Advertisement
০১ জুন ২০২৪
Abhishek Banerjee

আমার সংস্থা লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে যা যা হচ্ছে সেগুলো কি র‌্যাগিং নয়? প্রশ্ন তুললেন অভিষেক

সংবাদমাধ্যমের একাংশকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, “এই ১৬টা ফাইল যদি সিবিআই তল্লাশি করে উদ্ধার করত, তবে সংবাদমাধ্যমই চালাত, অভিষেকের সংস্থার অফিস থেকে কলেজের লিস্ট উদ্ধার হয়েছে।”

Abhishek Banerjee said on Leaps and Bounds Controversy on Monday

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ১৭:১৪
Share: Save:

‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থাটিকে ‘আমার সংস্থা’ বলেই উল্লেখ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার অভিষেক বলেন, “আমি যে দিন এসেছি, পরের দিন পাঠিয়ে দিয়েছে ইডিকে তল্লাশি করতে! আমার অফিসে গিয়ে তল্লাশি করেছে। তার সঙ্গে ১৬টা ফাইল একটা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে দিয়ে চলে এসেছে।”

প্রসঙ্গত, অভিষেক আমেরিকা থেকে চোখের চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পরেই ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তল্লাশি চালায়। যে বিষয়টি নিয়ে আগেই মুখ খুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে সোমবারের সভায় অভিষেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উদ্দেশে তোপ দাগলেন। তদন্তকারী সংস্থার পাশাপাশিই সংবাদমাধ্যমের একাংশের উদ্দেশেও তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “এই ১৬টা ফাইল যদি আবার সিবিআই সাত দিন পরে তল্লাশি করে উদ্ধার করত, তবে এই সংবাদমাধ্যমেরাই চালাত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার অফিস থেকে কলেজের লিস্ট উদ্ধার হয়েছে!”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পড়ুয়ার মৃত্যুর পরে র‌্যাগিং নিয়ে রাজ্যের সর্বত্র আলোচনা চলছে। সোমবার র‌্যাগিং প্রসঙ্গও উঠে এসেছে অভিষেকের বক্তব্যে। তবে একটু অন্য ভাবে। ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ নিয়ে সরব হয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশকে নিশানা করে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, “আপনারা তদন্তে বিশ্বাস করেন না! আপনারা ধৈর্য রাখেন না! আপনারা মানুষকে কলুষিত করেন! এটা র‌্যাগিং নয়?”

ঘটনাচক্রে, কয়েক দিন আগেই ইডি ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থায় তল্লাশি নিয়ে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করেছে। তাতে অভিষেককে ওই সংস্থার ‘সিইও’ বলে দাবি করেছে তারা। তার পরেই অভিষেকের সোমবারের মন্তব্য। যেখানে তিনি ওই সংস্থাকে ‘আমার সংস্থা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

সোমবার ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ নিয়ে আবার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘ওদের কম্পিউটারে যা ছিল নিয়ে নিয়েছে। কাউকে না জানিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করেছে। বাইরে থেকে ফাইল ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দিয়েছে।’’ ইডির উদ্দেশে মমতার বক্তব্য, ‘‘তোমরা যদি কম্পিউটারে ওস্তাদ হও, আমরাও ওস্তাদ। ঠিক তথ্যটা বার করে নিয়েছি। আমরা ঠিক বুঝতে পেরেছি, তোমরাই ওই ফাইল ডাউনলোড করেছ। তার পরে থানায় ডায়েরি করা হয়েছে। যিনি ডায়েরি করেছেন, তাঁকেও গ্রেফতার করে নেবে বলেছে। সকলকে গ্রেফতার করতে করতে একদিন জেলটা তোমাদের লোকেই ভরে যাবে!’’

গত সোমবার নিয়োগ মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তিনটি এলাকায় তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। আলিপুরে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ নামে সংস্থার দফতরেও যান ইডি আধিকারিকেরা। ওই সংস্থায় সুজয়কৃষ্ণ একসময় উচ্চপদে কাজ করতেন বলে দাবি ইডির। প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে ওই সংস্থায় তল্লাশি চালানো হয়। ইডি চলে যাওয়ার পর সংস্থার এক কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, ইডি তাঁদের কম্পিউটারে ১৬টি অচেনা মাইক্রোসফ্‌ট এক্সেল ফাইল ডাউনলোড করে গিয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের অফিসে যান লালবাজারের তদন্তকারীরা। দু’টি কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়।

এর পরেই ইডি লালবাজারে লিখিত ভাবে জানায়, তাদের এক আধিকারিক তল্লাশি চালাতে গিয়ে সংস্থার কম্পিউটার থেকে নিজের কন্যার কলেজের হস্টেলের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তা করতে গিয়ে কোনও ভাবে ওই ফাইলগুলি ডাউনলোড হয়ে গিয়ে থাকবে। তবে সংস্থার কর্মীদের উপস্থিতিতেই যা করার করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তাদের ‘অন্য’ কোনও উদ্দেশ্য ছিল না বলেই দাবি করে ইডি। তারা ওই সংস্থাকেও লিখিত ভাবে একই কথা জানায়।

ইডি সূত্রে খবর, সুজয়ের সংস্থা ‘এসডি এন্টারপ্রাইজ়’-এর সঙ্গে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ২০২০-’২১ সালের মধ্যে সুজয়কৃষ্ণের ‘এসডি এন্টারপ্রাইজ়’-এর সঙ্গে ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ৯৫ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের পর লিখিত বিবৃতিতে ইডির তরফে দাবি করা হয়, ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে লেখা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক।

ইডির ওই প্রেস বিবৃতিটি প্রথমে টুইট করে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিষেকের নাম না করে লেখেন, ‘‘আমি এক জনের স্মৃতিকে একটু তাজা করে দিতে চাই। যিনি বার বার বলেছেন, তদন্তকারী সংস্থা যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দিতে পারে, তা হলে তিনি স্বেচ্ছায় ফাঁসির মঞ্চের দিকে হেঁটে যাবেন। বাংলার মানুষ তাঁর এই সমস্ত কথাকে ধর্তব্যের মধ্যে ধরেন না। আপনার ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার দরকার নেই। তার চেয়ে বরং তদন্তকারী সংস্থার অফিসে যান। আশা করি আপনার বিবেককে জাগ্রত করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।’’

পাল্টা নারদ স্ট্রিং অপারেশনে শুভেন্দুর ছবি টুইট করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক লেখেন, ‘‘আশা করি আপনার বিবেক জাগ্রত করার জন্য এই ছবিটি যথেষ্ট। আমি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, আপনি কবে তদন্ত সংস্থার দফতরে যাবেন?’’ এর পর দীর্ঘ টুইট-যুদ্ধ চলে দুই নেতার মধ্যে।

প্রসঙ্গত, এই ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এই চাকরি করতেন সুজয়কৃষ্ণ। সংবাদমাধ্যমে তিনি বার বার বলেছেন, ‘‘আমার সাহেবকে কেউ ছুঁতে পারবে না।’’ সাহেবের নাম জিজ্ঞাসা করায় তিনি জবাব দিয়েছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ গত ২০ অগস্ট চোখের চিকিৎসা করিয়ে শহরে ফেরেন অভিষেক। তিনি ফেরার পরেই ইডির তল্লাশি অভিযান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ছেলেটা পরশু দিন ফিরেছে! হঠাৎ করে চলে গেছে তার চার-পাঁচটা জায়গায়। সকাল ছ’টায় খবর পেলাম বাবুরা বেরিয়েছে।’’ তার পরেই মমতা ইডি তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে ওই তল্লাশি অভিযান নিয়ে কড়া রাজনৈতিক আক্রমণ করেছিলেন। সোমবার তাঁর সঙ্গে সুর মেলালেন অভিষেকও। তবে পাশাপাশিই তিনি সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও একহাত নিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee Leaps and Bounds ED TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE