স্তব্ধ: যানজটে নাকাল। শুক্রবার, মধ্যমগ্রামে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
কোমরে অস্ত্রোপচার হয়েছে শাশুড়ির। অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়েই দমদম থেকে বাড়ি ফিরছিলেন দক্ষিণ হাবরার বাসিন্দা রাখী কর। বিমানবন্দরের কাছ থেকে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থেকে ছটফট করছিলেন অসুস্থ বৃদ্ধা। প্রথমে যানজটের কারণও বুঝতে পারছিলেন না কেউ। শুক্রবার অবরোধে আটকে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ পেরোতে লাগল দু’ঘণ্টা। পরে কারণটা জানতে পেরে রাখীদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অবরোধ করলেই হল! এত মানুষের অসুবিধা হয়, এরা বোঝে না? পুলিশ কী করে?’’
দিন কয়েক আগেই স্বপন দেবনাথ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরে সিভিক পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে দফায় দফায় অবরোধ হয় মধ্যমগ্রাম চৌমাথায়। তার জেরে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাতায়াতকারী সকলকে। এ দিন আবার এলাকা দখল নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে গৌতম দে সরকার নামে এক ব্যক্তি খুনের পরে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মধ্যমগ্রাম চৌমাথা অবরোধ করে দেয় তার পরিজনেরা। ঘণ্টাখানেক ধরে তা চলার পরে পুলিশ ও র্যাফ নামলে অবরোধ ওঠে। কিন্তু অবরোধের জের চলে কার্যত সন্ধ্যা পর্যন্ত। অত্যন্ত ব্যস্ত ওই রাস্তায় দিনভর যানজটে নাকাল হতে হয় স্থানীয়দের।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবস্থা এমনই হয়েছে যে, বারাসত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তায় রোগী নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স। হুটার বাজছে সমানে। কিন্তু গাড়ি বার করার জায়গা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই রাস্তা ছাড়া কলকাতা থেকে বারাসত পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কোনও বিকল্প রাস্তাও নেই। ওই একমাত্র রাস্তাটি দিয়েই কৃষ্ণনগর, উত্তরবঙ্গ ছাড়াও বনগাঁ, বসিরহাটের বহু বাসিন্দা যাতায়াত করেন প্রতি দিন। এমনকী, কলকাতা থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার রাস্তা বলতেও ওই একটিই। এ দিনের মতোই কিছু কিছু আঞ্চলিক সমস্যার জেরে ভোগান্তি সহ্য করতে হয় সেই যাত্রীদেরও।
দিন কয়েক আগের ওই অবরোধের সময়ে পথে আটকে পড়েছিলেন বেশ কয়েকটি কলেজের পরীক্ষার্থীও। সে দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায় অনেক ছাত্রছাত্রীর। এ দিনও কাজে যাওয়ার পথে দুর্ভোগে পড়েন অনেকে। যেমন প্রতি দিনই কাজের জন্য বারাসতের বাড়ি থেকে কলকাতা যেতে হয় কৌশিক সরকারকে। এ দিন অবরোধে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পরে কৌশিক বলেন, ‘‘এমনিতেই প্রতিদিন যানজটের জন্য বারাসত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মাত্র ১১ কিলোমিটার পথ যেতে দীর্ঘক্ষণ লেগে যায়। তার উপরে যদি নিত্য অবরোধ লেগে থাকে, তবে তো কাজে পৌঁছতেই তিন-চার ঘণ্টা নষ্ট হবে। বহু দিন তো কাজ পণ্ডই হয়ে যায় এমন ভোগান্তির জেরে।’’ এ বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অবরোধ করা অপরাধ। কিছু কিছু অবরোধে নানা রকমের আবেগ থাকে। তবে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের বুঝিয়ে তুলেও দেওয়া হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy