Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মোটর বাইকে তাড়া করে দুষ্কৃতীকে ধরলেন যুবক

পরিচিত কাকুর টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। দেখে আর আগু-পিছু ভাবার সময় নেননি বছর পঁচিশের যুবক মিরাজুল ইসলাম। কাকুকে পিছনে বসিয়ে তিনিও দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেন। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এক জনকে ধরেও ফেলেন তিনি। উদ্ধত রিভলবারের সামনেও এক বারের জন্য ঘাবড়াননি মিরাজুল। কিন্তু তাঁর আফসোস একটাই, “এত চেষ্টা করেও টাকাটা উদ্ধার করতে পারলাম না।”

মিরাজুল ইসলাম।

মিরাজুল ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০১:০৫
Share: Save:

পরিচিত কাকুর টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। দেখে আর আগু-পিছু ভাবার সময় নেননি বছর পঁচিশের যুবক মিরাজুল ইসলাম। কাকুকে পিছনে বসিয়ে তিনিও দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেন। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এক জনকে ধরেও ফেলেন তিনি। উদ্ধত রিভলবারের সামনেও এক বারের জন্য ঘাবড়াননি মিরাজুল। কিন্তু তাঁর আফসোস একটাই, “এত চেষ্টা করেও টাকাটা উদ্ধার করতে পারলাম না।”

শুক্রবার তখন বেলা ১২টা। কদম্বগাছির একটি ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ টাকা তুলে দেগঙ্গার কার্তিকপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমেছিলেন গোপাল মিত্র। বেলিয়াঘাটায় তাঁর ইটভাটা আছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গোপালবাবু বাস থেকে নামতেই তিন যুবক অতর্কিতে মোটর বাইক নিয়ে এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তা ঁকে। টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে বারাসতের দিকে টাকি রোড ধরে দ্রুত গতিতে পালায়।

সে সময়ে কার্তিকপুর বাজারে ওষুধ কিনতে এসেছিলেন মিরাজুল। গোপালবাবুর ছেলের পরিচিত তিনি। গোপালবাবুর কাছে মিরাজুল জানতে পারেন, টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। দ্বিতীয় বার ভাবেননি। মিরাজুল মোটর বাইকের পিছনে গোপালবাবুকে তুলে নিয়ে দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেন।

ভিড়ে ঠাসা টাকি রোডে খুব জোরে বাইক নিয়ে পালাতে পারছিল না দুষ্কৃতীরা। দূর থেকে তাদের দেখতে পেয়ে যান মিরাজুল। অনেক ক্ষণ ধরে গতি বাড়িয়েও তাদের নাগাল পাচ্ছিলেন না। অবশেষে, প্রায় ১৫ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে কাচকলের কাছে দুষ্কৃতীদের বাইকের পাশে গিয়ে পৌঁছন। মোটর বাইকে বসেই এক দুষ্কৃতী রিভলবার বের করে গুলিয়ে চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু পিছু না হঠে দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করার জন্য মরিয়া মিরাজুল। বিপদ বুঝে তিন দুষ্কৃতী টাকি রোড ছেড়ে বাঁ দিকে ষন্ডালিয়া স্টেশনের রাস্তা ধরে। স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছনোর পরে দু’টি বাইকই তখন গায়ে গায়ে টক্কর দিচ্ছে। লাথি মেরে দুষ্কৃতীদের বাইক ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিরাজুল। টাকার ব্যাগ দিয়ে, এলোমেলো হাত চালিয়ে দুষ্কৃতীরাও মিরাজুলকে দমানোর চেষ্টা করছে তখন। এরপরে দুষ্কৃতীদের বাইক সোনাটিকরি গ্রামে ইটের রাস্তা ধরে। ভাঙাচোরা, বৃষ্টির জলে পিছল রাস্তায় আর সুবিধা করতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। কিছু দূর গিয়ে দুষ্কৃতীদের নাগালের মধ্যে পেয়ে যান মিরাজুল। ঝাঁপিয়ে পড়ে গাড়ি আটকান তিনি। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তত ক্ষণে দুই ছিনতাইবাজ টাকার ব্যাগ নিয়ে পাটখেতের মধ্যে দিয়ে পালিয়েছে। অন্য এক জনের সঙ্গে মিরাজুলের মারপিট শুরু হয়।

ইতিমধ্যে কার্তিকপুর থেকে আরও লোকজন গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে এলাকায়। জুটে গিয়েছে আশপাশের বাসিন্দারাও। সকলে মিলে ধরে ফেলে ওই দুষ্কৃতীকে। গাড়িতে তুলে তাকে নিয়ে আসা হয় কার্তিকপুর বাজারেই। সেখানে শুরু হয় গণপিটুনি। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বিশ্বনাথপুুর প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। ধৃত দুষ্কৃতীর নাম মানিয়াল সিংহ। বাড়ি নৈহাটির বীজপুরে।

পুলিশ জানতে পেরেছে, তিন জনের দলটি গাঁজা বিক্রি করতে যাচ্ছিল দেগঙ্গায়। পথে তাদের অন্য দুই সাগরেদ মোবাইলে খবর দেয়, এক জন ব্যাঙ্ক থেকে দু’লক্ষ টাকা তুলে বাসে চেপে কার্তিকপুরে নামবে। খবর পাকাই ছিল। গোপালবাবুর জন্যই ওত পেতেছিল মানিয়ালরা। তার আগে অবশ্য তাদের কাছে থাকা ৪ কেজি গাঁজা বাজারের কাছেই এক জায়গায় লুকিয়ে ফেলেছিল দুষ্কৃতীরা। পরে মানিয়ালকে জেরা করে সে সব উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। দুষ্কৃতীদের বাইকটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এত কিছুর পরে মিরাজুল তত ক্ষণে এলাকার ‘হিরো’ হয়ে গিয়েছে। লোকের মুখে মুখে ফিরছে তাঁর নাম। দেগঙ্গার ওসি পলাশ চট্টোপাধ্যায় জানান, সাহসিকতার জন্য পুলিশের তরফে পুরস্কৃত করা হবে তাঁকে। কিন্তু মিরাজুলের আফসোস একটাই, “এত চেষ্টা করেও কাকুর টাকার ব্যাগটা উদ্ধার করতে পারলাম না।” তবে তার আশা, পুলিশ নিশ্চয়ই ধৃত দুষ্কৃতীদের জেরা করে বাকিদের খোঁজ পাবে। উদ্ধার হবে টাকা।

কী বলছেন গোপালবাবু?

মিরাজুলের সাহসিকতায় মুগ্ধ তিনি। বললেন, “ছেলেটা আমার জন্য যা করল, তা ভোলা যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

miscreants snatcher bank mirajul islam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE