কেউ এলএলবি পাশই করেননি। কেউ আবার ভিন রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশের জাল শংসাপত্র কিনে এনে আদালতে প্র্যাকটিস করছেন। আবার এমনও দেখা গিয়েছে, এলএলবি’র ভুয়ো ডিগ্রি দেখিয়ে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে রেজিস্ট্রেশন জোগাড় করে আইনজীবী সেজে আদালতে চুটিয়ে ওকালতি করছেন কেউ কেউ।
এমনই নানা অভিযোগের ভিত্তিতে এ বার বনগাঁ মহকুমা আদালতে ভুয়ো আইনজীবী শনাক্ত করতে উদ্যোগী হল আইনজীবীদের দু’টি সংগঠন। ক’দিন আগেই ডায়মন্ড হারবার মহকুমা ফৌজদারি আদালতের কিছু আইনজীবীকে নিয়েও একই প্রশ্ন উঠেছে। অন্তত ৪৬ জন আইনজীবীর ডিগ্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ফৌজদারি বার অ্যাসোসিয়েশনের। আরও এক ধাপ এগিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ওই আইনজীবীদের তালিকা তৈরি করে চিঠি পাঠানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, রাজ্য বার কাউন্সিলের সভাপতি-সহ নানা পদাধিকারীর কাছে। ওই আইনজীবীদের ডিগ্রি যাচাই করার আবেদন জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন।
বনগাঁ মহকুমা আদালতের আইনজীবীদের দু’টি সংগঠন, বার অ্যাসোসিয়েশন এবং ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা বনগাঁ আদালতের মুখ্য ভারপ্রাপ্ত সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বনগাঁ আদালতে যাঁরা প্র্যাকটিস করছেন, তাঁদের মাধ্যমিকের শংসাপত্র, এলএলবির শংসাপত্র, স্নাতক হওয়ার শংসাপত্র এবং রাজ্য বার কাউন্সিল থেকে পাওয়া প্র্যাকটিস করার রেজিস্ট্রেশন জমা দিতে হবে।’’
আইনজীবীদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বনগাঁ আদালতই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে কিছু ভুয়ো আইনজীবী রয়েছেন যাঁরা রাজ্যের বাইরে বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়ে ভুয়ো এলএলবির শংসাপত্র কিনে এনে বার কাউন্সিল থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিভিন্ন আদালতে ওকালতি করছেন। প্রাথমিক ভাবে ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের ধারণা, বনগাঁ আদালতও এর ব্যতিক্রম নয়। কিছু ভুয়ো আইনজীবী আছেন এখানেও। যে কারণে এই বাছাই প্রক্রিয়া বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বনগাঁর আইনজীবী সংগঠন সূত্রের খবর, আইনজীবীদের কাছ থেকে নথিপত্র পাওয়ার পরে তা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হবে, সেগুলি সঠিক কিনা। পাশাপাশি সাত দিন পরে আইনজীবীদের নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বার কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সমীরবাবু বলেন, ‘‘সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখে যদি ভুয়ো আইনজীবী পাওয়া যায়, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হবে। তাঁদের প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
ভুয়ো আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্প্রতি ৫৫ জন আইনজীবী সমীরবাবুর কাছে স্মারকলিপি জমা দেন বলে জানা গিয়েছে। এরপরেই সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ করা হয়েছে। এখন বনগাঁ আদালতে আইনজীবীর সংখ্যা ২৪৫ জন। তাঁদের একজন বলেন, ‘‘চোখের সামনে এমনও দেখেছি, আদালতে অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি হঠাৎ করেই একদিন কালো কোট পড়ে আইনজীবী সেজে ওকালতি করছেন। এ সব বন্ধ হওয়া উচিত।’’
সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীরা সকলেই। প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী বলেন, ‘‘বনগাঁ আদালতে অবশ্যই কিছু ভুয়ো আইনজীবী রয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy