সাহাবাড়ির পুজো ৯৮ বছরে পড়ল। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
বারো-তেরো বছর বয়সে প্রতিমা তৈরি শুরু করেন সত্যেন্দ্রনাথ। এক চালা কাঠামোয় দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, মহিষাসুর সবই গড়েন। কিন্তু অল্প বয়সে প্রতিমা তৈরি করতে গিয়ে একটু ভুল করে ফেলেছিলেন। ডান দিকের পরিবর্তে দুর্গার বাঁ দিকে রেখেছিলেন গণেশকে। কার্তিককে রেখেছিলেন ডান দিকে। বাংলাদেশের পাবনা জেলার নাটাবেড়িয়া গ্রামে সত্যেন্দ্রনাথের তৈরি সেই প্রতিমাই পরিবারের সদস্যেরা পুরোহিত ডেকে নিয়ম করে পুজো করাতেন। পুরোহিতের নির্দেশেই সেই গণেশ-কার্তিকের অবস্থান ও পরিবর্তন করা হয়নি। ১৯২৩ সাল থেকে ৯৮ বছর ধরে এ ভাবেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে সাহা পরিবারে।
দেশভাগের কয়েক বছর পরে সত্যেন্দ্রনাথ সহ তাঁদের বংশের অনেকেই পূর্ববঙ্গ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। বাংলাদেশে ৩২ বছর পুজো চলার পরে সত্যেন্দ্রনাথের হাত ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের কালবাড়ি এলাকায় শুরু হয় পুজো। এ বার এই পুজো ৯৮ বছরে পড়ল। শুরু থেকে পুজো ঘিরে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে। বাড়ির পুজোয় প্রথমা থেকে ষষ্ঠীতে যেমন বিভিন্ন ধরনের নাড়ু তৈরি করা হয়, তেমনি সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে লুচি পায়েসের ভোগ দেওয়া হয় মায়ের সামনে। এলাকার বাসিন্দারাও একই ভোগ গ্রহণ করেন।
সত্যেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে দীর্ঘ বছর ধরে পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে পুজো সামলাতেন তাঁর ছেলে শিরিশকুমার সাহা। ২০১৫ সালে তিনি মারা যাওয়ার পরে ছেলে বিশ্বেশ্বর পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। পেশায় শিক্ষক বিশ্বেশ্বর জানান, পুজো উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনেরা সকলে আসেন। একটা সময়ে ঘোড়ার গাড়ি করে প্রতিমা দশমীর দিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে তবে বিসর্জন দেওয়া হত। এখন অবশ্য তা হয়ে ওঠে না। পরিবারের সদস্যেরা জানান, প্রতিমা বিসর্জনের পরে কাঠামো ফের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ দেশে দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে সেগুন কাঠের একই কাঠামোয় গণেশ পুজোর ষষ্ঠী থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। এখনও এই বাড়িতে রয়েছে পুজোর আচার-অনুষ্ঠান পালন করার পুরনো পুঁথি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy