একশো দিনের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। ফাইল চিত্র
নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে এখন সেরকম কাজও নেই। ফলে নামখানার হরিপুরের পরিমল সামন্তের একমাত্র আশা ছিল একশো দিনের কাজ করে টাকা উপার্জন করা। কিন্তু সেপ্টেম্বরের পর থেকে বড় অঙ্কের টাকা ঢোকেনি জেলার কোনও ব্লকেই।
জেলা জুড়ে বুধবার পর্যন্ত শ্রমিকদের বকেয়া টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। স্বাভাবিক ভাবে নাভিশ্বাস উঠেছে শ্রমিকের। নগদ টাকা না পেয়ে কাকদ্বীপ মহকুমার একাধিক শ্রমিক পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত তবে জেলার অন্য এক কর্তার দাবি, যখন যেরকম টাকা ঢুকছে, সেরকম ভাবে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। টাকার জন্য কাজ বন্ধ হয়নি বা গতি কমেনি। জেলা প্রশাসনের ওই কর্তা মনে করেন, কেন্দ্রীয় সার্ভারে কাজ হচ্ছে বলে একটু দেরি হচ্ছে টাকা ঢুকতে। যদিও এই সমস্যা গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। হাতে নগদ টাকা নেই।
কিন্তু অক্টোবর এবং নভেম্বরে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা ঢুকেছিল। প্রয়োজনের তুলনায় খড়কুটোর মতো। একশো দিনের কাজ করে দীর্ঘদিন ধরেই টাকা পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে নামখানা, পাথরপ্রতিমা এবং সাগর থেকে একটি বড় অংশের শ্রমিক বাইরে চলে যাচ্ছে নগদ টাকা আয়ের আশায়।
নামখানার শ্রমিক পরিমলবাবুর কথায়, ‘‘পরিবারে ৫ জন লোক। কাজ নেই। জমিও নেই। কী ভাবে পেট চালাব। বড় ছেলে গিয়েছে কেরালায়। আমিও যাব বলে ঠিক করেছি।’’ এই চিত্র মহকুমার গ্রামেগঞ্জে। একশো দিনের কাজের উপর ভরসা করে থাকে অনেক পরিবার। তাই টাকা বকেয়া থাকলে শ্রমদিবস অনেকটাই কমে আসতে পারে বর্ষার আগে। গত বছর অতি বৃষ্টির জেরে শেষ তিন মাস চাষবাসও মার খেয়েছে অনেক জায়গাতেই। এমনিতেই অনেকটা কষ্টে ছিল দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের একটি বড় অংশ। দিন আনি দিন খাই পরিবারে নগদ টাকা মিলত একশো দিনের কাজেই।
মহকুমার চারটি ব্লক মিলে একশো দিনের কাজের এই মুহূর্তে প্রায় ১০ কোটি টাকা বাকি। যে সমস্ত জায়গায় কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদেরও কাজে অনীহা দেখা দিচ্ছে। বর্ষা আসার আগেই যেখানে একশো দিনের কাজের গতি বাড়ার কথা ছিল। তা ধীর গতি হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শ্রমিকের উদ্যমে ঘাটতি থাকায় ছ’মাস হয়ে গেল ছোটখাট ঠিকাদারও টাকা পাননি। ফলে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করা শ্রমিকদের টাকাও অনেক জায়গায় বাকি পড়ে রয়েছে।
নামখানার একাধিক পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিএসটির জন্য এমনিতেই ঠিকাদারদের অনেকেই কাজ করতে চাইছে না। তারপর ছোটখাট কাজের টাকা বাকি থাকলে তাঁদের কাজ করার আগ্রহ ক্রমাগত চলে যাচ্ছে। তার জেরে উন্নয়নের অনেক কাজ পিছিয়ে চলেছে একাধিক পঞ্চায়েতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy