Advertisement
১৭ মে ২০২৪
College

পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে ভর্তি কম, উঠছে প্রশ্ন

বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজে অর্থনীতি, দর্শন, সংস্কৃতের মতো বিষয়ের সব আসন পূরণ না-হওয়ায় তার কারণ সন্ধানে বিস্তর বিতর্ক ও আলোচনা হচ্ছে।

বিভিন্ন কলেজের কর্তৃপক্ষ এখন তারই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন পুরোদমে।

বিভিন্ন কলেজের কর্তৃপক্ষ এখন তারই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন পুরোদমে। প্রতীকী ছবি।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২৮
Share: Save:

বিজ্ঞানের মূল ও মৌলিক দু’টি বিষয় হল পদার্থবিদ্যা আর রসায়ন। অথচ চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের বেশ কিছু কলেজে ওই দু’টি বিষয়ের অনার্স পাঠ্যক্রমে পড়ুয়া ভর্তির হার শোচনীয় রকমের কম। কোথাও ওই দুই বিষয়ের অনার্সে ৩৫টি করে আসন থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হয়েছে মাত্র দু’টি করে চারটি আসন। আবার কোথাও ৯০টি আসনের মধ্যে শিক্ষার্থী পাওয়া গিয়েছে মাত্র ১৬টি বা ১৮টিতে। মূল বিজ্ঞান নিয়ে এমন পাঠ-বিমুখতার পিছনে কী কী কারণ ক্রিয়াশীল, বিভিন্ন কলেজের কর্তৃপক্ষ এখন তারই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন পুরোদমে।

বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজে অর্থনীতি, দর্শন, সংস্কৃতের মতো বিষয়ের সব আসন পূরণ না-হওয়ায় তার কারণ সন্ধানে বিস্তর বিতর্ক ও আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এ বার পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন অনার্সের একই হাল দেখে শিক্ষা শিবির বিস্মিত। কেউ কেউ এর কারণ হিসেবে পড়ুয়াদের অন্যান্য রাজ্যে চলে যাওয়ার প্রবণতাকে চিহ্নিত করছেন। আবার সেই প্রবণতা তীব্রতর হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ-দুর্নীতিকে দুষছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, বাংলায় শিল্পের অভাব, তাই ছাত্রসমাজের বড় অংশ বিজ্ঞান পঠনপাঠনে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, অনেক ছাত্রছাত্রী বাংলার বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে চলে যাচ্ছেন। কিছু ছাত্রছাত্রী প্রথমে কলেজে ভর্তি হয়েও পরে অন্য পাঠ্যক্রমে আকৃষ্ট হয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। তিলকের মতে, ভবিষ্যতে আদৌ স্কুলের চাকরি হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহু শিক্ষার্থী। এই অনিশ্চয়তা ব্যাখ্যা করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায় জানান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের মতো বিষয় পড়ে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করতে চান। কিন্তু এ রাজ্যে স্কুলের চাকরি ঘিরে এত ব্যাপক অনিয়ম সামনে আসছে যে, এখানে পড়তে ভরসা পাচ্ছেন না পড়ুয়ারা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তথা রসায়নের অধ্যাপক দেবাশিস দাস মনে করেন, রাজ্যে যথেষ্ট সংখ্যক শিল্প নেই। তাই পদার্থবিদ্যা, রসায়নের মতো ‘বেসিক সায়েন্স’ নিয়ে এখানকার কলেজে পড়তে চাইছেন না অনেকেই। ভিন্‌ রাজ্যে, যেখানে ক্যাম্পাসিং ভাল হয়, সেখানকার কলেজ খুঁজে নিচ্ছেন তাঁরা। দেবাশিস বলেন, ‘‘শিল্প ক্ষেত্রের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বাড়াতেই হবে। না-হলে ছাত্রছাত্রীদের রাজ্যে ধরে রাখা যাবে না। ক্যাম্পাসিংয়ের ব্যবস্থাও করতে হবে।’’

দক্ষিণ কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন অনার্সে ৩৫টি করে আসনের মধ্যে দু’টি করে আসন পূরণ হয়েছে। ওই কলেজের টিচার-ইনচার্জ অনুরাধা ঘোষ বলেন, ‘‘এই দু’টি বিষয়ে এত কম পড়ুয়া কেন, বুঝতে পারছি না। আগে কখনও এমন হয়নি।’’ তিনি জানান, তাঁর কলেজে পদার্থবিদ্যায় পূর্ণ সময়ের পাঁচ জন আর রসায়নের ছ’জন শিক্ষক আছেন। তাঁরা মাত্র দু’জন পড়ুয়াকে পড়াবেন। ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজে পদার্থবিদ্যার ১৪টি আসনের মধ্যে দু’টি এবং রসায়নের ২০টি আসনের মধ্যে দু’টি পূরণ হয়েছে। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজে পদার্থবিদ্যার অনার্সে ৭০টি এবং রসায়নের ৫০টি আসন আছে। কিন্তু সেখানে ওই দু’টি বিষয়ের প্রতিটিতে মাত্র ১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘পদার্থবিদ্যা, রসায়নে কেন এমন হল, সেটা ভাবার বিষয়।’’ মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন দু’টিতেই ৯০টি করে আসন, পূরণ হয়েছে যথাক্রমে ১৬টি এবং ১৮টি। অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা আগে ঘটতে দেখেননি তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার।’’

শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, পড়ুয়াদের ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রমে যোগ দেওয়ার ঝোঁক রয়েছেই। তবু বিভিন্ন কলেজে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার মতো বিষয়ে এত আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে কেন, তার সদুত্তর সন্ধান জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College Admission Physics Chemistry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE