Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

জলসা থেকে বেরিয়ে আগুন নেভাল শ্রোতা

মঙ্গলবার রাত তখন সাড়ে ১২টা। উৎসবের মরসুমের শেষবেলায় জলসার শেষ গানটা ধরেছেন শিল্পী। অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো...। দেশাত্মবোধক গানের সুরটুকু গুনগুন করতে জনতা বাড়ি ফিরবে ফিরবে করছে। হঠাৎ চোখে পড়ল আগুন।

তখনও আয়ত্তে আসেনি পরিস্থিতি। মঙ্গলবার রাতে ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

তখনও আয়ত্তে আসেনি পরিস্থিতি। মঙ্গলবার রাতে ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৫
Share: Save:

মঙ্গলবার রাত তখন সাড়ে ১২টা। উৎসবের মরসুমের শেষবেলায় জলসার শেষ গানটা ধরেছেন শিল্পী। অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো...। দেশাত্মবোধক গানের সুরটুকু গুনগুন করতে জনতা বাড়ি ফিরবে ফিরবে করছে। হঠাৎ চোখে পড়ল আগুন।

বাগদা থানার আমডোব বাজারে কালীপুজো উপলক্ষে মিলন সঙ্ঘ ক্লাবের পক্ষ থেকে বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আগুন দেখে নিমেষে বদলে গেল পরিবেশটা।

কাছেই একটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান দাউ দাউ করে জ্বলছিল। আশপাশের দোকান, বাড়িও গিলে নিতে চাইছে গনগনে শিখা। আতঙ্কে অনেকে চিৎকার শুরু করেছেন।

কিন্তু অতি বড় বিপদের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা কিছু লোক খুঁজে পাওয়া যায়। ক্লাব সদস্যদের কেউ কেউ বুঝে নেন, যে ভাবেই হোক আগুনের মোকাবিলা করতে হবে সকলকে নিয়ে। না হলে আরও বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। দমকলকে খবর দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু ২৫ কিলোমিটার দূরে বনগাঁ শহর থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসতে আসতে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে এলাকার বহু দোকান, বাড়ি। কাজেই যা করতে হবে নিজেদেরই, বুঝে নেন এলাকার সেই সব মাথা ঠান্ডা, বিচক্ষণ মানুষজন।

ক্লাবের ছেলেরাই শুরুতে হাল ধরেন। সঙ্গে পেয়ে যান দর্শকদের একটা বড় অংশকেও। সকলে লেগে পড়েন আগুন নিয়ন্ত্রণে। যাঁরা অত রাতে শুয়ে পড়েছিলেন, তাঁরাও অনেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন হইচই শুনে। বাতলি, ঘটি, মগে করে জল এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু হয়। পাশের একটি বাড়িতে ছোট একটি জলের মোটর ছিল। তাতে পাইপ সেট করেও জল ঢেলে আগুন নেভানোর কাজ চলতে থাকে।

স্থানীয় ইমারতি ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ঘোষের বালি মজুত করা ছিল। সেই বালিও ছেটানো হতে থাকে আগুনের উপরে। তবে বিজন চন্দ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের দোকানটি বাঁচানো যায়নি। মুড়ি বাঁশের বেড়া আর টিনের ছাউনির ছোট্ট দোকান পুড়ে যেতে বেশি সময়ও নেয়নি। তবে বেঁচে গিয়েছে পাশেই বাসুদেব ঘোষের মিষ্টির দোকান। পাটের বস্তা ভিজিয়ে এনে ফেলা হয়েছিল সেখানে। বাসুদেববাবু এলাকায় ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। পরে গ্রামবাসীদের ভূমিকা শুনে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাসুদেব।

বাদল ঘোষের বাড়িও গ্রাস করে ফেলেছিল আগুন। তিনি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। পরিবারের বাকিদের বাইরে বের করেন। তবে তাঁর হাতে আগুনের ছ্যাঁকা লেগেছে। গ্রামবাসীদের তৎপরতায় বাড়িটির আংশিক ক্ষতি হলেও বড়সড় বিরদ এড়ানো গিয়েছে।

তবে আগুন নেভানোর কাজ করতে নিয়ে বিশ্বনাথ দাস ওরফে নিতাই নামে এক ব্যক্তি জখম হয়েছেন। তাঁর মুখ ঝলসে গিয়েছে। কিন্তু তাতেও যেন ভ্রূক্ষেপ নেই। আগুন আয়ত্তে আনতে পেরে গর্বিত নিতাই।

আগুণ লাগার খবর পেয়ে বনগাঁ শহর থেকে রাত ১টার পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন পৌঁছয়। আগুন যেটুকু বাকি ছিল, তারা জল ঢেলে নিভিয়ে দেন। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে অনুমান পুলিশ ও দমকলের। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তারা।

মিলন সঙ্ঘ ক্লাবের কর্তা গণেশ ঘোষ বলেন, ‘‘আমডোব বাজারে প্রায় দেড়শো দোকান ঘর আছে। রাতে যদি অনুষ্ঠান না থাকত, তা হলে এলাকায় মানুষজন এত রাতে বাইরে থাকতেনও না। তা হলে যে কী ঘটে যেত, ভাবলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি সকলে।’’ সকলে মিলে আগুন নেভাতে পেরে তিনিও উচ্ছ্বসিত।

গ্রামের মানুষ যে ভাবে এককাট্টা হয়ে আগুনের মোকাবিলা করেছেন, তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও গ্রামের মানুষ বিপদের ঝুঁকি নিয়ে একজোট হয়ে কাজ করেছেন, তা প্রশংসনীয়।’’ মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, বাগদা এলাকা একটি দমকল স্টেশন তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। গ্রামের মাধ্যমিক পাস করা ছেলেরা যদি আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ নিতে চান, তা হলে প্রশাসন তারও ব্যবস্থা করে দেবে।

অন্য বিষয়গুলি:

fire puja pandal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE