Advertisement
২৩ মে ২০২৪

গৃহশিক্ষকের খরচ চালাতে পারেনি ফিরোজের পরিবার

কখনও বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেছে সে। আবার কখনও ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করেছে। সংসারের অভাব দূর করতে বাবা-মায়ের পাশে সব সময়ে দাঁড়িয়েছে ছেলেটি। কিন্তু পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছে ক্যানিঙের হাওড়ামারি হাইস্কুলের ছাত্র ফিরোজ মোল্লা। এ বারে মাধ্যমিকে ৫৯৪ নম্বর পেয়ে ব্লকের মধ্যে সেরা হয়েছে।

ফিরোজ মোল্লা ও মেহেবুব মোল্লা

ফিরোজ মোল্লা ও মেহেবুব মোল্লা

নিজস্ব সংবাদদাতা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

কখনও বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেছে সে। আবার কখনও ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করেছে। সংসারের অভাব দূর করতে বাবা-মায়ের পাশে সব সময়ে দাঁড়িয়েছে ছেলেটি। কিন্তু পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছে ক্যানিঙের হাওড়ামারি হাইস্কুলের ছাত্র ফিরোজ মোল্লা। এ বারে মাধ্যমিকে ৫৯৪ নম্বর পেয়ে ব্লকের মধ্যে সেরা হয়েছে।

এক চিলতে মাটির বাড়িতে দুই ভাই, এক বোন ও বাবা মায়ের সঙ্গে থাকে ফিরোজ। বাবা ফরেজ মোল্লা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। যা আয় তাতে সারা মাস সংসারই ঠিকমতো চলে না। তারপরে ছেলের পড়াশোনার খরচ কোথা থেকে জোগাড় হবে তা নিয়ে চিন্তায় এখন ফিরোজের পরিবার। মেধাবী ছেলেটি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় সে। তার কথায়, ‘‘গ্রামে কোনও ভাল চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক হয়ে গ্রামের লোককে বিনা পয়সায় পরিষেবা দেওয়ার ইচ্ছা।’’

মাধ্যমিকেও তার কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। একজন অঙ্কের শিক্ষক তাকে পড়া দেখিয়ে দিতেন মাত্র। প্রথম দিকে একজন ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন ঠিকই। কিন্তু টাকার অভাবে তাঁকেও মাঝপথে ছাড়িয়ে দিতে হয়েছে। অবসর সময়ে শরৎচন্দ্রের লেখা বই পড়ে ফিরোজ। ক্রিকেট খেলতেও পছন্দ করে। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে কম্পিউটার শেখে। মা জাহানারা বিবি বলেন, ‘‘আমাদের আর্থিক অবস্থার কথা জেনে ফিরোজ কোনও কিছুর জন্য কখনও জেদ করেনি। কিন্তু এ বার কী ভাবে ওর স্বপ্ন পূরণ করব বুঝতে পারছি না।’’

ওই স্কুল থেকেই এ বার মাধ্যমিকে ৫০৮ পেয়েছে মেহেবুব মোল্লা। তার বাবা ছাম্মাদ মোল্লা দিনমজুরের কাজ করেন। মা সানজিরা বিবি গৃহবধূ। পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। বাবা কলকাতায় কাজে গেলে বাবার বদলে লোকের জমিতে চাষের কাজ করে মেহেবুব। তার মধ্যেও দিনে ৮-১০ ঘণ্টা পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। পরীক্ষার আগে একজন গৃহশিক্ষক তাকে বিজ্ঞান বিভাগটা দেখিয়ে দিতেন বলে জানাল মেহেবুব। ছোট থেকেই তার স্বপ্ন পুলিশ অফিসার হওয়ার। কিন্তু অভাব এখন পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেহেবুবের কথায়, ‘‘গ্রামের মানুষের নিরাপত্তা দিতে এবং তাদের পাশে থাকতে আমি একজন পুলিশ অফিসার হতে চাই। তবে কী ভাবে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE