Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
BJP

ত্রিপুরাজয়ের অভিযানে যাচ্ছে বাংলার বিজেপি, ৪০ নেতার ঠিকানা হয়ে যাবে ‘বঙ্গভাষী’ আগরতলা

এক রাজ্যের নির্বাচনে অন্য রাজ্যের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া নতুন নয়। কিন্তু এই প্রথম বার বাংলার নেতাদের বড় দায়িত্ব। দ্বিতীয় বার ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যে দায়িত্ব সামলাতে হবে সুকান্ত, শুভেন্দুদের।

Tripura Assembly Election 2023

ত্রিপুরায় যাবেন বাংলার বিজেপি নেতারা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৫৯
Share: Save:

সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই বিধানসভা নির্বাচন ত্রিপুরায়। সেই ভোটে গেরুয়া বিজয় নিশ্চিত করতে বড় দায়িত্ব পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। বড় মুখেরা তো প্রচারে যাবেনই, সেই সঙ্গে বাংলার আরও ৪০ জন নেতা মাস দেড়েকের জন্য স্থায়ী আস্তানা গাড়বেন ত্রিপুরায়। ৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভার ৪০টি কেন্দ্রে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন তাঁরা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই সেই তালিকা তৈরি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিলমোহর মিললেই নতুন বছরের গোড়ায় ওই নেতারা আগরতলার উদ্দেশে রওনা দিয়ে দেবেন। এর পরে যাঁর যে আসনে দায়িত্ব সেখানে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেবেন। ফিরবেন ভোটের একেবারে শেষে।

বাংলায় বামেদের হাত থেকে ২০১১ সালে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। তার পর ত্রিপুরাও বামেদের হাতছাড়া হয়। ২০১৮ সালে টানা ৫ বার ক্ষমতায় থাকা বামেদের সরিয়ে বিজেপি ত্রিপুরা দখল করে। ৫ বছর আগে ২০১৩ সালে শূন্য ছিল বিজেপি। তারাই ক্ষমতায় আসে ৩৪টি আসনে জিতে। বামেরা ৫০টি আসন থেকে নেমে যায় ১৬টি আসনে। কিন্তু ক্ষমতায় এসেও বিজেপি খুব যে সুবিধা করতে পেরেছে তা নয়। প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বুঝতে পেরে গত মে মাসে মুখ্যমন্ত্রীও বদল করতে হয়েছে বিজেপিকে। বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বে আনা হয় মানিক সাহাকে।

এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনকে স্বভাবতই যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর, প্রচারে বাংলার নেতারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন ত্রিপুরায়। দফায় দফায় প্রচারে যাবেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ ছাড়াও যে নেতারা স্থায়ী ভাবে মাস দেড়েকের জন্য যাবেন, তাঁদের বাছাই করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলায় ভোট পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং সাফল্য দেখাতে পেরেছেন, এমন নেতারাই ওই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। বাংলার বেশ কয়েক জন সাংসদ ও বিধায়ককেও ত্রিপুরার ভোটে ‘ব্যবহার’ করতে চায় বিজেপি।

তার প্রাথমিক কারণ ত্রিপুরার ভাষা। উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকাগুলি ছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যের বড় অংশ বঙ্গভাষী। সেখানকার মানুষ মূলত বাংলা ভাষায় কথা বলেন। ফলে বাঙালিদের একটা ‘ভাষাগত সুবিধা এবং স্বাচ্ছন্দ্য’ রয়েছে। প্রচারের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, সেই ভাষায় নেতারা কথা বললে বা বক্তৃতা দিলে তা বেশি কাজ দেয় বলেই জনপ্রিয় অভিমত। যে কারণে, অন্যান্য রাজ্যের বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন দলের বাঙালি নেতা বা নেত্রীকে ভোটের প্রচারে কাজে লাগানো হয়।

গত বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার ভোট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল দেওধর। সে বারেও রাজ্য থেকে বিজেপি কর্মীদের একটা অংশ গিয়েছিলেন আগরতলায়। কিন্তু এই ভাবে বিধানসভা ধরে ধরে বাংলার বিজেপির নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এ বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সেই মর্মে নির্দেশ আসার পরে সুকান্ত এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী ওই তালিকা বানিয়ে পাঠিয়েছেন।

ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ায় ক্ষমতায় থেকেও কি চাপে বিজেপি? প্রশ্নের জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘বিজেপি একটা সর্বভারতীয় দল। শুধু নামে নয়, কাজেও। আর নির্বাচন এলে বাংলা বিজেপি, ত্রিপুরা বিজেপি— এমন ভাগ থাকে না। আমরা সবটাই দলের কাজ মনে করি। গুজরাতে বিজেপির শক্তি তো কম নয়! তার পরেও তো আমি প্রচারে গিয়েছিলাম। তাই বিজেপির কাছে এটা নতুন কিছু নয়।’’

এখন ত্রিপুরায় বিরোধী আসনে থাকা সিপিএম তো বটেই, তৃণমূলও ‘বড় প্রতিপক্ষ’ হতে পারে বিজেপির। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাংলার শাসকদল। দায়িত্বে দলের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরার পুর নির্বাচনের পাশাপাশি ৪টি বিধানসভার উপনির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল তৃণমূল। তাতে ঘাসফুল খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও বিধানসভা নির্বাচনে যে তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে, তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলেছে। গত জুলাইতেই স্থায়ী রাজ্য দফতরের উদ্বোধন হয়েছিল আগরতলায়। সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েক বার ত্রিপুরায় গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি ডিসেম্বরেই দিল্লিতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেকের উপস্থিতিতে ত্রিপুরার ৫ কংগ্রেস নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষকান্তি বিশ্বাস। আগেই রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সুবল ভৌমিককে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। কয়েক মাস ওই পদ খালি থাকার পরে সদ্য দায়িত্ব পেয়েছেন পীযূষকান্তি।

অর্থাৎ, তৃণমূল ত্রিপুরার বিধানভা নির্বাচনে লড়াই দেওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে। সেই ভোটে গেরুয়া শিবিরের অনেকটাই নির্ভরতা রয়েছে বাংলার নেতাদের উপরে। ফলে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন দিক দিয়ে বাংলারই ‘দাপট’ দেখবে নতুন বছর।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Tripura Tripura Assembly Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE