Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ফের মৃত্যু, ডেঙ্গি-আতঙ্ক বাদুড়িয়ায়

বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটের ডিঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা কাসের ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। শনিবার তাঁর দেহ বাড়িতে আনা হয়। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘ডেঙ্গির লক্ষণ নিয়ে কাসের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।’’ সুপারের দাবি, গত কয়েক মাসে তাঁদের হাসপাতালে অন্তত দু’শো জন জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির লক্ষণ মিলেছে।

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কাসের আলি মোল্লার (ইনসেটে) স্ত্রী। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কাসের আলি মোল্লার (ইনসেটে) স্ত্রী। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫১
Share: Save:

গত বছরের স্মৃতি এখনও টাটকা।

৩২ জনটি প্রাণ গিয়েছিল জ্বর এবং ডেঙ্গিতে। সব ক্ষেত্রে অবশ্য ডেঙ্গির কথা মানেনি স্বাস্থ্য দফতর। তবু মানুষের দাবি ছিল, যে সব লক্ষণ ছিল অসুস্থদের শরীরে, তার সব ক’টি ডেঙ্গিই ইঙ্গিত করে।

কাসের আলি মোল্লার মৃত্যুতে ফের ডেঙ্গি-আতঙ্ক চেপে বসল বাদুড়িয়ার মানুষের মনে। জ্বর, হাত ও পা ব্যথা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং বমির মতো উপসর্গ নিয়ে ২২ জুলাই রাতে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কাসের। তিন দিন পরে ছেড়েও দেওয়া হয়। দু’দিনের মাথায় ফের জ্বরে পড়েন। বসিরহাটের একটি নার্সিংহোমে এক দিন থাকার পরে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শুক্রবার রাতে মারা গিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গির উল্লেখ আছে।

বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটের ডিঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা কাসের ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। শনিবার তাঁর দেহ বাড়িতে আনা হয়। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘ডেঙ্গির লক্ষণ নিয়ে কাসের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।’’ সুপারের দাবি, গত কয়েক মাসে তাঁদের হাসপাতালে অন্তত দু’শো জন জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির লক্ষণ মিলেছে।

এ দিন মৃতের বাড়িতে যান বিধায়ক আব্দুর রহিম দিলু। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে কাসের সঠিক চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। বিধায়কের কথায়, ‘‘ওঁকে ডেঙ্গির চিকিৎসা না করে তিন দিনের মাথায় সুস্থ বলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতার নার্সিংহোমে ভর্তি করলেও ডেঙ্গির চিকিৎসায় দেরি হয়ে গিয়েছিল। সে কারণেই মারা গেলেন কাসের।’’

এ দিন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কাসেরের স্ত্রী, দুই সন্তান ও পরিবার-পরিজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কাসেরের সহকর্মী অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল বিশ্বাসরা বলেন, ‘‘খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। আমরা ওঁর পরিবারের পাশে আছি।’’ মৃতের দাদা ওয়াসেল আলি মোল্লা বলেন, ‘‘ভর্তির শুরুতেই যদি বসিরহাট জেলা হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের তরফে ভাইয়ের রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গির উল্লেখ করে চিকিৎসা করা হত, তা হলে এ দিনটা দেখতে হত না।’’

কল্লোল দেবনাথ, নজরুল ইসলাম, রাসেক মোল্লার মতো স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘‘গত বছর বাদুড়িয়ায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গি জ্বর হয়েছিল। অনেকে ডেঙ্গিতে মারাও যান। সে কথা মাথায় রেখে এ বার বর্ষার শুরুতে আটুরিয়া পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ব্লিচিং ছড়ানো এবং স্প্রে করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। নিকাশি বেহাল হওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে রয়েছে।’’

পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান পূর্ণিমা সরকার বলেন, ‘‘মশা যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে, সে জন্য নিকাশি নালা সাফ করা হচ্ছে। সাধ্য মতো ব্লিচিং ও মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’’

কাসের থাকতেন বাদুড়িয়া পুর এলাকায়। পুরপ্রধান তুষার সিংহ বলেন, ‘‘পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিনই বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। জমা জল সাফ করছেন। ব্লিচিং, মশা মারার তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। ছোট ছোট শিবির করে প্রচার চালানো হচ্ছে।’’ তারপরেও ডেঙ্গিতে মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Mosquito Panic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE