দিগন্ত সরকার
রেললাইন থেকে মিলল এক তরুণের মৃতদেহ। রবিবার রাতে, পলতা-ইছাপুরের মাঝে। মৃতের নাম দিগন্ত সরকার (২৩)। পলতার পিএন দাস কলেজের কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। বাড়ি মোহনপুরের বাবনপুরের গ্যাস গোডাউন এলাকায়।
এই ঘটনায় খুনের অভিযোগ তুলেছেন দিগন্তের পরিজনেরা। অভিযোগ, ওই তরুণকে ফোন করে ডেকেছিল তাঁরই স্কুলপড়ুয়া প্রেমিকা। তার পরে আর বাড়ি ফেরেননি ওই তরুণ। তবে দিগন্তের মৃত্যু ট্রেনে কাটা পড়ে হয়েছে না কি খুন করা হয়েছে তাঁকে, তা নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে।
ওই রাতে কী ঘটেছিল?
দিগন্তের বন্ধু রাজু দত্ত জানান, তাঁরা পলতা হেল্থ সেন্টারের মাঠে পিকনিক করছিলেন। দিগন্ত তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁর একটি ফোন আসে। তখন তিনি বন্ধুদের জানান, প্রেমিকা তাঁকে ফোন করে পলতা স্টেশনে ডাকছে। তাঁদের কেউ যদি তাঁকে মোটরবাইকে করে সেখানে পৌঁছে দেন। বন্ধুরা তাঁকে অত রাতে স্টেশনে যেতে বারণ করেন। তার পরে সবার অলক্ষ্যে কখন তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন, তা কেউ খেয়াল করেননি বলে দাবি বন্ধুদের।
রাজু জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে দিগন্তের সঙ্গে তাঁর প্রেমিকার গোলমাল চলছিল। দিগন্ত তাঁদের জানিয়েছিলেন, অন্য কোনও তরুণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে ওই কিশোরী। সম্ভবত সেই বিষয়ে কথা বলার জন্যই তাঁকে ডাকে ওই কিশোরী। রাজু বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আমাদের এক পরিচিত ব্যক্তি ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে
জখম দিগন্তকে দেখে চিনতে পেরে আমাদের খবর দেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছে ওকে বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে দিগন্তকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।’’ রাজু জেনেছেন, পলতা এবং ইছাপুর স্টেশনের মাঝখান থেকে এক টোটোচালক দিগন্তকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
পুলিশ জেনেছে, এর পরে রাতেই ওই কিশোরীর বাড়িতে যান দিগন্তের বন্ধুরা। তাঁদের দাবি, সে স্বীকার করে নেয় যে, ফোন করে সে-ই দিগন্তকে ডেকেছিল। তার সঙ্গে আরও দুই তরুণ ছিলেন। তাঁরা কারা, তা ওই কিশোরী জানায়নি। সে জানায়, কথা বলার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় জখম হন দিগন্ত। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরীর দাবি, ট্রেনের ধাক্কাতেই মৃত্যু হয়েছে দিগন্তের। কিন্তু দিগন্তের পরিবার এবং বন্ধুদের দাবি, দিগন্তের মাথার পিছনের দিকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে ওই তরুণকে।
পুলিশ জানায়, দিগন্তের বন্ধুরাই তাঁর বাড়িতে খবর দেন। সোমবার দিগন্তের বাবা দীনবন্ধু সরকার অভিযোগ করেন, ‘‘আমার ছেলে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়নি। ওর সারা দেহে কোথাও কোনও চোট নেই।
শুধু মাথার পিছন দিকে আঘাত। ওকে খুন করা হয়েছে।’’ পেশায় টোটোচালক দীনবন্ধুবাবু এ দিন জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই পলতার বাসিন্দা ওই কিশোরীর সঙ্গে তাঁর ছেলের সম্পর্ক ছিল। স্থানীয় একটি স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরীর নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁদের বাড়িতেও। এ দিন সকালে দীনবন্ধুবাবু প্রথমে টিটাগড় এবং নোয়াপাড়া থানায় বিষয়টি জানান। কিন্তু ঘটনাটি রেল পুলিশের এলাকায় ঘটায় রাতে নৈহাটি জিআরপি থানায় অভিযোগ করেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই কিশোরীর বয়ান নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। অত রাতে কেন সে দিগন্তকে ডাকল? তার সঙ্গে কারা ছিল? রাতে দিগন্ত ট্রেনে ধাক্কা খেলেও কেন তাঁর বাড়িতে খবর দিল না কিশোরী, জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy