বাঁ দিক থেকে পারমিতা চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তোষকুমার সামন্ত, প্রভা প্রামাণিক। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের মধ্যে বিশাল নীল-হলুদ দোতলা বাড়ি। যাকে ঘিরে গাইঘাটা থানার বড়া গ্রামের বাসিন্দাদের কৌতূহল অপরিসীম। জানলায় কালো কাচ দেওয়া থাকায় বাইরে থেকে বিশেষ কিছু দেখে যেত না। সেটাই বাড়িয়েছিল কৌতূহল। তা ছাড়া, বাড়ির মালিক তপনকুমার বিশ্বাসের কাজকর্ম ঘিরেও নানা সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। বুধবার সিআইডি-পুলিশের দল ওই বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরে সেই গুঞ্জনই এখন শোরগোলের চেহারা নিয়েছে। জানা গিয়েছে, শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল তপনকুমার নামে ওই চিকিৎসক। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি।
গ্রামবাসীদের অনেকে জানালেন, স্থানীয় এক চিকিৎসকের সহকারী হিসাবে এক সময়ে কাজ করত তপন। পরে নিজেই প্র্যাকটিস শুরু করে। দশ-বারো বছর আগেও গ্রামের যে যুবক সামান্য হাতুড়ে চিকিৎসক হিসাবে জ্বর-সর্দি-কাশির মতো সাধারণ রোগের চিকিৎসা করত, সে কী ভাবে রাতারাতি এত টাকা কামালো। কালো কাচে ঢাকা বিশাল বাড়ি, একাধিক গাড়ি, ঠাটবাট— সবই নাকি বদলে গিয়েছিল তপনের। বাড়ির বাইরে নামফলকে লেখা ছিল, বধর্মান ও কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের লম্বা-চওড়া ডিগ্রি। সিআইডি-র দল অপারেশন চালানোর আগেই অবশ্য সরিয়ে নেওয়া হয় সেই বোর্ড। বেপাত্তা তপন নিজেও। তপনের মা সুধারানিদেবী জানালেন, সোমবার রাতে বাড়ি ফিরেছিল ছেলে। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আর ফেরেনি। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে তপন মেজো। তপনের দুই ছেলে। গাইঘাটা থানায় এসে সিআইডি-র অফিসারেরা তপনের স্ত্রী কণিকা ও দাদা কপিলকে জেরা করেছেন।
কিন্তু তপনের আচরণে সন্দিহান ছিলেন আশপাশের মানুষষজন? একে তো এলাকায় তেমন মেলামেশা ছিল না তপনের। তার উপরে, তার বাড়িতে সকাল-রাতের বিভিন্ন সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে প্রসূতি মহিলারা আসতেন। প্রসূতিদের গর্ভপাত যে করানো হতো ওই বাড়িতে, তা এক রকম নিশ্চিত ছিলেন গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা অরুণকুমার বক্সি জানালেন, ওই বাড়ির কাছে ডোবা বা গর্তে অনেকে ভ্রূণ পড়ে থাকতেও দেখেছেন। কথাটা যে খুব ভুল নয়, পুলিশের তল্লাশি সেই তা আরও স্পষ্ট করছে। ভ্রূণ নষ্ট করতে গিয়ে বার দু’য়েক গ্রামবাসীর হাতে মারধরও খেয়েছিল তপন, দাবি গ্রামবাসীর।
আরও জানা গেল, কখনও কখনও নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রসূতিদের নিয়ে কোথাও যেত তপন। গ্রামের এক যুবকের কথায়, ‘‘কোনও কারণ কেস নিজে সামলাতে না পারলে প্রসূতিদের বাদুড়িয়ার ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যেত তপনদা।’’ তা ছাড়া, এলাকার কিছু গাড়ি চালকের সঙ্গে তপনের চুক্তি ছিল। তার কাছে আসা রোগীদের বাদুড়িয়ায় পৌঁছে দিলে ওই গাড়ি চালকদের থেকে কমিশন নিত তপন।
সিআইডি জানতে পেরেছে, বাড়িতে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ নানা অস্ত্রোপচারের নানা সরঞ্জাম আছে তপনের। সেখানে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ণয় হতো বলেও জানাচ্ছেন গ্রামের অনেকে। এক মহিলার কথায়, ‘‘ডাক্তারবাবু আমাকে বলেছিলেন, ওঁর কাছে গেলে পরীক্ষা করে বলে দেবেন, পেটে ছেলে না মেয়ে আছে।’’ মহিলা যাননি শেষ পর্যন্ত, দাবি তাঁর।
অন্য বিতর্কেও জড়িয়েছে তপনের নাম। গ্রামের এক মহিলার অভিযোগ, কয়েক বছর আগে তাঁর কিশোরী মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। আজও খোঁজ মেলেনি। ওই ঘটনায় তপনের নামে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন মহিলা। তার জেলও হয়েছিল।
বাড়িতে নর্মাল ডেলিভারি করাত তপন। সেখানে গ্রামের মহিলারা যেতেন। এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘প্রসবের হাতটা খুব ভাল ছিল ওর। বেশি লোভ করতেই গিয়েই শেষে ডুবল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy