ফেরা: খুশি আবদুল্লাহ
সবে সন্ধে হয়েছে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে দরজা খুললেন বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। দেখলেন অপরিচিত কয়েকজন দাঁড়িয়ে।
‘কে আপনারা?’ জিগ্যেস করার আগেই যাঁরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন ওই ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরলেন। কোনও রকমে বললেন, ‘বাবা, আমি বাড়ি খুঁজে পেয়েছি’!
কুড়ি বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলে অবশেষে ফিরল বাড়িতে। ততক্ষণে হারানো-ছেলের মা-ও এসে দাঁড়িয়েছেন দরজায়। তিনিও জেনে গিয়েছেন কী ঘটেছে। আবেগ দলা পাকিয়েছে সকলে গলার কাছে। চোখে জল।
রবিবার বসিরহাটের নলকোড়ার ঘটনা। নলকোড়ার বাসিন্দা কাসেদ মণ্ডলের সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় আব্দুল্লাহ। বয়স তখন তার বছর আটেক। উত্তরপ্রদেশের এক মাদ্রাসায় মামার সঙ্গে পড়তে গিয়েছিল সে। বছরখানেক পড়াশোনা করে। তার পর এক দিন সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। মাদ্রাসাটা উত্তরপ্রদেশের কোথায়, তা এখন মনেও করতে পারেন না আবদুল্লাহ।
মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে পথ হারানো আবদুল্লাহ কখনও স্টেশনে, কখনও বাসস্ট্যান্ডে, কখনও ফুটপাতে রাত কাটায়। অবশেষে এক দিন দিল্লি পুলিশের সহযোগিতায় তার ঠাঁই হয় হোমে। সেখানে থেকেই পড়াশোনা করে বড় হয় আব্দুল্লাহ। বর্তমানে সে উত্তরপ্রদেশে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত।
কেন বেরিয়েছিল মাদ্রাসা থেকে?
আব্দুল্লাহের কথায়, পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না পেরেই সে মাদ্রাসা থেকে বসিরহাটে নিজের বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিল। কিন্তু পথ হারিয়ে ফেলে। আব্দুল্লাহ জানান, তাঁর তিন বন্ধু আরওয়ান, রাজ, জীবনী। তাঁরা এক সঙ্গে থাকতেন। ২০০৮ সালে একবার পুলিশকে বলে বাড়িতে আসার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তত দিনে নিজের বাড়ির ঠিকানা ভুলে গিয়েছেন। বন্ধুদের নিয়ে বসিরহাটে এসেছিলেন। কিন্তু তখন খুঁজে পাননি বাড়ি। হতাশ হয়ে সে বার ফিরে গিয়েছিলেন দিল্লিতেই।
এ বার আর ফিরতে হল না আব্দুল্লাহকে। তিন বন্ধুকে নিয়ে তিন দিন ধরে বসিরহাট শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন। অবশেষে বাড়ির সন্ধান পেলেন। দরজায় কড়া নাড়তেই বেরিয়ে আসেন বাবা-মা। এত দিন পরে বাবা-মাকে দেখে চিনতে অসুবিধা হয়নি?
আবদুল্লাহ জানান, এক ঝকল দেখেই বাবা-মাকে চিনে নিয়েছেন। বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে হারানিধিকে চিনে নিতে পেরেছেন বাবা কাসেদ মণ্ডল এবং মা গুলসানয়ারা বিবিও। মণ্ডল পরিবারে শুরু হয়ে যায় উৎসব। আব্দুল্লাহকে দেখতে আশেপাশের বাড়ির মানুষের ঢল নামে।
কাসেদ বলেন, ‘‘ওকে আমরা অনেক খুঁজেছি। পাইনি। অনেক কেঁদেছি। আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। এত বছর পরে ছেলেকে ফিরে পেয়েছি, বিশ্বাসই হচ্ছে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy