Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মোদী-রাজ্যে ফল পেয়েই বাংলায় জল মাপার কাজ শুরু

সত্যি কি বিজেপি বাংলা নিয়ে সিরিয়াস? এমন নানা প্রশ্নের এত দিন উত্তর ছিল— ‘‘দাঁড়ান, গুজরাতটা মিটুক! তার পরেই বুঝবেন!’’

গুজরাত-জয়: খুশির রেশ শহরেও। বিজেপি দফতরের সামনে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

গুজরাত-জয়: খুশির রেশ শহরেও। বিজেপি দফতরের সামনে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৫
Share: Save:

সারদা-নারদ তদন্তের কী হবে? মুকুল রায় কি আরও গুরুত্ব পাবেন? তৃণমূল কি আরও ভাঙবে? ইডি-সিবিআই কি আরও সক্রিয় হবে? পঞ্চায়েতের আগে অমিত শাহ কি আবার আসবেন? সত্যি কি বিজেপি বাংলা নিয়ে সিরিয়াস? এমন নানা প্রশ্নের এত দিন উত্তর ছিল— ‘‘দাঁড়ান, গুজরাতটা মিটুক!
তার পরেই বুঝবেন!’’

আর এই উত্তর দিচ্ছিলেন একই সঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূলের নেতাদের একাংশ। তবে প্রকাশ্যে নয়। কানে-কানে ফিসফিসিয়ে। সেই অপেক্ষার অবসান। গুজরাত এবং হিমাচলপ্রদেশ জিতে নিয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে কলকাতায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি-র অন্দরেও কৌতূহলী আলোচনা— এ বার বোঝা যাবে, কত ধানে কত চাল! এবং বাংলায় এর ফলে কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা কার্যত গুজরাত ভোটের ফল নিয়ে চর্চার চেয়েও বেশি গতি পেয়েছে। যদিও তৃণমূলের অন্দরমহল মনে করছে, ১০০ আসন না-পাওয়াটা মোদী-শাহ জুটির আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাবে। এই সুযোগে দলের মধ্যে মোদী-বিরোধী অক্ষ শক্তিশালী হবে।

তবে এ সব তত্ত্ব উড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘‘তৃণমূল যাই ভাবুক, অপেক্ষা করুন। সব ধীরে ধীরে দেখতে পাবেন! যা পরিস্থিতি, তাতে পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রিসভার বৈঠক জেলখানাতেই বসাতে হবে।’’ বিজেপি নেতার এই বক্তব্য বুঝিয়ে দিচ্ছে তাঁদের এ বার লক্ষ্য দ্রাবিড়-উৎকল-বঙ্গ। তার জন্য সারদা এবং নারদ তদন্তই যে বিজেপি-র হাতিয়ার হতে চলেছে, তা স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: বিকল্প নেতা নয়, নীতি চাই, মত ইয়েচুরির

নারদ-তদন্তে ইডি ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের বয়ান রেকর্ড করেছে। সম্পত্তির হিসেব-নিকেশও করে ফেলেছে। তারা এখন অপেক্ষা করছে সিবিআই নারদ-তদন্তে কী ভাবে চার্জশিট সাজায়, তা দেখার জন্য। সিবিআই অভিযুক্তদের নামে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার মামলা দায়ের করলে সেই সূত্র ধরে ইডিও ঢুকে পড়তে পারে এই মামলায়। এ রকমই আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মধু কোড়ার জেল হয়েছে। গুজরাতের ফলের পর তৃণমূল নেতাদের অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে মধু কোড়ার নাম।

বঙ্গের পাশাপাশি কলিঙ্গ থেকেও কৌশল রচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সঙ্ঘ পরিবারে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের দিন ভুবনেশ্বরে বসছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নীতি নির্ধারক কমিটির বিশেষ বৈঠক। সেখানে তিন দিন আলোচনার পর রাম মন্দির পরিকল্পনা ঘোষণা করবে পরিষদ। বাংলা এবং ওডিশাতেও মন্দির আন্দোলনকে ছড়ানোর জন্য বাড়তি কিছু পরিকল্পনা করবে পরিষদ। দুই রাজ্যের ভোটের কথা ভেবেই যে ওই পরিকল্পনা, তা বিলক্ষণ জানে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুজরাতের ফল আগাম আঁচ করেছিলেন। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফরে বেরিয়ে তিনি দলীয় কর্মীদের বার বার মেরুকরণের রাজনীতির ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘অচেনা লোক দেখলেই থানায় খবর দিন। ওরা ঘরে আগুন লাগাতে আসছে। বন্ধু সেজে ঢুকে সর্বনাশ করে দিয়ে চলে যাবে।’’

সর্বনাশের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা এ রাজ্যে বে়ড়ে চলা গোষ্ঠীসংঘর্ষের ঘটনাগুলিই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলা নিয়ে নতুন রাজ্যের দাবি। শোনা যাচ্ছে, এই দাবি তোলার নেপথ্যে রয়েছে বিজেপি-র জেলা স্তরের স্বল্প পরিচিত নেতারা। গোয়েন্দাদের দাবি, ভোট যত এগোবে, উত্তরবঙ্গের দাবি তত জোরালো হবে। কারণ, এ রাজ্যে বিজেপি-র পা উত্তরে প্রথম পড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। কৌশলী অমিত শাহ সেই কারণেই নকশালবাড়ি দিয়ে তাঁর বঙ্গ সফর শুরু করেছিলেন এপ্রিল মাসে। আর কিছু দিনের মধ্যেই তিনি আবার আসবেন পশ্চিমবঙ্গে। গুজরাতের ফলের আগুনে বাংলায় রুটি সেঁকার কাজ শুরু হবে তখনই। তবে এত অপেক্ষা করতে নারাজ দিলীপ ঘোষরা। সোমবারই আবির মেখে লাড্ডু খেয়ে বাংলা দখলের দামামা বাজিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE