Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মিনাখাঁর গ্রামে পিটিয়ে খুন করা হল যুবককে

শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত, স্রেফ এই সন্দেহের বশে এক যুবককে লাঠি-রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করল কয়েকজন গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার চাপালি পঞ্চায়েতের তিউলিয়া মাঝিপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ভরত ভুঁইয়া (২৪)।

 নিহত ভরত ভুঁইয়া। ছবি: নির্মল বসু।

নিহত ভরত ভুঁইয়া। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মিনাখাঁ শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত, স্রেফ এই সন্দেহের বশে এক যুবককে লাঠি-রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করল কয়েকজন গ্রামবাসী।

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার চাপালি পঞ্চায়েতের তিউলিয়া মাঝিপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ভরত ভুঁইয়া (২৪)। তাঁর বাবা বুদ্ধদেববাবুর অভিযোগ, সম্পত্তির বিবাদকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনামাফিক ছেলেকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় রতন মণ্ডল, ভীম ভুঁইয়া, মিঠুন মণ্ডল, ঝন্টু মণ্ডল-সহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশি টহল জারি রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসনাবাদের আবাদ খড়মপুর গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেবের। তাঁর দুই ছেলে ভরত এবং স্বপন। গত বছর পাঁচেক আগে বুদ্ধদেববাবু পাশের মিনাখাঁ থানার চাপালি পঞ্চায়েতের তিউলিয়া মাঝিপাড়ায় পনেরো কাঠা জমি কিনে বসবাস শুরু করেছেন। ওই জমিকে কেন্দ্র করে বুদ্ধদেববাবুর পরিবারের সঙ্গে বিবাদ বাধে প্রতিবেশী রতন মণ্ডল, ভীম ভুঁইয়াদের। দু’পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারপিট বাধে। মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। একে অন্যের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কয়েকটি অভিযোগও দায়ের হয়।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভরত গ্রামের মুদির দোকানে বসে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখছিলেন। রাত ৮টা নাগাদ বাড়ির পথ ধরেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতেই ঝন্টু ও তার স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন বেরিয়ে আসে। ঝন্টুর দাবি, তার বাড়ির মহিলা বাথরুমে থাকার সময়ে সেখানে ঢুকে অসন্মানের চেষ্টা করেছিল ভরত। এ কথা জানাজানি হতেই জনতা ভরতকে তাড়া করে ধরে ফেলে। একটি ঘরে আটকে রেখে শুরু হয় গণধোলাই। লাঠি, শাবল, লোহার রড দিয়ে চলে মারধর।

খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ গ্রামে আসে। ধানের জমিতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত ভরতকে উদ্ধার করে মিনাখাঁ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বালিকা মান্না বলেন, ‘‘মহিলাদের চিৎকার শুনে আমরা কয়েকজন গিয়ে দেখি, একটি ঘরে আটকে রেখে ভরতকে মারধর করা হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে গেলে আমাদেরও মারা হয়।’’

শুক্রবার বসিরহাট জেলা হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন দাদা স্বপন ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘শ্লীলতাহানির অভিযোগ স্রেফ বাহানা। সম্পত্তির বিবাদকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার ভাইকে আগে মারধর করেছিল রতন, ভীমরা। ওরা চাইছিল, আমরা যেন ওই জমি ছেড়ে দিই। এ জন্য নানা ভাবে হুমকিও দিচ্ছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, ভাইকে একা পেয়ে ওরা তাড়া করে। বাঁচার জন্য ভাই যখন দৌড়োচ্ছিল, সে সময়ে ওদেরই পরিবারের এক মহিলা পরিকল্পনামাফিক শ্লীলতাহানির মিথ্যা অভিযোগে চিৎকার করে লোক জড়ো করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Lynched
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE