Advertisement
১৭ মে ২০২৪

টাকা ফেললেই ‘তেজাব’

বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসত, ব্যারাকপুর মহকুমা জুড়ে কিন্তু অবাধে বিকোচ্ছে অ্যাসিড। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, মজুত এবং বিক্রি হওয়া অ্যাসিডের হিসেবনিকেশ খাতায় লিখে রাখতে হবে বিক্রেতাকে। কিন্তু বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেল দোকানিরা তা করছেন না।

বিকিকিনি: নিয়মোর তোয়াক্কা না করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বিকিকিনি: নিয়মোর তোয়াক্কা না করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০৯:০০
Share: Save:

উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড় বাজারে বাথরুম সাফাইয়ে অ্যাসিড চাইতেই দোকানদার বড়াই করে বললেন, ‘‘ইয়ে তেজাব লেকে যাইয়ে। অ্যায়সা সাফ হোগা, কি দিল খুশ হো যায়েগা।’’

২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট সারা দেশে খোলা বাজারে সব ধরনের অ্যাসিড বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। নির্দিষ্ট কিছু সংস্থাকে অ্যাসিড বিক্রির জন্য রাজ্যগুলিকে গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সে নিয়ম কাগজে কলমে রয়েছে ঠিকই। পুলিশও তা জানে। কিন্তু সেই নির্দেশের চার বছর পরেও উত্তর ২৪ পরগনার খোলা বাজারে অবাধে দেদার বিকোচ্ছে এই তরল।

রবিবার কলকাতায় এসে দেশ জুড়ে অবাধে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের ডাক দিয়েছেন এই লড়াইয়ের মুখ ২৮ বছরের তরুণী লক্ষ্মী অগ্রবাল। যিনি নিজেও অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করেছেন লক্ষ্মী। রবিবার রাতেই ফের অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দির বাজারে।

হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের ছোড়া অ্যাসিডে আক্রান্ত হলেন এক মহিলা। তাঁকে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। অ্যাসিড কিনা তাও সন্দেহ রয়েছে। যদিও প্রতিবেশীদের দাবি, ওই তরল অ্যাসিডই ছিল।

বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসত, ব্যারাকপুর মহকুমা জুড়ে কিন্তু অবাধে বিকোচ্ছে অ্যাসিড। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, মজুত এবং বিক্রি হওয়া অ্যাসিডের হিসেবনিকেশ খাতায় লিখে রাখতে হবে বিক্রেতাকে। কিন্তু বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেল দোকানিরা তা করছেন না।

ওই বিষয়ে তাঁদের কোনও সচেতনতাও নেই। কড়ি ফেললেই মুদিখানা, মনোহারি, কিংবা হার্ডওয়্যারের দোকানে মিলছে বোতলবন্দি অ্যাসিড।

প্রশাসন থেকে বিক্রেতাদের সচেতন করতে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘প্রয়োজন মতো আমাদের এখান থেকে অ্যাসিড বিক্রেতাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। কতজনকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, আর তার বাইরে কেউ অ্যাসিড বিক্রি করছেন কিনা, তা দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় যে সব দোকানিরা অ্যাসিড বিক্রি করেন তাঁদের নাম-ঠিকানা তাঁদের কাছে আছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে বনগাঁ থানা এলাকায় অ্যাসিড বিক্রেতাদের শনাক্ত করে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের হিসাব বলছে, বনগাঁতে অ্যাসিড বিক্রেতার সংখ্যা ২৮২ জন। সাধারণ মানুষ কিন্তু বলছেন, বাস্তবে সংখ্যাটা অবশ্য অনেক বেশি। গাইঘাটা থানা পুলিশের তরফে এলাকার বাজার কমিটিগুলোর সঙ্গে কথা বলে বিক্রেতাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।পুলিশের তরফে বিক্রেতাদের তালিকা তৈরি করা হলেও তাঁরা নিয়ম মেনে অ্যাসিড বিক্রি করছেন কিনা, সে বিষয়ে নজরদারি হয় না বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

একই ছবি ধরা পড়েছে টিটাগড়, ব্যারাকপুর, শ্যামনগর, নৈহাটি, কাঁচরাপাড়াতেও। ক্রেতারা বলছেন, নাম-ঠিকানা চাওয়া তো দূরের কথা তাঁদের মুখের দিকে চেয়েও দেখেন না বিক্রেতারা।

রাজ্যে অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে রয়েছে সেভ ডেমোক্র্যাসি নামে একটি সংগঠন। তাঁরা অ্যাসিড আক্রান্তদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছে। সেভ ডেমোক্র্যাসির সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, অ্যাসিড বিক্রেতার নির্দিষ্ট লাইসেন্স থাকতে হবে। ক্রেতার নাম পরিচয় লিখে রেখে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে রাখতে হবে। ক্রেতার পরিচয়পত্র দেখতে হবে।

কেন অ্যাসিড কিনছেন, তাও লিখে রাখতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু বাস্তবে আমাদের এখানে ওই নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনিক নজরদারিও নেই। অ্যাসিডের যথেচ্ছ বিক্রি বন্ধ না হলে অ্যাসিড হামলার ঘটনায় লাগাম দেওয়া যাবে না।’’

সম্প্রতি জেলায় বেশ কয়েকজন অ্যাসিড বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিছুদিন আগে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে অ্যাসিড ছুড়েছিল। স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ জানতে পারে এক মুদিখানা থেকে সে তা কিনেছিল। পুলিশ দোকানিকে গ্রেফতার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Illegal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE