—ফাইল চিত্র।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ইসরো। দেশের চন্দ্রাভিযানেও তাঁরা সামিল।
নিম্নবিত্ত পরিবারের হয়ে এই পথ পেরোনোটা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু নিজেদের জেদ এবং অধ্যবসায়ের জেরে সেটাই করে দেখিয়েছেন দেগঙ্গার আমিনুর হোসেন ও ভাঙড়ের মলয় দাস। ভারতের চন্দ্র-জয়ের সেনানীদের তালিকায় রয়েছেন
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই
দুই কৃতীও।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী আমিনুর। তাঁর বাবা জলিল মণ্ডল পেশায় চাষি। মা হোসনেয়ারা বিবি গৃহবধূ। তাঁদের দুই সন্তান। আর্থিক সঙ্গতি তেমন না থাকলেও আমিনুরকে সবসময় পড়ায উৎসাহ দিয়েছেন তাঁরা। গণিত নিয়ে পড়াশোনা করে আমিনুর নিজের জায়গা করে নিয়ে ইসরোতে। চন্দ্রযান-৩ এর গতি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ দলের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন আমিনুর। ওই যানের গতিবেগের ডাটা প্রসেসিংয়ের কাজের দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরে।
পড়াশোনোর ফাঁকে বাবার সঙ্গে মাঠে গিয়ে চাষের কাজও করেছেন আমিনুর। দেগঙ্গার নিরামিষা গ্রামের রায়পুর নিরামিষা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। বেড়াচাঁপা দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক। এরপরে গণিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন বারাসতের সরকারি কলেজে। ২০১৩ সালে বিএসসি পাশ করার পর এমএসসি পড়তে ভর্তি হন খড়্গপুর আইআইটি-তে। ২০১৫ সালে এমএসসি পাশ করেন। ২০১৬ সালে ইসরো-র সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসে ৮৮ র্যা ঙ্ক করেন আমিনুর। ২০১৭ সালে বিজ্ঞানী হিসাবে যোগদান করেন ইসরো-তে।
আমিনুরের বাবা-মা বর্তমানে থাকেন দেগঙ্গার গান্ধীনগরে। বুধবার বিকেল হতেই ল্যান্ডর বিক্রমের চাঁদে অবতরণ দেখতে পড়শির বাড়ির টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন তাঁরা। মা হোসনেয়ারা বলেন, ‘‘শুধু আমার ছেলে নয়, গোটা টিমের পরিশ্রমের জন্যই আমাদের দেশের মাথা উঁচু হয়েছে। ওরা আরও উন্নতি করুক, এই প্রার্থনা করি।’’ আমিনুর বলেন, ‘‘কষ্ট করে পড়াশোনা করে আজ ইসরোয় গবেষণা করছি। দেশের এই সাফল্যে যুক্ত থাকতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’’
আমিনুরের সাফল্যে বারাসত সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিশীথচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘গোটা দেশ থেকে গণিত থেকে দু’জন সুযোগ পেয়েছিল ইসরো-য়। আমিনুর তাঁদের একজন। অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করেও যে আকাশ ছোঁয়া যায়, আমিনুর তার প্রমাণ।’’
ভাঙড় ১ ব্লকের বোদরা গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে মলয় দাসও এই মিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা বলাইচন্দ্র দাস, মা শ্যামলী। বলাইবাবু পেশায় ট্রাক্টর মিস্ত্রি। চাষের কাজও করেন। তাঁর তিন ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে মলয় তৃতীয়।
বিক্রমের চাঁদে অবতরণের পরে ইসরো-র মূল কমান্ড সেন্টারে দেশের জাতীয় পতাকা তুলে ধরেন মলয়। বছর তিরিশের মলয় ইসরো-র টেলিমেট্রি ট্র্যাকিং ও কমান্ড নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত। মলয় ২০১২ সালে বিজ্ঞান নিয়ে বোদরা হাই স্কুল থেকে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৫ সালে গড়িয়া দীনবন্ধু অ্যান্ডুজ় কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন। এরপর গৃহশিক্ষকতা শুরু করেন। পরে তিনি বোদরা পঞ্চায়েতে গ্রামীণ রোজগার সেবকের কাজে যুক্ত হন। ২০১৭ সালে বোদরার নাওরা ললিত মোহন এফপি স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন। পরের বছরের ডিসেম্বরে তিনি ইসরোতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বেঙ্গালুরুতে সস্ত্রীক থাকেন।
মলয় বলেন, ‘‘চন্দ্রযান ২ মিশনের ছ’মাস আগে এখানে কাজে যোগ দিই। ওই মিশন সম্পূর্ণ সফল হয়নি। চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য আমাদের
সমস্ত পরিশ্রমকে সার্থক করেছে।’’ মলয়ের মা শ্যামলী বলেন, ‘‘আমরা গর্বিত। ওরা এ ভাবেই দেশের নাম উজ্জ্বল করুক এটাই চাই।’’ অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছে ভাঙড়ের ওই কৃষক পরিবার। বহু মানুষ ফুল-মিষ্টি নিয়ে তাঁর বাবা-মাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মলয়ের গ্রামের বাড়িতে।
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় মলয়ের এই সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ভাঙড়ের বাসিন্দা তরুণ সাদ্দাম দপ্তরি বলেন, ‘‘খবরের কাগজে ভাঙড়ের বদনামই বেশি থাকে। বলা হয় ভাঙড় সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর। মলয়ের কৃতিত্বে আমাদের এলাকার সুনাম বাড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy