Advertisement
০৫ মে ২০২৪
এলাকায় সংক্রমণ ছড়ানোয় আপাতত বন্ধ প্ল্যাটফর্মে রান্না
Mathurapur

ভবঘুরের জন্য হাতা-খুন্তি ধরেন শম্ভু-পার্থরাও

দিন কয়েক আগে মথুরাপুর স্টেশনে ডিউটি করার সময় এই দৃশ্য দেখে চমকে যান বারুইপুর রেল পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার পার্থ হালদার।

উদ্যোগ: দেড় মাস ধরে এ ভাবেই খাওয়ানো হয়েছে স্টেশনে

উদ্যোগ: দেড় মাস ধরে এ ভাবেই খাওয়ানো হয়েছে স্টেশনে

দিলীপ নস্কর
মথুরাপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০২:৩৯
Share: Save:

লকডাউনের জেরে বন্ধ ট্রেন। খোলেনি দোকানপাট। খাঁ খাঁ প্ল্যাটফর্মে খিদের জ্বালায় ছটফট করছিলেন এক ভবঘুরে। একটু খাবারের আশায় আতিপাতি করে খুঁজছিলেন স্টেশন চত্বরে পড়ে থাকা বিস্কুট, রুটির খালি প্যাকেটগুলিই।

দিন কয়েক আগে মথুরাপুর স্টেশনে ডিউটি করার সময় এই দৃশ্য দেখে চমকে যান বারুইপুর রেল পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার পার্থ হালদার। ওই প্ল্যাটফর্মে রাত কাটানো কয়েকজন ভবঘুরের জন্য প্রাথমিক ভাবে কিছু শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি।

কিন্তু টানা লকডাউনে ওই সামান্য শুকনো খাবার কোনও কাজে দেবে না, এ কথা ভেবেই বন্ধু শম্ভুনাথ সাকারির সঙ্গে পরিকল্পনা করে প্ল্যাটফর্মেই রান্নার ব্যবস্থা করেন পার্থ। সাহায্যের হাত বাড়ান আরও অনেকে।

তারপর থেকে প্রায় মাসখানেক ধরে স্টেশন চত্বরে নিয়মিত রান্না হচ্ছে। খাচ্ছেন প্রায় ৮০-৯০ জন। তবে এলকায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় গত কয়েক দিন ধরে কাজ বন্ধ।

২৫ মার্চ থেকে রান্না শুরু করেন পার্থরা। প্ল্যাটফর্মে রাত কাটানো মানুষগুলোর দুর্দশা সহ্য করতে না পেরে সে দিন দুপুরে বাড়ি থেকে স্টোভ আর রেশনে পাওয়া চাল এনে রান্নার তোড়জোড় শুরু করেন পার্থ। প্ল্যাটফর্মে দোকান চালিয়ে দিন কাটানো শম্ভু আনেন আনাজপাতি। ভাত, ডাল, আনাজ রান্না করে দু’জন মিলে প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরেদের পেট ভরে খাওয়ান। ধীরে ধীরে রেল কলোনি থেকে মহিলা, শিশু ও ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটানো মানুষরাও শিবিরে আসতে শুরু করেন।

অভুক্ত মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকায় খাবারের জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান দুই বন্ধু। তবে হাল ছাড়েননি। দুই যুবকের খাওয়ানোর খবর তত দিনে এলাকায় রটে গিয়েছে। আশেপাশের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়ান। কেউ চাল, কেউ ডাল, কেউ আনাজপাতি দিয়ে সাহায্য করেন। সাহায্যের হাত বাড়ান প্ল্যাটফর্মের হকাররাও। তাই দিয়েই আপাতত রোজ পেট ভরছে দুঃস্থ মানুষগুলোর। প্রতিদিন বিকেল চারটে থেকে রান্না শুরু হচ্ছে। সন্ধে সাতটা থেকে প্ল্যাটফর্মে লাইন করে বসিয়ে শুরু খাওয়ানো হয়েছে।

পার্থ ও শম্ভু বলেন, “অভুক্ত মানুষের সংখ্যা যতই বাড়ুক না কেন এই কাজ চালিয়ে যাবার চেষ্টা করব। অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পরে অনেকে মাছ-মাংসও দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এলাকায় সংক্রমণ ছড়ানোয় আপাতত কাজ বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mathurapur Civic Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE