Advertisement
০১ মে ২০২৪
kakdwip

‘ঘর নেই, ভাতের জোগাড়ও ঠিক হয় না, তো পুজো’!

কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনের মাঝে পড়ে সরকারি আবাস যোজনায় ঘরের টাকা পাচ্ছেন না গরিব মানুষ। যাঁরা এর আগে টাকা পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেককে কাটমানি দিতে হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে ভুরি ভুরি। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় সে তথ্য নতুন করে উঠে আসায় শুরু হয়েছে শোরগোল। এ দিকে, ঘর না পেয়ে বিপর্যস্ত বহু পরিবার। পুজোর আলো পৌঁছয় না সে ঘরের কোণে। খোঁজ নিলেন আমাদের প্রতিবেদকেরা।  

ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরের সামনে দ্রৌপদী।

ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘরের সামনে দ্রৌপদী। —নিজস্ব চিত্র।

সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৩
Share: Save:

বাড়ি বলতে ত্রিপলে ঘেরা ছোট্ট ঝুপড়ি। ছাউনিও ত্রিপলের। কয়েকটা বাঁশের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধন দেওয়া, যাতে ঝড়-বৃষ্টি হলে ত্রিপল উড়ে না যায়। কাকদ্বীপের প্রতাপাদিত্যনগরের গণেশপুর রথতলা গ্রামে এ রকমই ঝুপড়িতে ছেলেকে নিয়ে থাকেন বছর আটচল্লিশের দ্রৌপদী দলুই। অভিযোগ, আবাস যোজনায় সরকারি বাড়ির প্রতিশ্রুতি মিলেছে শুধু। বাড়ি মেলেনি।

দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় মা-ছেলেকে। পুজোর কেনাকাটা আর করে ওঠা হয় না। পুজোর আনন্দ ফিকে তাঁদের কাছে। দ্রৌপদী জানান, প্রায় ২৭ বছর আগে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বছর তিনেকের ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ির দেওয়া ছোট্ট জায়গায় ঝুপড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। লোকের বাড়ি কাজ করে কোনও রকমে ছেলের পড়াশোনা, সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু মাথার উপর ছাদ করার সামর্থ্য হয়নি। ফলে, ঝুপড়িতেই দিন কাটে এখনও। ঝড়-দুর্যোগে ছেলেকে নিয়ে অন্য লোকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। দুর্যোগ মিটলে আবার ফিরে আসেন ঝুপড়িতে। আমপান-ইয়াসে বহুবার উড়ে গিয়েছে ঝুপড়ি। আবার কোনও রকমে মেরামত করে থাকতে শুরু করেছেন তাঁরা।

দ্রৌপদীর কথায়, “বছরের পর বছর এখানেই দিন কাটে। শুনেছিলাম আবাস যোজনার তালিকায় আমার নাম আছে। দফায় দফায় কাগজপত্রও নিয়ে গিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। কিন্তু টাকা-পয়সা কিছুই পাইনি। আশপাশে অনেকেরই সরকারি পাকা বাড়ি হয়েছে। পরে শুনেছি আমার নাম কেটে দিয়ে অন্যকে দিয়ে দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। টাকা দিতে পারিনি বলে ঘর পাইনি।”

কোনও রকমে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে দ্রৌপদীর ছেলে বাপি। তারপর আর পড়াশোনা এগোয়নি। বর্তমানে নাচ শিখিয়ে কিছু আয় করেন। তাঁর কথায়, “মা অসুস্থ। সামান্য আয়েই মায়ের ওষুধ কিনতে হয়, সংসার চালাতে হয়। রেশনে দু’জনের জন্য যেটুকু চাল পাই, তাতে হয় না। অন্যের বাড়ি থেকে রেশনের চাল কম দামে কিনে খাই। পাকা বাড়ি তৈরি তো দূরের কথা, টালির চালের বাড়ি তৈরিরও ক্ষমতা নেই।”

দ্রৌপদী বলেন, “কোনও বছরই পুজো নিয়ে তেমন আনন্দ থাকে না। নতুন জামাকাপড় কিনতেও পারি না। গরিবের কি পুজো দেখা মানায়? এক মুঠো ভাতের জোগাড় ঠিকঠাক করতে পারি না, সেখানে পুজো তো দূরের কথা।”

কাকদ্বীপের বিডিও ঋক গোস্বামী বলেন, “আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকলে অবশ্যই টাকা পাবেন। এখন তো টাকা আসছে না। আর যদি তালিকায় নাম না থাকে, আমাকে লিখিত ভাবে জানালে কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kakdwip Poverty Durga Puja 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE