Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Noapara

সংঘাত নয়, সম্প্রীতির গল্প বলছে নোয়াপাড়ার পুজো

পুজোর মূল কারিগর শামিম আখতার পেশায় মাংস বিক্রেতা। হঠাৎ করে বছর দুয়েক আগে কালীপুজো শুরু করেছেন তা নয়। গত ১৬ বছর ধরে প্রতি শনিবার কালীর উপোস করেন তিনি।

নোয়াপাড়ার রামপ্রসাদ পল্লিতে নিজের পুজো মণ্ডপে শামিম আখতার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

নোয়াপাড়ার রামপ্রসাদ পল্লিতে নিজের পুজো মণ্ডপে শামিম আখতার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৮:২৯
Share: Save:

বয়স মাত্র দু’বছর। আড়ম্বর বা আতিশয্যে অন্যদের ধারে-কাছে আসে না। তবুও এই পুজো ঘিরে এলাকার বাসিন্দাদের আনন্দ সীমাহীন।

এলাকায় ‘শামিমের কালীপুজো’ নামে পরিচিতি পেয়েছে এই পুজো। তাতে হাত লাগাতে পেরে বেজায় খুশি সুদীপ-বিশ্বজিৎ-দীপক-রবিরা। বর্তমান অস্থির সময়ে সম্প্রীতির অন্য গল্প লিখছে নোয়াপাড়ার এই পুজো।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেরই ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া গত বছর দুই সম্প্রদায়ের অবিশ্বাস আর সংঘাতের ছবি দেখেছিল। কিন্তু তার প্রভাব পড়েনি এই মহল্লায়। নোয়াপাড়ার রামপ্রসাদ মোড় এলাকা মানেই যেন সম্প্রীতির আবরণে মোড়া এক যৌথ পরিবার। যে পরিবারে ভিন্ রাজ্য থেকে এসে অবলীলায় মিশে যান খ্রিষ্টান নাগরিকও।

পুজোর মূল কারিগর শামিম আখতার পেশায় মাংস বিক্রেতা। হঠাৎ করে বছর দুয়েক আগে কালীপুজো শুরু করেছেন তা নয়। গত ১৬ বছর ধরে প্রতি শনিবার কালীর উপোস করেন তিনি। সন্ধ্যায় পুজো দিয়ে উপোস ভাঙেন। শুধু পুজো নয়, অজমের শরিফের সঙ্গে কাশীও ঘুরে এসেছেন শামিম। মঙ্গলবার শেষ হয়েছে কালীপুজো। এ বার পাড়ার বিহারি ভাইদের সঙ্গে তিনি হাত লাগাবেন ছটপুজোর প্রস্তুতিতে। শামিম বলছেন, ‘‘এতেই আমার আনন্দ। হিংসার খবর শুনলে অসুস্থ বোধ করি।’’

শামিম জানান, কালীপুজো করার ভাবনা তাঁর মাথায় আসে গত বছর। কথা বলেন পরিবারের লোকেদের সঙ্গে। পরিবার বলতে স্ত্রী নুজ়হত পরভিন এবং বছর আটেকের ছেলে। তাঁরা কেউই আপত্তি করেননি। বরং উৎসাহ দিয়েছিলেন। তার পরেই পাড়ার লোকেদের ডেকে নিজের ইচ্ছার কথা জানান শামিম। আপত্তি আসেনি সেখান থেকেও।

পুজোর কথা জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পাড়ার কয়েক জন সহৃদয় মানুষ। তাঁদের এক জন সুদীপ নাগ। তাঁর কেটারিংয়ের ব্যবসা। সুদীপ ছাড়াও বিশ্বজিৎ নন্দী, দীপক প্রসাদ, রবি চৌধুরী, জাভেদ আসলাম, মেহতাব আলম, হামিদ আনসারির মতো আরও কয়েক জন স্বত:স্ফূর্ত ভাবে পুজোর কাজে হাত লাগান। ফলে গত বারের তুলনায় এ বার আরও গুছিয়ে পুজো হয়েছে। তবে মানতে হয়েছে দূরত্ব-বিধি, ছিল কোভিড-সুরক্ষার ব্যবস্থাও। সুদীপ বলেন, ‘‘শামিমের নিষ্ঠায় কোনও খাদ নেই। ওর কাছে ধর্ম মানে সব মানুষ সমান। ইদেও আমরা ওর পাশে থাকি।’’

আর শামিমের কথায়, ‘‘ছোট থেকে এই পরিবেশে বড় হয়েছি। এটাই তো বাংলার সংস্কৃতি। এখন সময় বড় অশান্ত। তাই সব উৎসবেই আমাদের এমন বেঁধে বেঁধে

থাকা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Noapara Kali Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE