Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ছোটগল্প

পিতৃমুখী

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছিল। ঝিঙেফুলের মাচার নীচ থেকে, বেড়ার আড়াল থেকে ছোট-ছোট ছায়া দিবাকর মুখুজ্যের বাড়ির উঠোনটিকে তাক করে এগিয়ে আসছিল।

ছবি: সুমন চৌধুরী

ছবি: সুমন চৌধুরী

সৈকত মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছিল। ঝিঙেফুলের মাচার নীচ থেকে, বেড়ার আড়াল থেকে ছোট-ছোট ছায়া দিবাকর মুখুজ্যের বাড়ির উঠোনটিকে তাক করে এগিয়ে আসছিল। উঠোনের লাগোয়া বাড়ির দাওয়ায় বসে গৌরাঙ্গ দেখল, দূরের মাঠে ভানুমতির শবের মতো ভেসে উঠেছে সাঁজালের নীল ধোঁয়া।

চলটা-ওঠা চায়ের কাপটা ঠোঁটের কাছে ধরে গৌরাঙ্গ দেখছিল, ইলেকট্রিকের তারের ওপর চুপ করে বসে আছে দুটো কণ্ঠীঘুঘু। দিনের এই সময়ে‌ পাখিরা কিছুক্ষণের জন্যে ওড়াউড়ি থামিয়ে কীসের কথা যেন চিন্তা করে। একটু বাদেই ওরা রাত-কাটানোর গাছের দিকে উড়ে যাবে। তার আগে এই সামান্য সময়ের ধ্যান।

অবিকল আর একটা পাখির মতোই পেয়ারা গাছের নীচে চুপ করে বসেছিল ঝিলিক। অমনই নির্জীব, মনমরা। তার রোগা কাঁধের ওপর থেকে বোতাম-ছেঁড়া ফ্রকটা বারবার গড়িয়ে নেমে যাচ্ছিল, আর সে কাঁধ ঝাঁকিয়ে চেষ্টা করছিল সেটাকে যথাস্থানে ফেরত পাঠাতে। ক’দিন আগে বোধহয় ন্যাড়া হয়েছিল, এখন মাথাজোড়া কালো কদমফুল। খুব ফরসা হয়েছে ঝিলিক। গৌরাঙ্গ কিছুক্ষণ মন দিয়ে দেখল, সুন্দরে কুৎসিতে মেশানো ওই শিশুবালিকার মুখ। পাতলা ধনুকের মতো দুই ভুরুর নীচে ঘোলাটে ছোট চোখ। ঝুলে-পড়া পুরু দুই ঠোঁটের নীচে সুডৌল চিবুক। ওই ভুরু, ওই চিবুক, ওই গায়ের রং ঝুমুর থেকে পাওয়া।

গৌরাঙ্গর পিঠের কাছে বসেছিল ঝুমু। সেও বোধহয় এতক্ষণ নিজের মেয়েকেই দেখছিল। হঠাৎই বলে উঠল, ‘ঝিলিক ঠিক তোমার মতো হয়েছে। সব কিছু পেয়েছে বাপের কাছ থেকে। এত মিল...এত মিল! ভাবাই যায় না।’

গৌরাঙ্গ শুকনো গলায় বলল, ‘তাই নাকি?’

‘হ্যাঁ গো। খাওয়া-দাওয়া, শোওয়া-বসা সব।

‘তাই?’

‘হুঁ। যা-যা তুমি অপছন্দ করো, সবই ওর দু’চক্ষের বিষ। ধনেপাতা, ঢ্যাঁড়শ, লালশাক। আমি ইচ্ছে করেই মাঝে-মাঝে পাতে দিয়ে দেখি। ছুড়ে ফেলে দেয়। অথচ তোমাকে দেখল কোথায়, বলো? তাই ভাবি...’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঝুমু চুপ করে গেল।

‘কী ভাবো?’ জিজ্ঞেস করে গৌরাঙ্গ।

‘ভাবি, রক্ত কেমন জিনিস! এই, জানো?’ ঝুমু হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে গৌরাঙ্গর হাতের ওপরের দিকটা চেপে ধরল। গৌরাঙ্গ কেঁপে উঠল।

ঝুমু গৌরাঙ্গর হাতটা চেপে ধরেই বলে চলল, ‘জানো? ঝিলিক ঘুমোনোর সময় মাথার নীচে হাত ভাঁজ করে রেখে ঘুমোয়। অবিকল তোমার মতো। দুটো-তিনটে চারটে বালিশ দাও। তবু মহারানির চোখে ঘুম এলেই ঠিক মাথার নীচে হাতটি চলে যাবে।’ বলতে-বলতে হেসে গড়িয়ে পড়ল ঝুমু। হঠাৎই হাসি থামিয়ে পাথরের মতো চুপ মেরে গেল।

লম্বা দাওয়াটার অন্য প্রান্তে বসে ছিলেন ঝুমুর মা। হঠাৎ গলা তুলে নাতনিকে ডাক দিলেন, ‘ঝিলিক, উঠে এসো দিদিভাই। মাথায় হিম পড়লে জ্বর হবে। এই সবে জ্বর থেকে উঠলে।’

ডাক শুনে দু’একটা খেলনাপাতি কুড়িয়ে নিয়ে ঝিলিক মন্থর গতিতে উঠোন পেরিয়ে অন্যদিকে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। যাওয়ার সময় একবার আড়চোখে ঝুমুকে আর গৌরাঙ্গকে দেখে নিল। কী বিষণ্ণ দৃষ্টি মেয়েটার চোখে! অথচ ঝুমু গৌরাঙ্গকে বিশ্বাস করিয়েই ছাড়বে যে, ওই মেয়ে না কি সারাক্ষণ ভারী ফুর্তিতে আছে, যে রকম সে থাকত। সংসারের কোনও কিছুই গায়ে মাখছে না। তারই মতো দেখছে শুধু চাঁদ ফুল পাখি। তারই মতো খাতায় না হলেও, মনে-মনেই লিখে চলেছে কবিতা।

‘মেয়ে তোমার কাছে বিশেষ ঘেঁষে না?’ গৌরাঙ্গ জিজ্ঞেস করল,

ঝুমু সপাটে উত্তর দিল, ‘কেন ঘেঁষবে? তুমি ঘেঁষতে? বললাম না, ঝিলিকের সব কিছু তোমারই মতো!’

গৌরাঙ্গ মনে-মনে বলে, সত্যি কথাই ঝুমু। তোমার কাছে ঘেঁষতাম না। তবু এমন গভীরভাবে আমাকে জানলে কেমন করে? আট বছরের দূরত্বেও কেমন করে মনে রাখলে আমি কী খেতাম, কী ভাবে শুতাম? নীল রং পছন্দ করতাম, না ধূসর? কেমন করে মনে রাখলে আমার মনের উনকোটি চৌষট্টি? কবে যে আমার জন্মদিন আসে, জন্মদিন চলে যায়, আমার জামার কলার ফেটে যায়, একটা শুকনো কাশি সারা শীতকাল আমাকে জ্বালায়, কেউ তো সে সব খেয়াল করে না ঝুমু।

যখন তুমি ছিলে, তখন তোমাকেও বলিনি ঝুমু। ভুল করেছিলাম। তোমার বাবার কাছে সেই বেগার-খাটার বাইরে শুধু চাঁদ ফুল পাখি আর কবিতা নিয়ে মত্ত ছিলাম। বুঝতেই পারিনি যে তুমি আমাকে দেখছ। যেভাবে একটা কচি বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়ার পরে তার মা খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে তার ছোট্ট নাকের ফুটো দুটো, দেখে গলার ভাঁজে দুধ জমে আছে কি না কিংবা ঘুনসির দড়িটা নরম কোমরে কেটে বসেছে কি না, ঠিক সেইভাবে তুমি এই অপদার্থ মানুষটাকে মন দিয়ে দেখে মুখস্থ করে নিয়েছিলে।

এখন মনে পড়ছে ঝুমু, এ বাড়িতে খাওয়ার সময় কোনওদিন তরকারির মধ্যে লঙ্কাকুঁচি বা ধনেপাতা পাইনি। তুমি তখন রান্নাঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে। মনে পড়ছে, গায়ে কোনও চাপা না নিয়ে শুয়েছি আর ঘুম ভাঙার পরে দেখেছি, কে যেন যত্ন করে একটা চাদর গায়ে দিয়ে গিয়েছে।

আজ তুমি আমার সেই সমস্ত তুচ্ছ খুঁটিনাটি দিয়ে মেয়েকে সাজাচ্ছ।

গৌরাঙ্গ মনে মনেই প্রশ্ন করল, কেন ঝিলিক? কেন এমন পাগলামি করছ? তারপর সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘড়ি দেখলো। ছ’টা বাজে। মাসটা আশ্বিন, তাই এর মধ্যেই বেশ অন্ধকার নেমে গিয়েছে। যন্ত্রণা... বড় যন্ত্রণাময় এই বেঁচে থাকা।

ওরা দুজন যেখানে বসেছিল, ঠিক তার পিছনের ঘরটা থেকে দমকা কাশির শব্দ ভেসে এল। ঝুমুর মা বললেন, ‘যাও বাবা। তোমার স্যরের ঘুম ভেঙেছে। সারা রাত হাঁপের টানে ঘুমোতে পারেন না তো, তাই এই দুপুরের দিকটায় একটু ঘুমিয়ে নেন। যাও, একটু কথা বলে এসো।’ এই বলে তিনি খুঁটিটা ধরে অতি কষ্টে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘আমি ওনার চা-টা গরম করে আনি।’

ঝুমু যেমন বসে ছিল তেমনই বসে রইল। যেন পাথরপ্রতিমা। ঝিলিককেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গৌরাঙ্গ একাই ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরের ভিতরে ঢুকল। সঙ্গে সঙ্গেই ওষুধ, ফিনাইল, আর স্যাঁতসেঁতে তোশক বালিশের একটা মিশ্র দুর্গন্ধ ঝাপটা মারল তার নাকে। এক-একটা টিউবলাইট থাকে, যেগুলোর আয়ু শেষ হয়েও হয় না। সে রকমই একটা দু’পাশ কালো হয়ে যাওয়া টিউবলাইট ঘরটার চারিদিকে নোংরা আলো ছড়াচ্ছিল।

এই ঘরটায় এক সময় গৌরাঙ্গ প্রতি দিন অনেকটা করে সময় কাটিয়েছে। আট বছর আগে ঘরটা ছিল অন্য রকম। ওই বাগানের দিকের বন্ধ জানলাটার নীচেই ছিল শীতলপাটি দিয়ে ঢাকা বেশ নিচু কিন্তু আড়ে-বহরে বিশাল একটা চৌকি আর এ দিকে গোটা দুয়েক মাদুর, সতরঞ্চি। ছিল রেডিয়ো আর গ্রামোফোনের ওপর এমব্রয়ডারি করা ঢাকনা। ছিল দেয়াল-জোড়া বইয়ের তাকে বাদামি কাগজের মলাট দেওয়া অসংখ্য রেফারেন্স বই।

সেই চৌকির ওপরে বসেই সোনাদিঘি কলেজের লেকচারার দিবাকর মুখোপাধ্যায় তাঁর নোটবইয়ের সাম্রাজ্য চালাতেন। মাধ্যমিক থেকে অনার্স অবধি তখন ইংরিজির নোটবই মানেই প্রফেসর ডি মুখোপাধ্যায়, এমএ বিএড। পয়লা বৈশাখে কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে প্রকাশকের লোক আসত। হাতে বড়-বড় মিষ্টির প্যাকেট আর চেকের খাম। স্যরের দু’তিনজন প্রিয় ছাত্র সেই সরস্বতী-কারখানার কর্মচারী হিসেবে কাজ করত; তারা বসত মেঝেয় পেতে রাখা সতরঞ্চি কিংবা মাদুরে। তাদেরই মধ্যে একজন ছিল গৌরাঙ্গ। তাকে দুপুরের খাওয়া তো প্রায় দিন এখানেই খেতে হত, এমনকী নতুন বই বেরনোর মরশুমে অনেক দিন ওই চৌকির ওপরেই রাতের কয়েকটা ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে হয়েছে তাকে।

তখন কাজটাকে বেশ গৌরবজনক মনে হত। এক কবির জীবনের সঙ্গে মানানসই কাজ। পরে অবশ্য বুঝেছে, স্যর তাকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে নিয়েছেন, তারপর আইসক্রিমের কাঠির মতো ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন বাইরে। অনার্সের নোট বানাতে গিয়ে তার নিজের অনার্স কেটে গিয়েছিল। এমনকী গ্র্যাজুয়েশনের পরেও বেশ কয়েক বছর স্যরের ডাকে এই ঘরে বসে পাতার পর পাতা কপি করে গিয়েছে, চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার কথা খেয়াল পড়েনি। কী যে একটা সম্মোহন ছিল দিবাকর মুখোপাধ্যায়ের কথাবার্তার মধ্যে, মনে হত, জীবনটাকে বুঝি উনিই তৈরি করে দেবেন। দেননি। বিডিও অফিসের ক্লার্কের চাকরিটা পেয়ে বেঁচে গিয়েছিল গৌরাঙ্গ। কবিতা ছেড়ে গিয়েছে কোন কালে।

লেপ-বালিশের স্তূপের ওপরে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন দিবাকর মুখোপাধ্যায়। ভীষণ রোগা হয়ে গিয়েছেন। সে দিনের সেই গ্ল্যামার এই আট বছরে কোথায় উধাও। বালিশের পাশ থেকে হাতড়ে চশমাটা বার করে চোখে পরলেন। গৌরাঙ্গ দেখল, সেই পুরনো সোনার গিল্টি করা চশমাটাই এখনও ব্যবহার করছেন উনি। সে দিন ওঁর মসৃণ ভরাট মুখের ওপরে যে ফ্রেমের ঔজ্জ্বল্য দারুণ মানাত, আজ তার জন্য ওঁর দাড়িভর্তি ভাঙাচোরা মুখটা জোকারের মতো লাগছিল।

চশমার নোংরা কাচের মধ্যে দিয়ে দিবাকর গৌরাঙ্গর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এসো গৌরাঙ্গ। ওই মোড়াটা টেনে নিয়ে বসো।’

‘কেমন আছেন?’ গৌরাঙ্গ জিজ্ঞেস করল।

‘ভাল নেই। সব ঠক, প্রতারক।’

গৌরাঙ্গ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কারা ঠক?’

‘প্রকাশকগুলো, আবার কারা? আমারই বইগুলোতে নতুন সিলেবাসের টুকরো-টাকরা জুড়ে দিচ্ছে, তারপর ভুয়ো লেখকের নামে ছাপাচ্ছে। এক পয়সা রয়্যালটি পাই না, জানো?’

কী বলবে ভেবে না পেয়ে গৌরাঙ্গ মাথা নিচু করে বসে রইল। তার কাছ থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে দিবাকর নিজেই আবার শুরু করলেন, ‘তোমার কাছে বলতে লজ্জা নেই, তুমি একদিন এই বাড়িরই ছেলে ছিলে। সংসার চালাতে পারছি না। পেনশনে ক’টা টাকাই বা পাই বলো। তবে সে জন্য নয়, তোমাকে খবর পাঠিয়েছিলাম অন্য একটা কারণে।’

‘বলুন।’

‘ঝুমুরের ব্যাপারটা শুনেছ তো? বিয়ের পর বেশ ক’বছর তো বাচ্চা হচ্ছিল না। তখন বন্ধ্যা বলে শ্বশুরবাড়ির লোকে অত্যাচার করত, স্বামী বিশেষ করে। সেটাকে যেমন গোরিলার মতো দেখতে, তেমনি তার স্বভাব। তারপর তিন বছর আগে মেয়ে হল। তখন অত্যাচার আরও বেড়ে গেল। তুমি যদি ওর পিঠের কাপড় সরিয়ে দেখো, এখনও মারের দাগ দেখতে পাবে। এত অত্যাচারে মেয়েটার মাথাটা বোধহয় একটু খারাপই হয়ে গিয়ে থাকবে। কিন্তু তার জন্য ওকে বাচ্চা সমেত বাপের বাড়িতে বসিয়ে দিয়ে যাবে? এটা কি মগের মুলুক? অনেক অনুনয়-বিনয় করেছি। কর্ণপাত করেনি। তারপর পলিটিক্যাল লেভেলেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার সেই গোরিলা জামাইটি নিজেই আবার পলিটিক্যাল লিডার। শেষ অবধি ভাবলাম, তোমাকে একবার বলে দেখি। যদি বিডিও সাহেবকে বলে লোকটাকে ঘাড় ধরে একবার এখানে এনে ফেলতে পারো। আমি কি এখনই তোমার হাতে একটা অ্যাপ্লিকেশন লিখে দেব?’

গৌরাঙ্গ বলল, ‘দিন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’

‘বেঁচে থাকো বাবা। মাঝে-মাঝে তাই ভাবি, ঝুমুরের বিয়েটা যদি তখন তোমার সঙ্গেই ... ঝুমুরমা একবার তখন বলেছিল। ঝুমুর বোধহয় তোমার সম্বন্ধে বেশ কিছুটা ... সে আমি কেমন করে বুঝব, বলো?’

এবার ফিরতে হবে। সাইকেলটা নিতে গিয়ে গৌরাঙ্গ দেখল, একটা পাল্লার আড়াল থেকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ঝিলিক। সে ইশারা করে মেয়েটাকে কাছে ডাকল। ঝিলিক পা টিপে-টিপে কিছুটা এগিয়ে এসে থেমে গেল। ওর দিদিমা বললেন, ‘যাও না দিদি। মামা কী বলছে, দ্যাখো।’ ঝিলিক আবার দু’পা হেঁটে গৌরাঙ্গর সামনে এসে দাঁড়াল। গৌরাঙ্গ পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বার করে ওর হাতে দিতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই চমকে দিয়ে ঝুমু বেশ বলে উঠল, ‘তাই ভাবি।’

ওর মা বেশ খাপ্পা হয়েই বললেন, ‘আর তোর ভাবাভাবি মা! সারাক্ষণ ওই ভেবে ভেবেই তো মাথাটা খারাপ করলি।’

ঝুমু মায়ের কথায় একদমই পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘না, তাই ভাবি, রক্ত কী জিনিস! দেখো একবার পাশাপাশি দু’জনকে। এক নাক, এক চোখ। তুমি বলতে না মা, পিতৃমুখী কন্যা সুখী?’

ওর মা আতঙ্কিত গলায় বললেন, ‘মরণদশা আমার! চুপ-চুপ! চারিদিকে ঢিঢি ফেলে দিবি দেখছি। কী কথার কী মানে হয় জানিস, রসখেপি কোথাকার?’

ঝুমু খিলখিল করে হেসে উঠেই আবার চুপ করে গেল।

পাথরের মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল গৌরাঙ্গ নিজেও। দেখছিল, ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটার মুখে সুন্দরী ঝুমু আর অচেনা এক কদাকার পুরুষের মিশ্র ছায়া। নাকি ছায়াগুলো গৌরাঙ্গ হাজরা নামে এক নিঃসঙ্গ দুঃখী মানুষের? দেখতে-দেখতে হঠাৎই গৌরাঙ্গর ভিতরে কী যেন হয়ে গেল, একটা বিরাট কান্নার ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইল তাকে। শুধু সেই ঢেউটার হাত থেকে বাঁচবার জন্যেই গৌরাঙ্গ হাঁটু মুড়ে ঝিলিকের সামনে বসে রোগা মেয়েটাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল। তার পর কেউ শুনতে না পায় এই ভাবে বলল, লক্ষ্মী মেয়ে, একবার ডাক তো, ‘বাবা’!

রবিবাসরীয়’ বিভাগে ছোটগল্প পাঠান, অনধিক ১৫০০ শব্দে।
ইমেল: rabibasariya@abp.in সাবজেক্ট: rabibasariya galpa

ডাকে পাঠানোর ঠিকানা:

‘রবিবাসরীয় গল্প’,

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

অমনোনীত পাণ্ডুলিপি ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। পাণ্ডুলিপির সঙ্গে ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি জানাবেন। প্রকাশনার সুবিধার জন্য ইউনিকোড ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Father
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE