Advertisement
০৪ মে ২০২৪
ঘোষণা তৃণমূল নেতাদের

একটি পঞ্চায়েতও ছাড়ব না

হাবড়াতে দলীয় এক বৈঠকে যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, ‘‘জেলাতে একটিও পঞ্চায়েত বোর্ডও যাতে বিজেপি গঠন করতে না পারে, সে জন্য যা যা করার প্রয়োজন, আমরা তা করছি। জয়ী নির্দলদের আমরা দলে ফিরিয়ে নিচ্ছি।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতে বিজেপি যাতে একটিও গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গড়তে না পারে, সেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তৃণমূল। এই জন্য দলের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রাথী হিসাবে যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

হাবড়াতে দলীয় এক বৈঠকে যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, ‘‘জেলাতে একটিও পঞ্চায়েত বোর্ডও যাতে বিজেপি গঠন করতে না পারে, সে জন্য যা যা করার প্রয়োজন, আমরা তা করছি। জয়ী নির্দলদের আমরা দলে ফিরিয়ে নিচ্ছি।’’

খাদ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরে জেলা বিজেপি নেতৃত্বও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে তাঁরা জেলার যে ক’টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে, সেগুলোতে বোর্ড গঠন করবে বিজেপি-ই। দলের বারাসত জেলার সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বনগাঁ মহকুমাতে আমরা চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছি। সেগুলোতে আমরা পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করবই। কাউকে ছেড়ে কথা বলব না।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার মধ্যে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে বনগাঁ মহকুমাতে বিজেপি চারটি (সিন্দ্রাণী, চৌবেড়িয়া-২, কোনিয়ারা-২ ও ধর্মপুর-২) গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে (জলেশ্বর-১) ‘টাই’ হয়েছে। আরও কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে যদি নির্দল ও বিরোধীরা বিজেপিকে সমর্থন করে তাহলে বিজেপির বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত বোর্ড দখল করার সম্ভবনা রয়েছে।

বিজেপির জেতা চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। যেমন, চৌবেড়িয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৮টি। তৃণমূল পেয়েছে ৭টি আসন। আবার কোনিয়ারা গ্রাম পঞ্চায়েতের চোদ্দোটি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৯টি আসন। তৃণমূল ৩টি, কংগ্রেস ও সিপিএম একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্যের পরে এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কী ভাবে দখল করতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপির জয়ী প্রার্থীরা দল পরিবর্তন না করলে তৃণমূলের পক্ষে এই বোর্ড গঠন করা সম্ভব নয়।

পাশাপাশি, ধর্মপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৮টি আসন। তৃণমূল ৬টি ও নির্দল ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। সিন্দ্রাণী গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১১টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ১৩টি। নির্দল প্রাথীরা ২টি আসন পেয়েছে। ফলে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন ছাড়া ওই সব পঞ্চায়েত তৃণমূল অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। নির্দল প্রাথীরা তৃণমূলকে সমর্থন করলেও বিজেপি-র সঙ্গে তাঁদের আসন সংখ্যা সমান হচ্ছে। তাই এই সব জায়গাতেও কী করে তৃণমূল বোর্ড গড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জলেশ্বর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চোদ্দোটি আসনের মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপি পেয়েছে ৬টি করে আসন। নির্দল পেয়েছে ২টি আসন। রণঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের চব্বিশটি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১১টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ৯টি আসন। সিপিএম ও নির্দল পেয়েছে ৪টি আসন। ফলে ওই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে যদি নির্দল ও সিপিএম বিজেপিকে সমর্থন করে তা হলেই বিজেপির পাল্লা ভারী হতে পারে।

তবে জয়ী সব নির্দল প্রার্থীরা তৃণমূল থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন এমন নয়। অনেক নির্দল প্রার্থী বামদের বা কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েও জয়ী হয়েছেন। তাই জেলা তৃণমল নেতৃত্ব কংগ্রেস ও সিপিএমের জয়ী প্রার্থীদের জন্যও দরজা খোলা রাখছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘সিপিএম বা কংগ্রেসের কোনও জয়ী প্রার্থী আমাদের দলে আসতে চাইলে, আবেদন করতে হবে। রাজ্য কমিটি অনুমতি দিলে, আমরা তাঁদের দলে নিতে পারি।’’

এ ব্যাপারে কী বলছে সিপিএম? সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েত গঠনের ক্ষেত্রে আমরা বিজেপি বা তৃণমূল কাউকে সমর্থন করব না। দলের নির্দেশ অমান্য করলে, তাঁদের বিরুদ্ধে দল শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Elections 2018 TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE