মজা: বনগাঁয় ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক
ধরপাকড়ের সংখ্যাটা চোখে পড়ার মতো কম। খুন-জখমের খবর নেই। ছোটখাট মারপিট, নাঃ রাস্তাঘাটে ঘুরে দেখা যাচ্ছে তা-ও উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু নয়।
রবিবার দোলের দিন আইন-শৃঙ্খলার এ হেন পরিসংখ্যানে বিস্মিত পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। বনগাঁ থানার এক প্রবীণ পুলিশ কর্মী তো বলেই ফেললেন, ‘‘এত ঠান্ডা দোল শেষ কবে দেখেছি, মনে পড়ছে না!’’
কোন জাদুতে দিনভর হুজ্জুতের সংস্কৃতির এ হেন বদল?
প্রশ্নটা সহজ। তবে উত্তরটা ততটা নয়। মোটের উপরে পুলিশের নজরদারির ভূমিকা যেমন আছে, তেমনই আছে মানুষের বদলে যাওয়া রুচি-পছন্দ। রঙ মেখে ভূত সেজে ঘোরার থেকে ফুলেল আবিরের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে নতুন প্রজন্মের। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে হইচই না করে বরং বন্ধু-বান্ধবেরা নিজেরা কোনও এক জায়গায় জড়ো হয়ে আনন্দে মাতার প্রবণতা বেড়েছে।
বনগাঁ, বসিরহাট–সহ জেলার নানা প্রান্তে গত কয়েক দিন ধরে পুলিশের নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রচুর সংখ্যক মদ্যপকে ধরা হয়েছে। সকলে সহজে জামিন পেয়েছে, তেমনটা নয়। অনেকের বিরুদ্ধে রীতিমতো মামলা রুজু করেছে পুলিশ। আর পুলিশের এই ভূমিকাটা অনেকের মধ্যে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। দোলের দিন বেগড়বাই করলে পুলিশ যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা বুঝে নিয়েছে সকলে।
নেতা-মন্ত্রী-সান্ত্রীর নাম নিয়েও যে পার পাওয়া যাবে না, পুলিশ কর্তারা সে কথা বার বার বুঝিয়ে ছেড়েছেন মানুষজনকে। যে কারণে, বসিরহাট শহরে এ বার দেখা গেল, মদ্যপ বাইকওয়ালাদের তাণ্ডবটা বেমালুম উধাও। বেলা ১২টার মধ্যে দোল এক রকম শেষ।
কথা হচ্ছিল বসিরহাট শহরের এক রঙ বিক্রেতার সঙ্গে। বললেন, ‘‘কেমিক্যাল মেশানো রঙে ত্বকের ক্ষতি হবে, এই ধারণাটা অল্পবয়সীদের মনে গেঁথে গিয়েছে। ফলে আবির খেলার ঝোঁক বাড়ছে।’’ ব্যারাকপুরের নোনা চন্দনপুকুরের এক ব্যবসায়ী জানালেন, ভেষজ আবিরের চাহিদা বেড়েছে। পিচকিরি বিক্রি কমেছে। তা ছাড়া, বেলুন এ বার বিক্রি তেমন হয়নি বললেই চলে। ওই ব্যবসায়ীর মতে, ‘‘দোল খেলাটা এখন নিজের নিজের বন্ধুবান্ধব, পরিচিতদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।’’
এই প্রবণতাটাই রাস্তাঘাটে গোলমাল কমাচ্ছে, মনে করেন ডায়মন্ড হারবারের এক প্রবীণ অরূপ দে। তাঁর মতে, রাস্তাঘাটে বেরিয়ে ঝামেলায় জড়াতে চাইছে না কেউ। বরং বন্ধুরা মিলে সেলফি তুলে সোস্যাল মিডিয়া ভরিয়ে ফেলার হিড়িক এ বার আরও বেড়েছে। কাকদ্বীপের কলেজ পড়ুয়া মিলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বন্ধুরা মিলে এ বার নিশ্চিন্তে ঘুরেছি। কোথাও তেমন কোনও ঝামেলা চোখে পড়েনি।’’
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুব্রত মিত্র বলেন, ‘‘দোলের দিন পুলিশের কড়া নজর ছিল। তবে আনন্দের পরিবেশ বজায় রাখার কৃতিত্ব শিল্পাঞ্চলের মানুষেরই।’’
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে চলতি গাড়ি বা লোকের গায়ে বালতি বালতি রং ঢালার বদ প্রবণতাও কমেছে। ছোটছোট ছেলেমেয়েরা অবশ্য হালকা পিচকিরি নিয়ে রং ছিটিয়েছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। তবে তাতে লোকের বিরক্তি উদ্রেক তো নয়ই বরং অনেকে খুশি মনে দাঁড়িয়ে থেকে রঙ মেখেছেন গায়ে।
অতীতে দোলের দিন বহু মারামারি, বোমাবাজির ঘটনার সাক্ষী থেকেছে উত্তর ২৪ পরগনা। এ বার অবশ্য বনগাঁ, হাবরা, অশোকনগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় দোলের দিন সকালে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠনের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়েছিল। বনগাঁর নৃত্য শিল্পী দীপশিখা ঘোষ ভৌমিক বলেন, ‘‘দোলের দিন বনগাঁ শহরে সংস্কৃতির ছাপ দেখা গিয়েছে।’’
পুলিশ জানায়, স্বরূপনগর থানার চারঘাট এলাকায় একটিমাত্র শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতারও করে। জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দোলের দিন গোটা জেলায় প্রায় আড়াইশো জন ধরা পড়েছে। তবে সব মিলিয়ে পুলিশি অভিযান ও মানুষের সচেতনতা— দু’য়ে মিলে দোল কেটেছে শান্তিতেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy