তৃণমূল পরিচালিত মহেশতলা পুরসভা এলাকায় গত পাঁচ বছরেও নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে উঠল না। পুরসভার নিকাশি সমস্যা সমাধানের ভরসা এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!
ফি-বর্ষায় প্রায় তিন মাস পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাই নিকাশির অভাবে জল জমে থাকে। বাসিন্দারা জানান, জল সরতে একমাত্র ভরসা রোদ। কড়া রোদ না উঠলে জল শুকোতে আরও সময় লেগে যায়। অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে নিকাশি খাতে কোনও টাকা খরচ করা হয়নি। পুরকর্তৃপক্ষ জানান, অধিকাংশ ওয়ার্ডে নিকাশি নালা তৈরি করা অসম্ভব। একমাত্র ভূগর্ভস্থ নালাপথ তৈরি ছাড়া নিকাশি পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সেই কারণে নিকাশি খাতে কোনও অর্থ খরচ করা হয়নি।
মহেশতলা পুরসভা সূত্রে খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুকারদের পরামর্শ অনুযায়ী পুরসভার অধীনে ৪৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশির পরিকাঠামোর গড়ে তোলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ওই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে প্রায় ৮৩২ কোটি টাকা প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদান ছাড়া ওই প্রকল্প গড়ে তোলা অসম্ভব। তাই কেন্দ্রীয় সরকারে কাছে ওই অর্থ বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে।
মহেশতলা বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, ‘‘আমাদের ওই পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারে ‘গঙ্গা-অ্যাকশন প্ল্যানে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদানে নিকাশি পরিকাঠামো গড়ে তোলা যাবে।’’ কেন্দ্রের মোদীর সরকারের উপর ভরসায় দুলালবাবু। তাঁর আশা, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের গঙ্গা-অ্যাকশন প্ল্যানের কাজ খুব দ্রুত এগোচ্ছে। আমার মনে হয় মাস ছয়েকের মধ্যেই অর্থ বরাদ্দ হবে। তার পরে নিকাশি পরিকাঠামোর কাজ শুরু হবে।’’
মহেশতলা পুরসভার আদিলগ্ন থেকেই নিকাশি সমস্যায় জেরবার নাগরিকরা। এই পুরসভায় ১৫ বছর বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল। সেই সময়েও অধিকাংশ ওয়ার্ডের নিকাশি সমস্যার সমাধানে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। গড়ে ওঠেনি নিকাশি পরিকাঠামো। গত নির্বাচনে নিকাশি সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েই তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল বলে দাবি পুর-নাগরিকদের। কিন্তু পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও নিকাশি ব্যবস্থার কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। উল্টে নিকাশি খাতে কোনও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ওয়ার্ডের ভিতরের নিকাশি নালার সংস্কারের কাজ হয়নি। ফলে অলিগলির নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
ফি-বর্ষায় পুরসভার ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ এবং ১৯নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায়ই জলের তলায় থাকে। জল জমে পচা গন্ধ ছড়ায়। পুর-নাগরিকদের অভিযোগ, মাসের পরে মাস বাড়িতে হাঁটুজল জমে থাকে। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তা জল থইথই করে। বর্ষার কয়েক মাস আগে থেকেই আসবাবপত্র আত্মীয়ের বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করেন অনেক বাসিন্দা। পচা জল থেকে নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। ওই সময়ে এইসব এলাকায় বসবাস করাই কঠিন হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। এক বাসিন্দা সাগরিকা রায়ের কথায়: ‘‘দীর্ঘ দিন বাড়ি ছেড়ে থাকাও যায় না। ফলে ওই সময়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’’
পুর-নাগরিকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস ক্ষমাপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিকাশি পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারিনি। নাগরিকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য খুব তাড়াতাড়ি নিকাশি পরিকাঠামো তৈরি হবে।’’ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যদি অর্থ বরাদ্দ না করে তা হলে নিকাশি ব্যবস্থা কী ভাবে গড়ে উঠবে? ওই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দেননি দুলালবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy