Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Harassment

র‌্যাগিং নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি আক্রান্ত আজিজুরের

২০০৪ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন আজিজুর। অভিযোগ, তখন কয়েক জন ‘সিনিয়র’ পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে তাঁকে র‌্যাগিং করেন।

আজিজুর রহমান।

আজিজুর রহমান। —নিজস্ব চিত্র।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
চাকুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫০
Share: Save:

প্রায় বছর কুড়ি আগের কথা। র‌্যাগিং নিয়ে একই রকম অভিযোগ। তবে নিষ্পত্তি এবং ফলাফল ছিল একেবারে অন্য রকম।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে সে সব কথাই মনে করাচ্ছিলেন উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার বাসিন্দা আজিজুর রহমান। বর্তমানে কালিম্পঙের গরুবাথান সরকারি কলেজের শিক্ষক, চল্লিশ ছুঁইছুঁই আজিজুর এখন পড়ুয়াদের র‌্যাগিং সম্পর্কে সচেতন করেন।

কী ঘটেছিল আজিজুরের জীবনে? ২০০৪ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন আজিজুর। অভিযোগ, তখন কয়েক জন ‘সিনিয়র’ পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে তাঁকে র‌্যাগিং করেন। আরও অভিযোগ, অশালীন আচরণ, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল আজিজুরকে। আজিজুর বলেন, “বাবা স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। কিন্ত র‌্যাগিংয়ের সে রাতে মনে হয়েছিল, জীবনে ছেদ পড়ে গেল। আজও সে সব অত্যাচারের কথা ভাবলে শিউরে উঠি। তবুও সাহস করে হস্টেল সুপারকে অভিযোগ জানিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।’’

আজিজুর জানান, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই এর পরে হস্টেল সুপার থানায় নালিশ করেছিলেন। মামলাটি অনেক দূর গড়ায়। তাঁর দাবি, ‘‘যে সিনিয়র পাঁচ জনের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছিলাম, তাঁরা ক্ষমা চান। তাঁদের পরিবারের লোকজনও ক্ষমা চেয়েছিলেন। পরে সিনিয়রদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিলিগুড়ি আদালতের মাধ্যমে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ স্কুল শিক্ষক। এক জন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এখনও সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।’’

২০০৬-এ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতকোত্তর পাশ করার এক বছরের মধ্যেই হাই স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হন আজিজুর। ২০১৭ সালে কালিম্পং গরুবাথান সরকারি কলেজে যোগ দেন। এখন কলেজে পড়ানোর পাশাপাশি, পড়ুয়াদের র‌্যাগিং বিষয়ে সচেতন করেন। তাঁর কথায়, ‘‘র‌্যাগিং যে ভয়ঙ্কর ঘৃণ্য একটা ব্যাপার এবং তা করলে আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আছে, সে সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করি। যাতে কেউ র‌্যাগিং করতে না চায়।’’

প্রায় বছর কুড়ি আগের ওই সময়ে আজিজুরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সহপাঠী মহম্মদ ইসমাইল। বর্তমানে চাকুলিয়ার সিরশি সিনিয়র হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ইসমাইল বলেন, ‘‘ওই সময় নির্যাতিত বা নির্যাতিতার মধ্যে এতটাই আতঙ্ক কাজ করে যে, একা নিজেকে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তখন সহপাঠীদের মানসিক ভাবে পাশে থাকাটা জরুরি।’’

আজিজুরের উপরে র‌্যাগিং অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন বলেন, “সে দিন যা ঘটেছিল, তা পরে মিটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের হস্টেলে জুনিয়র পড়ুয়াদের নিয়ে হেনস্থা করার একটা প্রবণতা অনেক সময় সিনিয়রদের মধ্যে কাজ করে। তার পরিণাম কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল যাদবপুর। এমন হোক, চাই না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE