Advertisement
০১ মে ২০২৪
Sujay Krishna Bhadra

দীর্ঘ টালবাহানার অবসান, মুখবন্ধ খামে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠ-রিপোর্ট পেল ইডি, বিড়ম্বনায় সুজয়কৃষ্ণ?

এর আগে ইডি জানিয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুজয়কৃষ্ণের কথায় ফোন থেকে মুছে দিয়েছিলেন পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৫
Share: Save:

দীর্ঘ টালবাহানার অবসান। অবশেষে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের রিপোর্ট হাতে পেল ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্র মারফত এমনই জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতার কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি থেকে একটি মুখবন্ধ খামে ওই রিপোর্ট তাদের দফতরে এসে পৌঁছেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। তবে ওই রিপোর্টে কী বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে তা জানায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।

ইডির তরফে কিছু জানানো না হলেও অসমর্থিত সূত্রের খবর, ইডির কাছে থাকা সুজয়কৃষ্ণের ‘কল রেকর্ডিং’ এবং পরে সংগ্রহ করা তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা নিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট হাতে পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাটি। ইডি সূত্রে খবর, নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ যে জড়িত ছিলেন, তার অকাট্য তথ্যপ্রমাণ হিসাবে এই কন্ঠস্বরকে এত দিন ব্যবহার করতে পারছিল না তারা। কিন্তু এই বিষয়ে জটিলতা অনেকটাই কেটে গিয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। তার পর থেকে তিনি হাসপাতালেই রয়েছেন। মাঝে একটি বেসরকারি হাসপাতালে হৃদ্‌যন্ত্রের অস্ত্রোপচারও হয় সুজয়কৃষ্ণের। তাঁকে হেফাজতে নিতে চেয়ে বার বার চেষ্টা চালায় ইডি। যদিও সফল হয়নি। এ নিয়ে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের দিকেও আঙুল তোলে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়েও টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। অবশেষে গত ৩ জানুয়ারি আচমকাই এক দিন জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার পর ফের এসএসকেএমে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে।

গত ৩০ মে ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তার পরের দিন তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করে ইডি জানিয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুজয়ের কথায় ফোন থেকে মুছে দিয়েছিলেন পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরা। ইডি সূত্রে জানা যায়, এই বিষয়ে সুজয়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু তাদের কাছে এই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘কল রেকর্ডিং’ আছে বলে ইডি সূত্রে দাবি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই কল রেকর্ডিংয়ে থাকা কথোপকথনের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ‘কাকু’কে দিয়ে বার বার বলানো হয়। রাহুলকে তথ্য মোছার নির্দেশ দেওয়া ব্যক্তিটি সুজয়কৃষ্ণই ছিলেন কি না, এতে তা নিশ্চিত ভাবে বোঝা যাবে বলে ইডি সূত্রে খবর মেলে।

তার আগে বেশ কিছু দিন ধরেই ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চাইছিল ইডি। নিয়োগ মামলার তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টার পরেও ‘কাকু’র স্বরের নমুনা মেলেনি। এমনকি, আদালতের নির্দেশের পরেও সংগ্রহ করা যায়নি নমুনা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুজয়কে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি ছিল, ‘কাকু’কে আড়াল করছে এসএসকেএম। ইচ্ছা করেই তাঁর স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

বার বার এসএসকেএমে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয় ইডিকে। এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, ইএসআই হাসপাতালে ‘কাকু’কে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানো হোক। তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে কি না, তা-ও জোকা ইএসআইয়ের মেডিক্যাল টিম ঠিক করবে বলে জানিয়ে দেয় আদালত। প্রসঙ্গত, নিয়োগ মামলার যে রিপোর্ট ইডি আদালতে জমা দেয়, সেখানে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ এবং তাঁর সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত রিপোর্টও ছিল। ওই সংস্থাতেই কাজ করতেন সুজয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে ইডি। এত দিনে তার রিপোর্ট এল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE