জল-কম: কচুরিপানায় নদীর মুখ ঢেকেছে। নিজস্ব চিত্র
দূর থেকে দেখলে মনে হবে বদ্ধ জলাশয়। কচুরিপানা, ভেচাল, পাটা, কোমর ফেলা। শ্যাওলা আর আগাছায় ভরা জলের উপরের অংশ। জায়গায় জায়গায় চর পড়ে গিয়েছে। এমনই দশা উত্তর ২৪ পরগনার গুরুত্বপূর্ণ নাওভাঙা নদীর। স্রোত ও নাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন মৃতপ্রায়।
এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এ বার মৃতপ্রায় এই নদীর প্রাণ ফেরাতে পদক্ষেপ করছে সেচ দফতর। নদী পরিষ্কারের পাশাপাশি ড্রেজার দিয়ে পলি তুলে নদীর গভীরতা বাড়ানো হবে। বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সোমেন মিশ্র বলেন, ‘‘নদীটি সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে। পলি তুলে গভীরতা বাড়ানো হবে। যে জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। টেন্ডার হয়ে গিয়েছে।’’
সেচ দফতরের সিদ্ধান্তে আশায় আলো দেখছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী, চাষিরা। সাধারণ মানুষেরও বহু আবেগ জড়িয়ে এই নদীর সঙ্গে। খুশি তাঁরাও। সকলেই চাইছেন, নদী ফের স্রোতস্বিনী হয়ে উঠুক।
বছর কুড়ি আগেও নদীতে ঢেউ খেলত। জোয়ার-ভাটা বোঝা যেত। মৎস্যজীবীরা সেই জলে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। চাষিরা নদীর জল সেচের কাজে লাগাতেন। সন্ধ্যায় দূর থেকে ভেসে আসত মাঝিদের ভাটিয়ালি গানের সুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতেরও অন্যতম মাধ্যম ছিল নদীটি।
বনগাঁ মহকুমার ভিড়ে গ্রামের কাঁটাখাল থেকে হরিদাসপুর-নরহরিপুর, খলিতপুরের মধ্যে দিয়ে নদীটি পেট্রাপোল-পিরোজপুর বাওড়ে গিয়ে পড়েছে নদীটি। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার লম্বা বালি খালের মাধ্যমে ইছামতী নদীতে গিয়ে মিশেছে নাওভাঙা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীটি ১৪ কিলোমিটার লম্বা। অতীতে সেখানে সারা বছরই জল থাকত। গভীরতা ছিল প্রায় ২০ ফুটের মতো। কিন্তু সংস্কারের অভাবে গরমের মরসুমে গভীরতা নেমে যায় চার ফুটেরও নীচে। দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষ নিজেদের স্বার্থেও নদীটিকে যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করেছেন। যা নদীকে ক্রমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এলাকার চাষিদের কাছে এখন নদীটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফি বছর দুর্গা পুজোর আগের বৃষ্টিতে স্থানীয় ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষিজমি জলের তলায় চলে যায়। তার অন্যতম কারণ নদীর জল উপচে কৃষি জমিতে ঢুকে পড়ে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নদীতে স্রোত না থাকায় সেই জল সরতে মাস চারেক সময় লেগে যায়। চাষিরা জানালেন, বহু জমি এখন নদীর কারণে এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর পলি জমে জমে নদীর গভীরতা যেমন কমেছে, তেমনই মৎস্যজীবীরাও মাছ ধরার জন্য পাটা-ভেচাল দিয়ে নদীর গতি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। পাট চাষিরাও পাচানোর সময়ে পলি ফেলেন। তাতে গভীরতা কমেছে।
ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘সেচ দফতরের কাছে নদী সংস্কারের আবেদন করা হয়েছিল। তারা জানিয়েছে, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আমরা খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy