উদ্যোগ: নিজের দোকানে বিশ্বজিৎ করমোদক। নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ টাকায় আলুর চপ। ছ’টাকায় ভেজিটেবল চপ। পাঁচ টাকায় এক প্লেট ঘুগনি। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে রাস্তার পাশে সকাল থেকে সন্ধ্যা ঠেলাগাড়িতে চালু দোকান। নাম ‘চপ শিল্প’। মালিক, বাংলায় এমএ পাশ বিশ্বজিৎ করমোদক।
ব্লক প্রশাসনের চুক্তিভিত্তিক কর্মী বিশ্বজিৎ। বছর তেত্রিশের যুবকের দাবি, ‘‘তেলেভাজার দোকান দিয়েও স্বাবলম্বী হওয়া যায়, কয়েক বছর আগে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজে নেমে বুঝলাম, দিদি (মমতা) ভুল কিছু বলেননি। প্রতিদিন দু’-আড়াই হাজার টাকার বিক্রি হয়। সব বাদ দিয়ে, পাঁচ-ছ’শো টাকা পকেটে থাকে।’’
মানবাজারের মানভূম কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে, ২০১০ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর হন বিশ্বজিৎ। ‘ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন’ (ডিএলএড) কোর্সও করেছেন। ‘টেট’ পরীক্ষা দিলেও নির্বাচিত হননি। কয়েক বছর আগে, বান্দোয়ান ব্লকের ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’ (ভিআরপি) হিসেবে কাজ পান। তার সঙ্গে টিউশন করছিলেন।
লকডাউনের সময়ে অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকেরা কাজ হারানোয়, টিউশনের টাকা বাকি পড়ছিল। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘ভিআরপি-র কাজে মাসে হাজার পাঁচেক টাকা ভাতা মেলে। তা-ও অনিয়মিত। কয়েক মাস আগে বিয়ে করেছি। খরচ সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তা ছিল। তখনই মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মাথায় আসে।’’ এক বন্ধুর বাড়ির সামনে ঠেলাগাড়িতে দোকান চালু করেন তিনি। যখন ভিআরপি-র কাজে যেতে হয়, তখন দোকান সামলাতে এক যুবককে কাজে রেখেছেন। তাঁকে দিনে দেড়শো টাকা দেন।
বিশ্বজিতের দাবি, এমএ পাশ করেও তিনি চপের দোকান দেওয়ায় কেউ কেটেছেন টিপ্পনী। অনেকে উৎসাহও জুগিয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী সঞ্জয় হালদার, এলাকার প্রাক্তন শিক্ষক শক্তিপদ দাসেরা বলেন, ‘‘কোনও কাজই ছোট নয়। বিশ্বজিৎ চপের দোকান করে সেটাই দেখিয়েছেন।’’ পাশেই চায়ের দোকান চালান বিশ্বজিতের বাবা অরুণ করমোদক। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে সৎ পথে, পরিশ্রমে রোজগার করছে। অসুবিধে কিছু নেই।’’
বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যে কোথাও শিল্প নেই। বাংলার শিক্ষিত বেকারদের কপালে চপ-শিল্প ছাড়া, আর কী আছে?’’ মানবাজারের তৃণমূল বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা যা খুশি বলতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান, মন দিয়ে করলে যে কোনও ব্যবসায় সাফল্য আসে। বান্দোয়ানের ওই যুবক সেটাই প্রমাণ করছেন।’’
বান্দোয়ানের বিডিও কাসিফ সাবির বলেন, ‘‘বিশ্বজিৎ কাজের ছেলে। ব্লক অফিসের কাজের অবকাশে দোকান চালান। ওঁর দোকানের চপের স্বাদই আলাদা।’’ অনিয়মিত ভাতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সম্প্রতি ‘ভিআরপি’-রা চার মাসের টাকা এক সঙ্গে পেয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy