বেআইনি সিম কার্ডের রমরমা রুখতে কড়া নির্দেশ রয়েছে ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র। সিম নেওয়ার সময় গ্রাহকের ছবি ও নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র জমা নেওয়া বাধ্যতামূলক। তা সত্ত্বেও বেআইনি সিম কার্ডের রমরমা কারবার চলছে বিভিন্ন জায়গায়। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে কাঁকসা ও বুদবুদ থানার পুলিশ বেআইনি সিম কার্ড বিক্রির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় ১১৪টি চালু সিম উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পঠানকোট কাণ্ডের পরে বেআইনি সিমের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা হয়েছে। পানাগড়ে বিমানঘাঁটি রয়েছে। বুদবুদে রয়েছে সেনাছাউনি। কাজেই কাঁকসা ও বুদবুদ থানা এলাকায় বেআইনি সিমের কারবার বন্ধ করা জরুরি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে কাঁকসার এগারো মাইল ও দোমড়া এলাকায় অভিযানে যায় পুলিশ। এগারো মাইল থেকে গ্রেফতার করা হয় সাত জনকে। এ ছাড়া দোমড়া থেকে এক জনকে ধরা হয়। একই ভাবে বুদবুদ থেকেও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা পরিচয়পত্র ছাড়াই চালু সিম বিক্রির সঙ্গে যুক্ত বলে জানায় পুলিশ। শনিবার দুর্গাপুর আদালত ধৃতদের দু’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
কী ভাবে পরিচয়পত্র ছাড়া চালু সিম বিক্রির কারবার ফেঁদে বসেছিল ধৃতেরা? পুলিশ জানায়, সিম কার্ড পেতে হলে গ্রাহককে পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়। তখন গ্রাহককে যে সিম কার্ডটি দেওয়া হয়, সেটি চালু থাকে না। গ্রাহকের কাছে নেওয়া পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পরে তা পাঠানো হয় মোবাইল সংযোগের পরিষেবা দেওয়া সংস্থার কাছে। সেই সংস্থা নিশ্চিত হওয়ার পরে সিম কার্ডটি চালু করে দেয়। সেই হিসেবে পরিচয়পত্র পিছু একটিই সিম চালু হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে ধৃতেরা গ্রাহকদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র জমা নেওয়ার পরে তা হুবহু নকল করে নিত। এর পরে সেই নকল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একাধিক সিম তুলত। পরিষেবা দেওয়া সংস্থাগুলি ধরতে না পেরে সেই সব সিম চালু করে দিত। এর পরে ধৃতরা চড়া দামে ওই সব চালু সিম গ্রাহকদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র না নিয়েই বিক্রি করে মুনাফা লুঠত। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, এই ধৃতদের টাকা দিলেই সিম মিলত। কোনও পরিচয়পত্রের দরকার হত না। যা একেবারে আইনবিরুদ্ধ এবং বিপজ্জনক।
২০১২ সালে পানাগড়ে জাতীয় সড়কের ধারে একটি দোকান থেকে এমন বহু বেআইনি সিম কার্ড উদ্ধার হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল এক জনকে। এক গ্রাহক দোকানে মোবাইলের রিচার্জ করতে গিয়ে দেখেন, কয়েক মাস আগে তাঁর সিমের জন্য জমা দেওয়া পরিচয়পত্র দেখে ফর্ম পূরণ করছেন অন্য এক জন। এর পরেই তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ গিয়ে দেখে, বহু গ্রাহকের পরিচয়পত্র ও ছবি ব্যবহার করে একাধিক সিম কার্ড তোলা হয়েছে।
বৈধ সিম কার্ডের ব্যবসায়ীদের একাংশের আবার অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এ ভাবে আইন ভেঙে সিম বিক্রির রমরমা চলছে। যদিও সে কথা অস্বীকার করে পুলিশের আশ্বাস, পঠানকোট-কাণ্ডের পরে কড়াকড়ি বাড়ানো হয়েছে। তবে গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে। পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি দেওযার সময়ে তা সই করে এবং ফর্ম নিজের হাতে পূরণ করে দিলে ঝুঁকি অনেকটা এড়ানো যেতে পারে। কোনও গরমিল নজরে এলে সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy