প্রতীকী ছবি।
ফের সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল দেগঙ্গার গ্রামে। এ বারও ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে পরিবারের লোকজন সময় নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ।
শহর কলকাতা থেকে দেগঙ্গার দূরত্ব মেরেকেটে ৪৫ কিলোমিটার। কিন্তু অন্ধবিশ্বাসের জেরে এই এলাকায় এখনও সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝা-গুনিনের কাছেই ভরসা খুঁজছেন অনেকে। পর পর দু’দিনে এমন দু’টি ঘটনা সামনে এসেছে। মৃত্যু হয়েছে দু’জনেরই।
শুক্রবার রাতে দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার পাঁড়ুইপাড়ার সমীর পাঁড়ুইকে সাপে ছোবল মারে। বাড়ি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে সরকারি হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও সেখানে যাননি পরিবারের লোকজন। ওঝার বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁকের পরে মারা যান সমীর।
রবিবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। দেগঙ্গার কুমরুলি গ্রামের রিয়াজুল ইসলামকে (৩১) সাপে ছোবল মারে শনিবার রাতে। ঘরের মেঝেতে শুয়েছিলেন তিনি। বাঁ হাতে বিষধর সাপ কামড়ায়। যন্ত্রণায় ঘুম ভেঙে যায় রিয়াজুলের। বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে মামুরাবাদ গ্রামে গোলাম ছাত্তার নামে এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
রিয়াজুলের বাবা মুজিবর বলেন, ‘‘নাম করা ওঝা। তাই বিশ্বাস করে নিয়ে গিয়েছিলাম ছেলেকে। দু’ঘণ্টা ঝাড়ফুঁক করার পরে ওঝা জানায়, বিষ নেমেছে। ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলে।’’
ছেলের শারীরিক অবস্থা দেখে অবশ্য ভাল ঠেকেনি সকলের। চার কিলোমিটার দূরে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রিয়াজুলকে। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবককে নিয়ে আরজিকর হাসপাতালের দিকে রওনা দেন বাড়ির লোকজন। পথেই মৃত্যু হয়। পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়।
মৃতের পরিবার পরে স্বীকার করে, বাড়ি থেকে ছ’কিলোমিটারের মধ্যে দু’দুটি হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও স্রেফ ওঝাকে বিশ্বাস করেই সময় নষ্ট করেছেন। মৃতের স্ত্রী আমিনা বিবি বলেন, ‘‘ওঝার কাছে ফেলে না রেখে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয় তো উনি বেঁচে যেতেন। এখন তিনটে ছোট ছোট সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাব, কী করব জানি না।’’
শনিবার সমীরের ঘটনাটি সামনে আসার পরে অবশ্য রবিবার থেকে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে দেগঙ্গার কিছু গ্রামে। ডেঙ্গি সচেতনতার কাজে যুক্ত গ্রামীণসম্পদ কর্মীদের এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছেন, সাপে কাটা রোগীকে কখনই ওঝা বা গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। যাওয়া উচিত হাসপাতালে।
মাখলুদা বেগম নামে এক গ্রামীণসম্পদ কর্মী বলেন, ‘‘আমরা ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার কাজ করেছি। আজ থেকে পঞ্চায়েত প্রধানের নির্দেশে সাপে কাটা রোগীকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচার শুরু করলাম।’’
যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অধীনে আশাকর্মী, আইসিডিএস কর্মী ও প্রাথমিক শিক্ষকদের যদি সচেতনতা বাড়ানোর কাজে লাগানো যায়, তা হলেই এই কুসংস্কার বন্ধ হবে। তা না হলে একের পর এক মৃত্যু হবে সাপে কাটা রোগীর।
দেগঙ্গা থানার আইসি অজয় সিংহ বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy