রাজ-ভবন: কোচবিহারের সাবিত্রী লজ। নিজস্ব চিত্র
রাজাদের আমলে তৈরি স্বাধীনতা সংগ্রামী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের স্মৃতি বিজড়িত ‘সাবিত্রী লজ’ লাগোয়া জমিতে অফিস ভবন তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে সমবায় দফতর।
কোচবিহার শহরের টেম্পল স্ট্রিট লাগোয়া এলাকায় প্রাচীন ওই বাড়িটি রয়েছে। কিছুদিন আগে ওই বাড়ির লাগোয়া পরিত্যক্ত জমিতে প্রস্তাবিত ভবন তৈরির ব্যাপারে সমবায় দফতর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। এই ঘটনা জানাজানি হতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষ প্রাচীন বাড়ির উঠোনের জমিতে কী করে অফিস ভবন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তাদের বক্তব্য, ‘‘ইতিহাস বিজড়িত বাড়িগুলি সংস্কার, সংরক্ষণ করে পর্যটক সার্কিটে আনা দরকার। ভবন তৈরি কাম্য নয়।’’
সমবায় দফতরের কোচবিহার রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বেনোজিন হোসেন অবশ্য বলেন, “প্রাচীন ওই ভবনের কোনও ক্ষতির ব্যাপার নেই। ভবনের পাশে থাকা ফাঁকা জমিতে দফতরের স্থায়ী ভবন তৈরির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে কাজ হবে।”
ইতিহাস গবেষকরা জানান, মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের এক ভাই কুমার গজেন্দ্রনারায়ণ (সিনিয়র) ১৮৮৫ সালে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন মহারানি সুনীতি দেবীর বোন সাবিত্রী দেবী। সাবিত্রী দেবীর নামেই বাড়িটির নামকরণ হয়। বিংশ শতকের প্রথম দশকে একটি মামলা সংক্রান্ত কাজে কোচবিহারে এসেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এবং কবি অতুল প্রসাদ সেন। ওই বাড়িতে তাঁরা প্রায় তিন মাস ছিলেন।
অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলায় ধুঁকছে বাড়িটি। এখন জরাজীর্ণ দশা সেটির। ধুঁকতে থাকা বাড়িটি ও চারপাশের চত্বর জঙ্গলে ভরেছে। অনেকের কাছে পরিচিতি হয়েছে ভূতবাংলো নামে।
ভারতবর্ষীয় ব্রাক্ষ্মসমাজের সম্পাদক তপোব্রত ব্রহ্মচারী বলেন, “ওই বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এ ধরণের বাড়িগুলির সঠিক দেখভাল দরকার। অন্য কোথাও জমি নিয়ে অফিস ভবন করা যেতে পারে।”
কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ জ্যোতি মজুমদার বলেন, “কোচবিহার শুধু নয়, বাংলার ইতিহাসেও সাবিত্রী লজের গুরুত্ব রয়েছে। বারবার বলার পরেও সেই বাড়ির ন্যূনতম রক্ষনাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। এবার ওই বাড়ির উঠোনের জমিতে অফিস তৈরির এমন উদ্যোগে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy