ছিল না যা কিছু, তার অনেকটাই এখন হালিশহরে আছে। রাস্তায় পিচের পরত পড়েছে, বিজলি বাতি দিয়ে সাজানো গঙ্গার পাড়। রাত-বিরেতে একলা পথে বেরনোর ইতস্তত করছেন না, এটাও অনেক বড় প্রাপ্তি, মনে করেন এখানকার মহিলারা। তারপরেও অবশ্য না পাওয়া থেকে গিয়েছে অনেক কিছুই। নিকাশি সমস্যার সুরাহা পুরোপুরি করা যায়নি। চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েও ক্ষোভ বিস্তর। যা নিয়ে সরব এলাকার মহিলারা।
বড় রাস্তার উপরে বাস থেকে নেমে প্রাইভেট টিউশন পড়তে যাচ্ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুজাতা মিত্র। বড় রাস্তাগুলো পিচ পড়ে ঝাঁ চকচকে হওয়ায় বেশ খুশি। জানালেন, গঙ্গার ধার সাজানো-গোছানো হয়েছে, সাধক রামপ্রসাদের ভিটে সংস্কার হয়েছে, রাস্তাঘাটে বেরোলে নিরাপদ বোধ করেন, এ সব বড় প্রাপ্তি তো বটেই। কিন্তু শহরের ভিতরে অলিতে গলিতে রাস্তার সংস্কার বাকি। বর্ষার সময়ে আগে হাঁটুজল পেরিয়ে বাড়ি ফিরতে হত। এখন সেই সমস্যা কিছুটা কমলেও নিকাশি নালা সংস্কার করা দরকার কিছু জায়গায়। কোথাও কোথাও কাঁচা নর্দমা রয়ে গিয়েছে।
দুপুরে স্নান সেরে উঠোনে জামা-কাপড় মেলছিলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রাবণী দাস। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েদের নিরাপত্তা, লেখাপড়া, বাজার, যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক ভাল হয়েছে। রাস্তা-ঘাট অধিকাংশই ঠিক হয়েছে। তবে কিছু রাস্তা সংস্কার আর নিকাশির দিকে নজর দেওয়া জরুরি। গলি রাস্তাগুলিতে নিকাশি সমস্যা মিটলে হালিশহরের সব মানুষ উপকৃত হবেন।
নিকাশি নালা নিয়ে হালিশহরে যে কিছু এলাকায় এখনও সমস্যা রয়েই গিয়েছে তা স্বীকার করেছেন পুরপ্রধান অংশুমান রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বোর্ড গঠন করার পরে খুব কম সময় পেয়েছি কাজ করার। তার মধ্যে আন্তরিক ভাবে যতটা পেরেছি, করেছি। অনেক কাজ এখনও বাকি।’’
বিবি গাঙ্গুলি সরণীতে থাকেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবিতা চট্টোপাধ্যায়। নিজে একজন স্কাউট। দীর্ঘদিন ধরে এই শহরে আছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুর পরিষেবাটা তো আমরা চোখে দেখতে শুরু করলাম হালে। খুব অল্প সময়ে অনেক কাজ হয়েছে। এই শহরে এত রাস্তা, গাড়ি অনেক বেড়েছে। পথচারীদের জন্য ফুটপাথ নেই। স্টেশন থেকে বলদেঘাটা যাওয়ার রাস্তায় ফুটপাথের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কিছু দূর এগিয়ে কাজ থমকে গিয়েছে। আর স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও হালিশহর অনেক পিছিয়ে। হাসপাতালে চিকিৎসা বলতে সেই কল্যাণী, নয় তো নৈহাটি হাসপাতাল। এ বার এ দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার।’’
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচলে থাকেন হিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজে সঙ্গীত শিক্ষিকা। হালিশহরে শিল্প ও সংস্কৃতির প্রসার নিয়ে খুবই আশাবাদী। একই সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনে পুর পরিষেবার হাল হকিকত নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘উন্নয়ন হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের ওয়ার্ডে রাস্তার সংস্কার প্রয়োজন। নিকাশি নালার সমস্যাও আছে। নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। আবর্জনা ফেলার সুষ্ঠু ব্যবস্থা হোক, এটা আমাদের প্রত্যাশা।’’
হালিশহর রামপ্রসাদ স্কুলের অশিক্ষক কর্মী বুলা বসু থাকেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ পূর্বাচলে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের ওয়ার্ডে প্রতি সপ্তাহে জঞ্জালের গাড়ি আসছিল, রাস্তা পরিষ্কারও হচ্ছিল, নর্দমায় কীটনাশকও ছড়ানো হচ্ছিল। সম্প্রতি কীটনাশক ছড়ানো বন্ধ হয়েছে। আমাদের এলাকায় কোনও শিশু উদ্যান নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই।’’ এ বাদে উন্নয়নের কাজ অনেক কিছু হয়েছে, তা মানছেন বুলাদেবীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy