Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Arpita Mukherjee

Arpita Mukherjee: ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার সংস্থার নামে ১০ বিঘা জমির হদিস ভাঙড়ের বানতলা চর্মনগরীতে

জমি অর্পিতার সংস্থার হলেও তৃণমূলের কিছু নেতা এলাকার মানুষজনকে হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন, জমি আসলে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

ভাঙড়ের তাড়দহের কাপাসহাটি মৌজায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এই জমিটি কেনেন। নিজস্ব চিত্র

ভাঙড়ের তাড়দহের কাপাসহাটি মৌজায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এই জমিটি কেনেন। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ০৭:২৮
Share: Save:

রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ‘ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট’ সংস্থার নামে প্রায় ১০ বিঘা জমির হদিস মিলল কলকাতা-সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের বানতলা চর্মনগরী এলাকায়।

ভাঙড় ১ ব্লকের তাড়দহ পঞ্চায়েতের কাপাসহাটি মৌজায় ৭ বিঘা ৪ কাঠা ৩ শতক জমি (প্লট নম্বর/ আরএস- ০১৪৬৫/০০০০০, খতিয়ান-০১৭৮৫/০০) অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে কেনা হয়। ২ বিঘা ১৫ কাঠা ১৩ শতক জমি (আরএস- ০১৩৮১/০০০০০, খতিয়ান-০১৭৮৫/০০) ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্টের নামে কেনা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ বিঘা জমির দাম পড়েছিল ২০ লক্ষ টাকা। রেজিস্ট্রেশনের তারিখ, ২০১৮ সালের ১৫ মে। জমিদাতারা হলেন সমীরকুমার সরকার, ঝুমা সরকার, রাহুল সরকার, কিশোরকুমার সরকার।

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমানে ওই এলাকায় জমির দর বিঘা-প্রতি প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। ২০১৮ সালে তা কিছু কম থাকলেও অর্পিতারা যে ওই জমি সে সময়েও ‘জলের দরে’ পেয়েছিলেন, তা বলাই চলে।

স্থানীয় মানুষের আবার অভিযোগ, কাপাসহাটি মৌজার ওই জমি জলাভূমির (ওয়েট ল্যান্ড) অন্তর্ভুক্ত। সরকারি ওই জমি কোনও ভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয়। কী ভাবে তা হস্তান্তর হল, সে প্রশ্ন উঠছে। প্রায় চার বছর আগে কেনা ওই জমিতে বৃদ্ধাশ্রম করা হবে বলে সে সময়ে এলাকার মানুষকে জানানো হয়েছিল। জলাভূমি দখল করে পাঁচিল দেওয়ার কাজও শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন বাধা দিতে গেলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মালিকপক্ষকে নিরাপত্তা দিয়েছিল। অভিযোগ, তাঁদের চাপের মুখে মাথা নিচু করতে বাধ্য হন প্রতিবাদী মানুষজন। তৃণমূলের কিছু নেতা এলাকার মানুষজনকে হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন, জমি আসলে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

স্থানীয় মানুষের একাংশের অভিযোগ, ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত তাড়দহ কাপাসহাটি মৌজার ওই জমি অর্পিতা ও ইচ্ছা এন্টারটেনমেন্ট সংস্থাকে কিনতে সহযোগিতা করেছিলেন ভাঙড়ের এক তৃণমূল নেতা। অর্পিতার জমির অদূরে ওই নেতার বাগানবাড়ি আছে।

অর্পিতা ও ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্টের জমি সম্প্রতি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হচ্ছিল। তবে পার্থ-অর্পিতা গ্রেফতার হওয়ার পরে সে কাজ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ। বৃহস্পতিবার এলাকায় গেলে দেখা গেল, ইট-বালি সহ ইমারতি দ্রব্য পড়ে রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। আশপাশের এলাকায় চাষবাসের কাজ করছিলেন কিছু মানুষ। তাঁদের কেউ কেউ জানালেন, পাঁচিল দেওয়া থেকে শুরু করে ওই জমিতে কাজকর্ম তদারক করতেন এলাকার তৃণমূল নেতারা।

স্থানীয় বাসিন্দা ফাল্গুনী সর্দার বলেন, ‘‘এই এলাকায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলা দশ বিঘা জমি কিনেছেন বলে জানি। তিনি একবার জমি দেখতে এসেছিলেন। এখানে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করার কথা বলা হয়। পরে শুনেছি, শিক্ষামন্ত্রীর জমি।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ওই জমি হস্তান্তরে সাহায্য করা হয়েছিল। প্রায় ২০ লক্ষ টাকায় ওই জমি কিনেছিলেন অর্পিতা ও ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট সংস্থা।’’

ভাঙড় ১ ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের বিএলআরও অরিজিৎ পাল বলেন, ‘‘সরকারি ওই জমি কী ভাবে অর্পিতা ও ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট সংস্থার নামে রেজিস্ট্রি করা হল, তা আমি জানি না। তবে ১৪৬৫ ও ১৩৮১ দাগ নম্বরের ওই দুই জমি এখনও পর্যন্ত তাঁদের নামে রেকর্ড হয়নি। পুরো জমিটাই এখনও সরকারি জমি হিসেবেই রেকর্ডভুক্ত রয়েছে।’’

তাড়দহ পঞ্চায়েত এলাকার কাপাসহাটি মৌজার ওই জমি ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত। এ বিষয়ে সভাপতি শাজাহান মোল্লা মন্তব্য করতে চাননি। ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লা বলেন, ‘‘কে কোথা থেকে এসে জমি কিনছেন, তা আমার জানা নেই। তদন্তকারী সংস্থা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’’

ভাঙড় কলেজের শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মারার অভিযোগে সেখানকার দাপুটে নেতা আরাবুল ইসলাম যখন সংবাদের শিরোনামে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থকে ‘গুরু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন তিনি। ভাঙড়ের মাটিতে জমি কেনায় তবে কি ‘শিষ্যে’র হাতও ছিল? আরাবুল এখন ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। দল দেখছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arpita Mukherjee Partha Chatterjee bangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE