দ্রুত-হাতে: নহাটার কুলপুকুর গ্রামে চলছে ধানঝাড়ার কাজ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
শেষের পথে বোরো ধান চাষ মাসের মরসুম। দুই জেলায় ইতিমধ্যেই ধান কেটে ঘরে তুলেছেন চাষিরা। বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা শুনে অনেকে ধান কেটে ফেলেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ধান বিক্রিতে। অভিযোগ, সরকারের তরফে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার কথা থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। ফলে সেই ফড়েদের কাছেই কম দামে ধান বেচতে হচ্ছে চাষিদের। মার খাচ্ছে লাভের অঙ্ক।
কুইন্টাল পিছু প্রায় ২০০০ টাকায় চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে নেওয়ার কথা সরকারের। কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, গ্রীষ্মের ধান কেনার সরকারি প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। ফলে সরকারি মূল্যের অনেক কমেই বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কুইন্টাল প্রতি ১৬০০-১৭০০ টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। অর্থাৎ এক কুইন্টালে প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে চাষির।
কেন এই পরিস্থিতি? চাষিরা জানান, সরকারি মূল্যে ধান কেনার জন্য গ্রামে-গ্রামে শিবির হয়। মাস দু’য়েক আগে সেই শিবির হয়েছে আমন ধান কেনার জন্য। বোরো ধান উঠতে শুরু করলেও বর্তমানে কোনও শিবির হচ্ছে না। এ দিকে, অনেকেই ঋণ নিয়ে চাষবাস করেন। সার-কীটনাশকের দোকানে ধার-বাকি থাকে। তা ছাড়া, গত বছর দু’য়েক নানা কারণে চাষের ক্ষতি হয়েছে। এ বার তাই ধার-দেনার অঙ্ক বেড়েছে। সেই সব ধার শোধ করতে তড়িঘড়ি ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সব থেকে বড় ধানের পাইকারি বাজার রয়েছে রায়দিঘিতে। পাথরপ্রতিমা, সাগর, নামখানা, রায়দিঘি, কুলতলি ও মৈপিঠ এলাকা থেকে ধান নিয়ে এখানে আসেন চাষিরা। বর্তমানে বোরো ধান উঠেছে। সম্প্রতি রায়দিঘি বাজারে গিয়ে দেখা গেল কুইন্টাল প্রতি ১৬০০-১৬৫০ টাকায় ধান বিক্রি করছেন চাষিরা। চাষিরা জানালেন, মাসখানেক ধান মজুত রাখলেও এতটা ক্ষতি হত না। কিন্তু নিরুপায় হয়েই বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। কারণ, চাষের সার, কীটনাশক, জল দেওয়ার ভাড়ার পাম্প মেশিন, ট্রাক্টর খরচ সমস্তটাই বাকিতে হয়। ধান উঠলে দ্রুত সেই টাকা শোধ করতে হয়। ধান বিক্রি না করলে সেই টাকা শোধ করা সম্ভব নয়।
প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়েই এলাকায় শিবির হবে। তার মধ্যে কেউ ধান বিক্রি করে দিতে চাইলে, কিসান মান্ডিতে এসে সহায়ক মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। চাষিদের একাংশের দাবি, দূরত্বের কারণে সব সময়ে কিসান মান্ডিতে যাওয়া সম্ভব হয় না। মান্ডিতে এক সঙ্গে বেশি ধান বিক্রিও করা যায় না। তা ছাড়া, সেখানে ধান বিক্রি করলে হাতে টাকা পেতে সময় লাগে। ফলে ক্ষতি হলেও, ফড়েদের কাছেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন তাঁরা। অনেকে জানান, সরকারের তরফে সব রকমের ধান কেনাও হয় না। ফলে সেই সব ধান বিক্রি করতে এখনও ফড়েরাই ভরসা গাঁয়ে-গঞ্জের চাষিদের। হাতে দ্রুত টাকা চাই তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy