঞাসা করতে হবে, ‘অনেক ক্ষণ তো বাবা স্রেফ হাত ধরিয়ে বসিয়ে রাখলে, এ বার একটু অমুক স্থানে (নাম সহ) স্পর্শ করতে পারি?’ এবং এর উত্তরে অপর পক্ষ ‘তোমার ধান্দা সুস্পষ্ট এবং আমি এতে স্ব-ইচ্ছায় ও সজ্ঞানে সম্পূর্ণ সম্মত আছি’ জাতীয় স্ট্যাম্পপেপারীয় ঐকমত্য পোষণ না করলে এগনো যাবে না। কাকুতি-মিনতিতে ‘হ্যাঁ’ বললে তা ‘না’ বলার সমার্থক, এবং আইনত দণ্ডনীয়। আধাখ্যাঁচড়া ‘যাঃ’ মানে ‘হ্যাঁঃ’ ধরে নেওয়া বেআইনি। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ নয়, তাই হাব-ভাব-চাউনি বুঝে এগনোও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এবং বলা বাহুল্য, এতদ্দ্বারা সারপ্রাইজ প্রদানও বন্ধ। হঠাৎ করে জাপটে ধরে প্রেমিকাকে চমকে দেবে, ও মামদোবাজি চলবে না। আইন স্পষ্ট বলছে, পরশু দিন তুমি চুমু খেয়েছিলে মানে আজও পারো, তা নয়। রোজ এবং প্রতি বার, প্রতিটি কর্মের আগে ব্যাপারটা সরল ভাষায় বুঝিয়ে বলা আবশ্যক।
ফাজলামি ভাবছেন? ভাববেন না। ‘ইয়েস মিন্স ইয়েস’ দিয়ে গুগ্ল করে দেখে নিন। দেখবেন, সাম্রাজ্যবাদের সব হাতই কালো, শুধু এই মহান আইডিয়াটি ছাড়া, কারণ এর পিছনে জেন্ডার অ্যাক্টিভিজ্ম নামক বিরাট আইডিয়োলজি আছে। এই আইডিয়োলজির সুবিধে হল, এতে তৃতীয় বিশ্বের পার্কের মতো প্রেমিক-প্রেমিকাদের উদ্দেশে ‘ঝোপের পিছনে কেন, আলোর নীচে বসুন’, ‘কাঁধে হাত কেন, ছ’ইঞ্চি গ্যাপ দিন’ আপ্তবাক্যসমূহ আওড়ানোর জন্য পুলিশি ছ্যাঁচড়ামির প্রয়োজন থাকবে না। ট্রেনিং দিলে প্রেমিকযুগলই সেল্ফ-সার্ভিস নজরদারি করে দেবে। চোখ পাকিয়ে ঝগড়া করছে? নির্ঘাত মানসিক নির্যাতন। চকিত স্পর্শ? ওরে বাবা, ধান্দাবাজি। গায়ে হাত? কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে জানাও। আশা করা যায়, এ ভাবেই ক্রমে পৃথিবী পলিটিকাল কারেক্টনেসের গ্রাম-পঞ্চায়েত হবে। প্রেমিকাকে দেখলেই ‘তোমাকে চাই’ না গাওয়াকে মানসিক হেনস্তা এবং কবিতার খাতায় বাধ্যতামূলক ভাবে ‘প্রিয় নারী’র সঙ্গে ‘নীল শাড়ি’র মিল না দিলে তাকে অসংবেদনশীলতার অসুখ বলা হবে। নিরাময়ে থাকবে থেরাপি ও কাউন্সেলিংয়ের সুবন্দোবস্ত। দু’একটি ক্ষীণকণ্ঠ স্লাইট মিউমিউ করেই ‘ওরে বাবা রিগ্রেসিভ হয়ে গেলাম নাকি’ ভয়ে চুপ করে গেলেই চাঁদনি রাতে বিশ্ব জুড়ে প্রেমিকযুগল কার্তিকের প্রান্তরে বসে জাস্ট একে অপরের দিকে নজর রেখে যাবে খাদ্য ও খাদকের মতো। গ্লোবাল ভিলেজ কি আর সাধে বলে?
bsaikat@gmail.com
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy