Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Irrigation

নদী বাঁধের মাটি কাটা হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে, কাজ না পেয়ে ক্ষোভ

আমপানের তাণ্ডবে ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ইটখোলা পঞ্চায়েতের মধুখালি গ্রামে মাতলা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। সেচ দফতর বর্ষা মরসুমের আগেই বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ করতে চাইছে।

থমকে: বাঁধের কাজ

থমকে: বাঁধের কাজ

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৩:০৫
Share: Save:

নদীবাঁধ মেরামতির কাজে লাগানো হয়েছে যন্ত্র। ফলে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নদী বাঁধের মাটি কাটার কাজ পাচ্ছেন না স্থানীয় সাধারণ মানুষ। এমনই অভিযোগ তুলে নদী বাঁধের কাজ বন্ধ করে দিলেন কিছু মানুষ।

আমপানের তাণ্ডবে ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ইটখোলা পঞ্চায়েতের মধুখালি গ্রামে মাতলা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। সেচ দফতর বর্ষা মরসুমের আগেই বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ করতে চাইছে। সেখানে বাধ সেধেছেন এলাকার কিছু মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যাঁদের জবকার্ড আছে, তাঁদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। যেখানে সরকারি নির্দেশে বলা হচ্ছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এলাকার মানুষকে বেশি বেশি করে কাজ দেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে ভিন্ রাজ্য থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেরই জমানো টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। কাজ না থাকায় সংসার চালাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব মণ্ডল, নিতাই সর্দার বলেন, ‘‘এলাকায় নদী বাঁধ নির্মাণে মাটি কাটার কাজ চলছে। অথচ এলাকার গরিব সাধারণ মানুষকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ দেওয়া হচ্ছে না। তার বদলে জেসিপি দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।’’ আরও অভিযোগ, সেচ দফতর কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ মেরামত করতে চাইছে। ঘন করে শালবল্লার পাইলিং না করে অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা করে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করা হচ্ছে। মাটির বস্তা ঠিকমতো ভরাট না করেই ফেলা হচ্ছে। এ রকম কাজ হলে বর্ষার মধ্যে ফের বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এই সমস্ত কারণে কিছু মানুষ ক্ষোভে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

যদিও স্থানীয় মানুষের একটি অংশের অভিযোগ, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার নির্দেশে যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি তাঁর লোকজনকে মাটি কাটার কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা ইন্দ্রজিৎ সর্দার বলেন, ‘‘এমন কোন ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমার লোকজন যুক্ত নই। কী কারণে যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করা হয়েছে, তা বলতে পারব না। যাতে নদী বাঁধের কাজের কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখা হবে।’’

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যানিং ১ ব্লকের মধুখালি, বেলেখালি, গড়খালি, রেদোখালি, নিকারিঘাটা এলাকায় আড়াই কিলোমিটার মাতলা নদীর বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। জুন মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করার কথা। বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। দফতর সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে দিয়ে যতটা মাটি কাটার কাজ করানো সম্ভব, তাই করা হয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই কাজ শেষ করতে হলে কিছু ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার করতে হচ্ছে। দিন কয়েক আগে পূর্ণিমার ভরা কোটাল চলে গিয়েছে। দ্রুত মাটি কাটার কাজ শেষ না করতে পারলে এলাকা প্লাবিত হতে পারত। ক্যানিং ১ বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এলাকার মানুষকে যতটা সম্ভব কাজ দেওয়া হচ্ছে। মাটিকাটা, বনসৃজন, নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ লাগানো সহ বিভিন্ন কাজে তাঁদের লাগানো হচ্ছে। নদী বাঁধ মেরামতির বিষয়টি সেচ দফতরের অধীন। কী ভাবে তাঁরা কাজ করবেন, সেটা তাঁদেরই বিষয়।’’

সেচ দফতরের ক্যানিংয়ের এসডিও সুরজিৎ লাহিড়ি বলেন, ‘‘ওই কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। না হলে বর্ষার আগে বাঁধের কাজ শেষ করা যাবে না। সে কারণেই কিছু জায়গায় যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটাতে হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, যতটা সম্ভব মানুষকে দিয়ে কাজ করানোর। স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Irrigation Dam Cyclone Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE