Advertisement
০২ মে ২০২৪

খুন করে ঝোলানো হয়েছে, অভিযোগ বাবার

ফ্লাড সেন্টারের মধ্যে থেকে সোমবার সন্ধ্যায় ঝুলন্ত অবস্থায় যে কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, রাতেই তার পরিচয় জানতে পারল পুলিশ।

এই গেটেই ঝুলছিল দেহ।

এই গেটেই ঝুলছিল দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:১৭
Share: Save:

ফ্লাড সেন্টারের মধ্যে থেকে সোমবার সন্ধ্যায় ঝুলন্ত অবস্থায় যে কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, রাতেই তার পরিচয় জানতে পারল পুলিশ।

তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, কাকদ্বীপের বুদ্ধপুরে ওই ঘটনায় উদ্ধার হওয়া দেহ সুদীপ গুড়িয়ার (১৭)। কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর কুমরনারায়ণ হাইস্কুল থেকে এ বছরই উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল তার। আদতে নামখানার হরিপুরের বাসিন্দা ওই কিশোর গত দু’বছর ধরে থাকত কাকদ্বীপ হাসপাতালের উল্টো দিকে একটি হস্টেলে।

সোমবার সেখান থেকেই প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফ্লাড সেন্টারের সিঁড়ির গ্রিলের গেটে তার গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত দেহ মেলে। ওই সেন্টারে একটি স্কুলের কাজকর্ম চলে। দুপুরের পরে সকলে চলে গিয়েছিলেন।

এ দিকে, ছেলেকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন থানায় অভিযোগ করেছেন তার বাবা স্বদেশবাবু। তবে নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ নেই তাঁর। পুলিশ জানায়, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য দেহ কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

সুদীপ। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

কেন ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছেন স্বদেশবাবু? তাঁর দাবি, ছেলের বুকে চাপ চাপ রক্ত জমাট বাঁধার দাগ দেখেছেন তিনি। হস্টেল কর্তৃপক্ষ এবং আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন। স্বদেশবাবু এ দিন জানান, ছেলে যে সোমবার দুপুরের পর থেকে হস্টেল থেকে নিখোঁজ, তা তাঁকে জানাননি হস্টেল কর্তৃপক্ষ। অন্য সূত্রে সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ তিনি সেই খবর পান। তারপরে এসে কথা বলেন হস্টেলে। স্বদেশবাবু বলেন, ‘‘ছেলেকে যে পাওয়া যাচ্ছে না, তা কেন আমাকে সরাসরি ফোনে জানানো হল না? থানাতেও অভিযোগ করা হল না!’’ কেন হস্টেলে নিরাপত্তা রক্ষী নেই, তা নিয়েও ক্ষোভ জানান তিনি। স্বদেশবাবু জানান, সন্ধের পরে থানা-পুলিশ করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এক কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়েছে। রাতের দিকে সেটি নিজের ছেলের বলে সনাক্ত করেন।

হস্টেল কর্তৃপক্ষের দাবি, সন্ধের দিকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল স্বদেশবাবুর সঙ্গে। কিন্তু মোবাইলে পাওয়া যায়নি তাঁকে। হস্টেল কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছেন, সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বলে এখন স্কুলে ক্লাস কম হচ্ছে। বেলা সাড়ে ১১টায় দুপুরের খাওয়া সারার পর থেকে আর দেখা যায়নি সুদীপকে। কিন্তু সেটা জানাজানি হতে হতে বেলা আড়াইয়ে বেজে যায়। সে সময়ে হস্টেলে কোচিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। সেখানে আসেনি সুদীপ। সন্ধ্যা ৬টায় প্রার্থনার সময়েও ফেরেনি। তখনই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল।

হস্টেলটির মালিক স্থানীয় তৃণমূল নেতা পরমেশ্বর মণ্ডলের। তিনি বলেন, ‘‘হস্টেল সুপার এবং শিক্ষকেরাই ছেলেদের খেয়াল রাখেন। সে জন্য আলাদা নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়নি।’’ হস্টেল সুপার সুশান্ত শাসমল জানান, ছেলেরা যখন বাইরে যায়, বলেই যায়। কখনও কখনও হয় তো জানায় না। সুদীপ অবশ্য হস্টেল থেকে না জানিয়েই বেরিয়েছিল বলে তাঁর দাবি। কিন্তু নিখোঁজ ডায়েরি হল না কেন? হস্টেল কর্তৃপক্ষের দাবি, খোঁজাখুঁজি চলছিল। রাতের দিকে অভিযোগ জানানোর কথা ভাবা হয়েছিল।

হস্টেলের দোতলার ঘরে কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে থাকত সুদীপ। কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘরে মোবাইল রাখার অনুমতি দেন না তাঁরা। যদিও সুদীপের এক সহপাঠীর কথায়, ‘‘স্যারের অনুমতি নিয়েই সুদীপ সম্প্রতি একটি দামী মোবাইল সেট ব্যবহার করছিল। কাকতালীয় ভাবে সোমবার সকাল থেকে সেটি খুঁজে পাচ্ছিল না। তা নিয়ে আফসোস করছিল।’’ সহপাঠীদের দাবি, হাসিখুশি সুদীপ মাসখানেক ধরে খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। এ সব সূত্রই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কেন সে ফ্লাড সেন্টারে পৌঁছল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muder Hanged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE