Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বুথে ঢুকে মার ভোট কর্মীকেই

ভোটকেন্দ্রের দরজা বন্ধ করে তখন ভিতরে বসে কাঁপছেন ভোটকর্মীরা। একটা সময়ে গোলমালটা একেবারে বন্ধ দরজার বাইরে এসে পড়ে।

জখম: পোলিং অফিসার। নিজস্ব চিত্র

জখম: পোলিং অফিসার। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০২:১৭
Share: Save:

ভোটের দিন রাজনৈতিক কর্মীরা আক্রান্ত। আক্রান্ত পুলিশ। বাদ পড়েননি ভোটকর্মীরাও।

যেমন হাসনাবাদের বাসিন্দা এক ফার্স্ট পোলিং অফিসার। বাঁশের ঘা পড়েছে হাতে। রক্তাক্ত যুবককে চিকিৎসা করাতে হয়েছে হাসপাতালে। সেক্টর অফিস এবং বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।

অমিত বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত) জানালেন সোমবারের অভিজ্ঞতার কথা। ডিউটি পড়েছিল হিঙ্গলগঞ্জের একটি বুথে। অমিত জানান, সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল। বাইরে গোলমাল ক্রমে বাড়ছিল। হঠাৎ মুখে কাপড় বেঁধে ৫-৭ জন যুবক আসে এলাকায়। তা দেখে উত্তেজনা বাড়ে। দু’পক্ষের মধ্যে ঢিল-পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।

ভোটারেরা একে একে তখন বাড়ির পথ ধরেছেন। দুষ্কৃতীরা এক পুলিশ কর্মীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এরপরে একজন মাত্র পুলিশ কর্মী এবং একজন সিভিক ভলান্টিয়ারও এলাকা ছাড়েন। দু’পক্ষের লাঠালাঠি শুরু হয়ে যায়। বোমা পড়তে থাকে।

ভোটকেন্দ্রের দরজা বন্ধ করে তখন ভিতরে বসে কাঁপছেন ভোটকর্মীরা। একটা সময়ে গোলমালটা একেবারে বন্ধ দরজার বাইরে এসে পড়ে। দরজায় লাথি-ঘুষি পড়তে থাকে। ‘‘দরজা খোল, না হলে জানে মেরে দেবো’’— উড়ে আসে হুমকি। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে এক দল দুষ্কৃতী।

অমিত বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকে পড়ে বাঁশের বাড়ি মারল ব্যালট বাক্সে। ভেঙে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল ব্যালট।’’ ‘‘এমন করবেন না’’— অনুরোধ করতে সবে মুখ খুলেছিলেন অমিত। ওই সামান্য কথাতেই দুষ্কৃতীদের মেজাজ চড়ে যায়। অমিত লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা তাঁকে বাঁশ দিয়ে পেটায়। মাথা সরিয়ে নেন কোনও মতে। আঘাত লাগে হাতে। আরও দু’ঘা বাঁশের বাড়ি পড়ে সেখানে।

ততক্ষণে খবর গিয়েছে সেক্টর অফিসে। কিন্তু পুলিশ পৌঁছয়নি। পুলিশ যখন আধ ঘণ্টা পরে এল, ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। সেক্টর অফিস থেকে আধিকারিক এবং পুলিশ গিয়ে ভোটকর্মীদের উদ্ধার করে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, মারধর, বুথে হামলার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অমিতের কথায়, ‘‘ভোটের কাজ করতে গিয়ে হাতে এমন আঘাতের চিহ্ন নিয়ে ফিরতে হবে ভাবিনি। মাথাটা কোনও মতে বেঁচেছে। না হলে যে কী হত!’’

বাড়ি ফিরে টিভির খবরে দেখেছেন, রাজ্যের নানা প্রান্ত কী ভাবে রক্তাক্ত হয়েছে ভোটের দিন। ওই ভোটকর্মী বলেন, ‘‘এই ভোটের সত্যি কোনও মানে হয় না। যেখানে ভোটকর্মীদেরই নিরাপত্তা নেই, সেখানে ভোটাররা কতটা আতঙ্কিত, তা অনুমান করা শক্ত নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poling Officer West Bengal Panchayat Election 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE