Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
bongaon

বিষ-বায়ু বনগাঁর বাতাসে

কেন্দ্রীয় আবাসন-নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে ২০২৩ সালের ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেশের সব থেকে দশটি নোংরা শহরের মধ্যে নাম রয়েছে হাওড়া, কলকাতা-সহ এ রাজ্যের আরও কিছু এলাকার। দুই জেলার পুরশহরগুলির দূষণ পরিস্থিতি কেমন, খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

কালো ধোঁয়া উড়িয়ে বনগাঁর পথে চলছে গাড়ি।

কালো ধোঁয়া উড়িয়ে বনগাঁর পথে চলছে গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৬
Share: Save:

দূষণের নানা প্রকার ভেদ। তার অনেকগুলির নিরিখে কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় এ রাজ্য নেহাতই পিছনের সারিতে। বনগাঁ পুরশহরের আবার মূল সমস্যা শব্দ ও বায়ু দূষণ।

ট্রাক থেকে বেরোনো কালো ধোঁয়ায় প্রতি দিন দূষিত হচ্ছে বনগাঁ পুর এলাকার পরিবেশ। সাধারণত, অতিরিক্ত মাল নিয়ে যাতায়াত করা ট্রাকগুলি থেকেই অনর্গল কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। পথচারীরা চোখে অন্ধকার দেখেন। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সোমালি রায়ের কথায়, “ভ্যানে করে যশোর রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলাম। যানজটে ভ্যান আটকে পড়েছিল। একটি ট্রাকের পিছনে ছিল আমাদের ভ্যানটি। আচমকা ট্রাক থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে থাকল। মুখে এসে লাগল। চোখ-মুখ জ্বালা করতে শুরু করেছিল। সাময়িক ভাবে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।” প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েও ট্রাকের ধোঁয়ায় নাজেহাল হন অনেকে। এক ব্যক্তির কথায়, “ভোরের তাজা বাতাস নেওয়ার পরিবর্তে ট্রাকের দূষিত ধোঁয়া ফুসফুসে ঢোকে। চোখ জ্বালা করে।”

বাসিন্দারা জানালেন, রাত ১০টার পরে শহরের রাস্তা পণ্যবাহী ট্রাকের দখলে চলে যায়। তখন দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক থেকেও কালো ধোঁয়া বেরোয়। বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, “৩০-৪০ বছরের পুরনো কিছু ট্রাক, যানবাহন চলাচল করে। সেখান থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। পাশাপাশি, বেআইনি কাটা তেলে অটো চলে কিছু। বিষয়টি বন্ধ করতে পরিবহণ দফতরকে জানানো হয়েছে।”

শব্দদূষণেও জেরবার বনগাঁ শহরের মানুষ। বাসিন্দারা জানান, গোটা শহরে জায়গায় জায়গায় চোঙা লাগানো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে চোঙা বাজছে নানা কারণে। কোনও অনুষ্ঠান হওয়ার সাত-দশ দিন আগে থেকে মাইকে প্রচার শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা দোকানে বসে কেনাবেচা করতে পারেন না। মানুষ পথে বেরিয়ে মোবাইলে কথা বলতে পারেন না।

শহরের বাসিন্দা, চিকিৎসক আশিষকান্তি হীরা বলেন, “বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, দৃশ্যদূষণ— সব কিছুকে যদি হিসাবের মধ্যে রাখা হয়, তা হলে বনগাঁ শহরকে খুব পরিচ্ছন্ন শহর বলা যাবে না। তবে শহরের কিছু অংশ পরিচ্ছন্ন বলা যায়।”

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরকে জঞ্জালমুক্ত রাখতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৭০০ কর্মী নিয়মিত কাজ করেন। হাতের বদলে শহরের নোংরা আবর্জনা পরিস্কার করতে রোড সুইপিং মেশিন কেনা হয়েছে। বৃষ্টিতে কোথাও জল জমে গেলে দ্রুত জল সরাতেও আধুনিক মেশিন কেনা হয়েছে। পুকুরগুলি সংস্কার করা হচ্ছে। শহর পরিস্কার রাখতে মানুষকে সচেতন করতে পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত মিছিল, কর্মসূচি হয় বলে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি। বাড়ি থেকে আবর্জনা নিয়ে আসা হয়। নিকাশি নালা পরিস্কার করা হয় বলেও পুরসভার দাবি। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরের যাবতীয় আবর্জনা রোজ সংগ্রহ করে মিলনপল্লি এলাকায় ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়। পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, “আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। পচনশীল বর্জ্য থেকে পরবর্তী সময়ে সার তৈরি করা হয়। সেই সার চাষিদের আপাতত বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। পরে বিক্রি করা হবে। প্লাস্টিক নির্দিষ্ট সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।”

পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল অবশ্য বলেন, “শহরের নিকাশি ব্যবস্থা অনেক পুরনো আমলের এবং অপরিকল্পিত। ফলে বর্ষায় অনেক জায়গায় জল জমে যায়। দূষণ ছড়ায়। নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা প্রয়োজন।” সিপিএম নেতা পীযূষকান্তি সাহার কথায়, “বনগাঁ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শহর নয়। বাড়ি থেকে আবর্জনা নিয়মিত নেওয়া হয় না। নিয়মিত শহরের আবর্জনা পরিস্কার করা হয় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bongaon Air pollution noise pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE