Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Women Trafficking

ওমানে যৌন চক্রের পীড়ন, উদ্ধার উল্কার

ওমানে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দুষ্ট চক্রের দুই সদস্যকে তিনি সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে জানালেন উল্কা। গত ৭ জানুয়ারি এক ব্যক্তি তাঁকে এবং জয়নগরের এক মহিলাকে প্রথমে গুয়াহাটি নিয়ে যান।

A Representative image of sexual Harassment

যৌন ব্যবসায় নামতে না-চাইলে জুটত কিল-লাথি আর ডান্ডার মার। প্রতীকী ছবি।

মিলন হালদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৩
Share: Save:

স্বপ্নটা আজন্মলালিত। কিন্তু বিদেশে পা রাখার পরে মুখ থুবড়ে পড়তে সময় নেয়নি উল্কার (ছদ্মনাম) সেই স্বপ্নের উড়ান। বিউটিশিয়ানের কোর্স করে বিদেশে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে ওমান পৌঁছতেই উল্কার চোখের সামনে নেমে আসে নিকষ কালো অন্ধকার। বুঝতে পারেন, তাঁকে আনা হয়েছে দেহ ব্যবসায় নামাতে।

কলকাতায় ফিরে ধরা গলায় উল্কা জানালেন, যৌন ব্যবসায় নামতে না-চাইলে জুটত কিল-লাথি আর ডান্ডার মার। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রাজ্যের গণ সংগঠন বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের উদ্যোগে উদ্ধার করা গিয়েছে ওই তরুণীকে। সোমবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তার পর থেকেই প্রবল জ্বর। সঙ্গে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ওমানের কালো দিনগুলো।

উল্কা মঙ্গলবার জানান, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওমানের আল বুরাইমিতে। বাংলা, পার্শ্ববর্তী এলাকার কমবেশি ২০০ মহিলা ওমানে আটকে আছেন। দেশের নিরিখে সংখ্যাটা প্রায় ৩০০। আছেন নেপাল, শ্রীলঙ্কার মেয়েরাও। উল্কা বললেন, ‘‘একটা ঘরে ঠেসে ছাগলের মতো রাখা হত মেয়েদের। দেহ ব্যবসায় নামতে না-চাইলেই জুটত মার।’’

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে চলা বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি সমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিরাট চক্র। এজেন্টরা সারা দেশে ছড়িয়ে আছে।’’ উদ্ধার করা হয়েছে শ্রীলঙ্কা, পঞ্জাবের কিছু মহিলাকেও।

ওমানে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দুষ্ট চক্রের দুই সদস্যকে তিনি সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে জানালেন উল্কা। গত ৭ জানুয়ারি এক ব্যক্তি তাঁকে এবং জয়নগরের এক মহিলাকে প্রথমে গুয়াহাটি নিয়ে যান। ১৫ জানুয়ারি তাঁরা উড়ানে মুম্বই হয়ে আল বুরাইমিতে পৌঁছন। উল্কা জানান, জয়নগরের মেয়েটি স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে দিয়ে ওমানে কাজ করানো সম্ভব হয়নি। ওমানে পৌঁছনোর কয়েক দিন পরেই উল্কা বুঝতে পারেন, তিনি ফাঁদে পড়েছেন। মোবাইল থেকে সমিরুলের কাছে কিছু অডিয়ো ও ভিডিয়ো বার্তা পাঠান তিনি। সমিরুল জানান, সিএমও-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে ই-মেল করে সাহায্য চাওয়া হয়। রাজ্যের তরফে ওমানের ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করে ফাঁদে পড়া মেয়েদের খুঁজে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়।

উল্কা বলেন, ‘‘ওরা মোবাইল কেড়ে নিয়ে আলাদা ঘরে আমাকে পেটাত। খেতে দিত না।’’ কখনও শ্রীলঙ্কার মহিলার, কখনও পঞ্জাবি মহিলার মোবাইল থেকে বার্তা পাঠাতে থাকেন সংস্কৃতি মঞ্চের কাছে। ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশকে নিয়ে দূতাবাসের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। বাড়ি ফিরেছেন পঞ্জাবের মহিলাও। ফোনে ওই মহিলা বলেন, ‘‘বিউটি পার্লারে কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে গিয়ে প্রথমে পরিচারিকার কাজ করিয়ে পরে দেহ ব্যবসার কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়। রাজি না-হওয়ায় অত্যাচার চালানো হয়েছে আমার উপরে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Trafficking Sexual Harassment Oman Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE