Advertisement
১৪ জুন ২০২৪

আপনি আচরি প্লাস্টিক বর্জনের বার্তা স্কুলের

নিজেদের আচরণে, রোজকার জীবনযাত্রায় প্লাস্টিক বর্জন করে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে চলেছে সাগরের রুদ্রনগর চৌরঙ্গি অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুল। খাস শহর কলকাতায় প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ যখন বিশ বাঁও জলে, সেই সময়েই প্লাস্টিক ছাড়া কাজ চালানোর সদর্থক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্তের ওই স্কুল।

প্লাস্টিক-বিরোধী অভিযান সাগরের রুদ্রনগর চৌরঙ্গি অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

প্লাস্টিক-বিরোধী অভিযান সাগরের রুদ্রনগর চৌরঙ্গি অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা, কেউই কোনও রকম প্লাস্টিক ব্যবহার করেন না। প্লাস্টিকের কোনও ব্যাগ ব্যবহার করে না পড়ুয়ারা। প্লাস্টিকের বোতলে জলও খায় না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা চা খান কাগজের কাপে।

নিজেদের আচরণে, রোজকার জীবনযাত্রায় প্লাস্টিক বর্জন করে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে চলেছে সাগরের রুদ্রনগর চৌরঙ্গি অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুল। খাস শহর কলকাতায় প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ যখন বিশ বাঁও জলে, সেই সময়েই প্লাস্টিক ছাড়া কাজ চালানোর সদর্থক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্তের ওই স্কুল। সেখানকার পড়ুয়া-শিক্ষকদের প্রয়াস শুধু স্কুলে সীমাবদ্ধ নেই। গোটা এলাকাতেই প্লাস্টিক-বিরোধী প্রচার চলছে তাঁদের। জুটছে স্বীকৃতিও।

সচেতনতার সূচনা হয়েছিল বৃক্ষরোপণ দিয়ে। ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪৯। শিক্ষক-শিক্ষিকা সাত জন। ২০১৬ সালে পড়ুয়াদের মধ্যে গাছ বিলি শুরু হয়। ক্লাসে মন দিয়ে পড়াশোনা করার পুরস্কার হিসেবেও দেওয়া হত গাছের চারা। পড়ুয়ারা বাড়ি নিয়ে গিয়ে চারাগুলিকে বড় করে তুলছে। প্রধান শিক্ষক তাপস মণ্ডল রাজ্য সরকারের পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনাসভায় যোগদানের পাশাপাশি যোগাযোগ করেন আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থার সঙ্গে। ২০১৭-য় পড়ুয়াদের নিয়ে গঙ্গাসাগরে যান শিক্ষকেরা। দেখেন, জলের স্রোতে সমুদ্রপাড়ে জমা হচ্ছে অজস্র প্লাস্টিক। শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের বোঝান, প্লাস্টিক জমতে থাকলে সেই মাটিতে গাছ বড় হতে পারে না। শিকড় জড়িয়ে যায় প্লাস্টিকে। এর থেকেই স্কুল ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে প্লাস্টিকমুক্ত করার ভাবনা জাগে। ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষে পরিচ্ছন্নতার জন্য রাজ্য সরকারের নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার পায় রুদ্রনগরের ওই স্কুল।

প্রধান শিক্ষক জানান, ‘আপনি আচরি’ মন্ত্রে গত ফেব্রুয়ারি থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে প্লাস্টিক-বিরোধী প্রচার কর্মসূচি চালাচ্ছেন তাঁরা। ব্যানার, পোস্টার, প্রচারপত্র নিয়ে এলাকায় মিছিল হয় নিয়মিত। প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের কুফল বোঝানো হয় বাজার এলাকায় গিয়ে। বোঝানো হয়, প্লাস্টিক মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। গবাদি পশুরা প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। তাতে প্রাণসংশয় হয় তাদের। পড়ুয়ারা হাতে হাতে এলাকা সাফ করে। প্লাস্টিক নিয়ে সচেতনতা প্রচারের স্বীকৃতি হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থা কয়েক মাস আগে তাঁদের পুরস্কৃত করেছে। পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে কেন্দ্রের অঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছে ওই স্কুলের পড়ুয়া ধ্রুবজ্যোতি নস্কর।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন ঘনশ্রী বাগ বলেন, ‘‘রুদ্রনগরের ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় চমৎকার কাজ করছে।’’ প্রধান শিক্ষক জানালেন, স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিম হাজরাও তাঁদের কাজে খুবই উৎসাহ দেন।

সামনেই গঙ্গাসাগর মেলা। তার আগে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সোমবার এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। জেলার অন্যান্য ব্লকে পড়ুয়াদের নিয়ে গিয়ে প্লাস্টিকের অপকারিতা সম্পর্কে প্রচার চালাতে চান প্রধান শিক্ষক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Plastic Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE