এখানেই হামলা হয়েছিল রাজীবের (ইনসেটে) উপরে। নিজস্ব চিত্র।
সুর কাটল মহামেলার। মারপিটে প্রাণ গেল এক যুবকের।
সোমবার রাতের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের বক্তব্য, এমন অপ্রীতিকর ঘটনা এর আগে ঘটেনি ঠাকুরনগরে মতুয়া মেলা চলাকালীন। পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকেও এ জন্য দায়ী করেছেন অনেকে।
কী হয়েছিল সোমবার রাতে?
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোমবার রাত তখন সাড়ে ১০টা। ঠাকুরনগরের পাতলাপাড়ায় রাজীব বারুইয়ের পাশের একটি বাড়িতে বসে মদ খাওয়ার তোড়জো়ড় করছিল কিছু বহিরাগত যুবক। তারা সকলে বাইরে থেকে এসেছিল মেলা উপলক্ষে।
অভিযোগ, রাজীব মদ্যপানে আপত্তি তোলেন। তা থেকেই গোলমাল বাধে। প্রথমে ওই যুবকেরা ফিরে গেলেও পরে আবার আসে তারা। বাঁশের ঘা মারে রাজীবের মাথায়। তাঁকে চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে পাঠানো হয় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালে নিয়ে যাওয়া হয় আরজিকর হাসপাতালে। পথেই মারা যান ওই যুবক। রাজীবের মা সুজাতাদেবী গাইঘাটা থানায় ছেলেকে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও নির্দিষ্ট কারও নাম নেই সেখানে। তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, মারধরে না জড়ালেও রাজীবকে পেটানোর ইন্ধন দিয়েছিল বহিরাগতদের।
তিন ভাইবোনের মধ্যে রাজীবই বড়। বাবা পরিমলবাবুর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে নিজেদের মিষ্টির দোকান দেখাশোনা করেন তিনি। মেলা উপলক্ষেই বাড়ি ফিরেছিলেন। তাঁর এক আত্মীয় অরুণ বাছার বলেন, ‘‘মদ খাওয়ার প্রতিবাদ করাতেই ওরা রাজীবকে মারধর করেছিল।’’
প্রাথমিক তদন্তের পরে সে কথা অবশ্য মানতে নারাজ পুলিশ। তাদের দাবি, বহিরাগতদের সঙ্গে গ্রামের কিছু যুবকের কোনও স্থানীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে গোলমাল বেধেছিল। ওই যুবকদের মধ্যে রাজীবও ছিলেন। সে সময়ে বাঁশ দিয়ে রাজীবের মাথায় কেউ ঘা মারে।
ঘটনার মধ্যে পূর্ব পরিকল্পনা দেখতে পাচ্ছেন না তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু রাজীব খুনের ঘটনা মেলার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ বার মেলায় অন্য বছরের মতো জোরদার পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল না। মূলত সিভিক ভলান্টিয়াদের দিয়েই পরিস্থিতি সামলানো হয়েছে। পুলিশের বড় কর্তাদেরও খুব বেশি দেখা যায়নি। বাসিন্দারা জানালেন অন্য বছরগুলিতে গোটা ঠাকুরনগর এবং সংলগ্ন এলাকায় পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ থাকে। এ বার তেমনটা সে ভাবে ছিল না।
যদিও পুলিশ কর্তারা তা মানেননি। এক কর্তা বলেন, ‘‘অন্য বছরের মতোই পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল এ বার। কোথাও কোনও আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হয়নি। পাতলাপাড়ার ঘটনাটি নেহাতই বিচ্ছিন্ন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy