নির্দেশিকা: পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র
হানাহানির জেরে বসিরহাট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কার্যত রক্তশূন্য। অবিলম্বে অন্তত ৩০-৪০ ইউনিট রক্ত না পেলে প্রতিদিন গড়ে ২০ ইউনিট রক্তের জোগান দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে বুঝতে পারছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সমস্যাটা যে কত তীব্র আকার নিয়েছে, তা টের পাচ্ছেন বসিরহাটবাসীও। আপাতত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিস টাঙিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রক্তদাতা (ডোনার) জোগাড় করে না আনতে পারলে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে মাইকে প্রচার চলছে। ক্লাব, গণসংগঠনগুলি যাতে অবিলম্বে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে, তার আবেদনও জানানো হচ্ছে।
৩ জুলাই ফেসবুকে একটি পোস্টকে ঘিরে উত্তাল হয় বসিরহাট। ঘর পোড়ানো, দোকান ভাঙা, পথ অবরোধে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে গত কয়েক দিন ধরে ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে বসিরহাট। পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর নিয়মিত টহলের উপরে ভরসা রাখছেন শহরবাসী। দোকানপাট খুলেছে। যদিও পোড়া, ভাঙা দোকানের সারি এখনও জায়গায় জায়গায়। বহু মানুষের রুটি-রুটিতে টান পড়েছে।
টান পড়ছে রক্তের জোগানেও। ব্লাড ব্যাঙ্কের চিকিৎসক অনন্যা খানের কথায়, ‘‘মাত্র দু’চার ইউনিট রক্ত পড়ে আছে। এ দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা অসম্ভব। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সমস্যাটা আরও তীব্র।’’
একটাই উপায় আপাতত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সামনে। তাঁরা জায়গায় জায়গায় নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, রক্তদাতা না আনলে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয় রোগীকে।
সুযোগ কাজে লাগাতে নেমে পড়েছে দালাল এবং কিছু সুযোগসন্ধানী। তারা নিজেরা রক্তদাতা সেজে বা জোগাড় করে দেওয়ার নাম করে হাজার হাজার টাকা চাইছে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে। সকলে নিজেদের উদ্যোগে রক্তদাতা জোগাড় করতে না পেরে দালালদের উপরে ভরসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। তেমনই এক রোগীর দাদার কথায়, ‘‘কী করব, সব জেনেশুনেও দু’হাজার টাকা দিয়ে এক ইউনিট রক্ত কিনেছি। ভাইয়ের প্রাণটা তো বাঁচাতে হবে!’’
ছেলের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ থেকেই রাতের ঘুম উড়েছে মকবুল গাজির। ছেলে সাকিল থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। নিয়মিত রক্ত দিতে হয় তাকে। মকবুলের কথায়, ‘‘এত অশান্তি হয়ে গেল। কার তাতে কী লাভ কে জানে। মাঝখান থেকে রক্তের অভাবে জীবন-মৃত্যু নিয়ে টানাটানি চলছে এত মানুষের। ছেলেটার জন্য যে ভাবেই হোক রক্তদাতা জোগাড় করতেই হবে।’’
গত দু’সপ্তাহে শহরে ৮টি রক্তদান শিবির হওয়ার কথা ছিল বলে জানালেন হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার। সব ক’টিই বাতিল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কলকাতার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেও রক্ত জোগাড় করে এনেছেন তাঁরা, জানালেন শ্যামলবাবু।
আকবর গাজির স্ত্রীর অস্ত্রোপচার সামনেই। ডাক্তার তিনজন রক্তদাতা জোগাড় করে রাখতে বলেছেন। আপাতত সেই চেষ্টাই করছেনন তিনি। আকবর বলেন, ‘‘একটা সামান্য ফেসবুক পোস্ট দেখে এত কাণ্ড ঘটাতে হবে?’’
পাইকপাড়ার কিঙ্কর মণ্ডলের ভাই হাসপাতালে ভর্তি। রক্তদাতা হিসাবে কিঙ্করবাবুর সঙ্গে এসেছিলেন ফকির আলি। ফকিরের কথায়, ‘‘আজ ওঁর ভাইয়ের রক্ত লাগবে, কাল তো আমার পরিবারেরও লাগতে পারে। এ সব সময় ধর্মের ভেদাভেদ কেউ দেখে?’’
নিজেদের অজান্তেই বিধ্বস্ত বসিরহাটের শুশ্রূষা চালিয়ে যাচ্ছেন কিঙ্কর-ফকিররা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy