Advertisement
০১ জুন ২০২৪

তৃণমূল নেতাকে খুন, অভিযুক্ত সিপিএম

ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হল দেগঙ্গার এক তৃণমূল নেতার। শনিবার রাতে দেগঙ্গার তেলিয়া গ্রামের তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির নেতা মহিফুল্লা আলি মোল্লার (৩৫) দেহ হাড়োয়ার খাড়ুবালা পঞ্চায়েতের মোড়লহাটা এবং নেটুরহাটি গ্রামের মাঝে একটি মেছোভেড়ির কালভার্টের তলা থেকে উদ্ধার হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। রবিবার বিকেলে মহিফুল্লার দেহ বাড়িতে আসার পরে সেখানে যান খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি, বিধায়ক জুলফিকার আলি মোল্লা, শিলভদ্র দত্ত, ব্লক সভাপতি অরূপ বিশ্বাস-সহ দলীয় নেতৃত্ব।

শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।

শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হল দেগঙ্গার এক তৃণমূল নেতার। শনিবার রাতে দেগঙ্গার তেলিয়া গ্রামের তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির নেতা মহিফুল্লা আলি মোল্লার (৩৫) দেহ হাড়োয়ার খাড়ুবালা পঞ্চায়েতের মোড়লহাটা এবং নেটুরহাটি গ্রামের মাঝে একটি মেছোভেড়ির কালভার্টের তলা থেকে উদ্ধার হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। রবিবার বিকেলে মহিফুল্লার দেহ বাড়িতে আসার পরে সেখানে যান খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি, বিধায়ক জুলফিকার আলি মোল্লা, শিলভদ্র দত্ত, ব্লক সভাপতি অরূপ বিশ্বাস-সহ দলীয় নেতৃত্ব। নিহতের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ওই পরিবারের এক জন যাতে চাকরি পান, তার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।

এই ঘটনায় সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যের জন্যই ‘উৎসাহিত হয়ে’ সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তৃণমূল কর্মীদের খুন করতে আসরে নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তিনি বলেন, “রাজ্যে আমাদের দল ক্ষমতায় আসার পরে শুধু উত্তর ২৪ পরগনাতেই ৩৭ জন দলীয় কর্মী খুন হলেন। তার মধ্যে হাড়োয়া-দেগঙ্গায় আছেন ৯ জন।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর দাবি, মহিফুল্লাকে পরিকল্পিত ভাবে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “মজিদ মাস্টার (শাসনের সিপিএম নেতা) চাইছেন অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে।”

দিন কয়েক আগে মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টার শাসনের বাড়িতে ফিরতে গিয়ে হেনস্থা হন। ওই ঘটনায় অভিযোগ ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু এ দিন বলেন, “খুনের পর খুনের ঘটনার নায়ক মজিদ মাস্টার শাসনে ঢুকবে, আর আমরা বসে বসে দেখব, সেটা হবে না। বুদ্ধ-বিমান-গৌতমকে চ্যালেঞ্জ করছি, ক্ষমতা থাকলে মজিদকে শাসনে ঢোকান। প্রয়োজনে রক্তের বিনিময়েও মজিদের শাসনে ঢোকা বন্ধ করব।” সিপিএমকে তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, “নবান্ন অভিযান পরে হবে। আগে গৌতমবাবুরা শাসন অভিযান করে দেখান। কত ক্ষমতা দেখা যাবে।”

খুনের ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ জড়িত বলে মানতে চাননি জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম নেতা ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি বলেন, “এক জন সমাজবিরোধীর মুখে যে ভাষা মানায়, তা মন্ত্রীর মুখে মানায় না।” ঠিকাদারি নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই মহিফুল্লা খুন হয়েছেন বলে তাঁর দাবি। ইমতিয়াজ বলেন, “মনে রাখতে হবে, ওই গ্রামে সিপিএমের সদস্য নিহত তৃণমূল নেতার ময়না-তদন্তের সময়ে হাজির ছিলেন। আমরাও চাই, দ্রুত পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করুক।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে মহিফুল্লার মোবাইলে ফোন করে কেউ এক জন জরুরি প্রয়োজন আছে বলে ডাকে। মোটর বাইক নিয়ে হাড়োয়ার দিকে বেরিয়ে যান তিনি। রাতে বাড়ি ফেরার পথে বিদ্যাধরী নদী পার হওয়ার আগে হাড়োয়ার খাড়ুবালা পঞ্চায়েতের মোড়লহাটা এবং নেটুরহাটি গ্রামের মাঝে ৪-৫ জন দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকায়। বিপদ বুঝে মহিবুল্লা পালানোর চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীরা চপার এবং ভোজালি দিয়ে তাঁকে কোপায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার নলিও কেটে দেওয়া হয়।

নিহতের ভাই তরিকুল আলি মোল্লা হাড়োয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও পুলিশ রবিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”

রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মহিবুল্লার বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়। ইটের গাঁথনির উপরে টালির ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ঘরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে মহিবুল্লার স্ত্রী মাসুরা বিবি এবং তাঁর চার মেয়ে। এলাকায় আরজি পার্টির সম্পাদকও ছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। নিহতের স্ত্রী মাসুরা এবং দাদা মান্নান আলি মোল্লা বলেন, “ইটভাটাতে শ্রমিক দেবে বলে মহিফুল্লার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন হাড়োয়ায় সিপিএমের কয়েক জন নেতা-কর্মী। তারাই মোবাইলে ডেকে পাঠায়। কাছেই বাজার থেকে ছোট ভাই তোয়েব আলি মোল্লার কাছ থেকে মোটর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মহিবুল্লা। পরে তাঁকে খুনের খবর আসে। দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc cadre murder mohifullah ali mollar haroa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE